Lok Sabha Election 2024

নিজের ছেলে-মেয়েকে কি রাজনীতিতে দেখতে চান? পিতা হিসেবে তাঁর অভিমত জানিয়ে দিলেন অভিষেক

রাজনৈতিক নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে, আমি চাই না ওদের সঙ্গে এটা হোক। আমি আমারটা লড়ে নেব। কিন্তু সবাই চায়, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৫
Abhishek Banerjee said as a father he does not want his son and daughter to join politics

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বলেন, ‘‘অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) দু’বছর বয়স থেকে রাজনীতি করে। আমায় যখন সিপিএম মাথায় মেরেছিল, তখন বাড়িতে একা একা ঝান্ডা হাতে মিছিল করত, দিদিকে মারলে কেন সিপিএম জবাব দাও।’’

Advertisement

সেই অভিষেক নিজে এখন রাজনীতিক। তাঁর এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। কন্যা আজানিয়ার বয়স ১০ বছর। ছেলে আয়াংশ সবে ৩ বছরের। তারা যদি বড় হয়ে রাজনীতিতে যোগ দিতে চায়, পিতা হিসাবে অভিষেক কি চান, তাঁর সন্তানেরা রাজনীতিতে আসুক? শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমি চাই না ওরা (সন্তানেরা) রাজনীতিতে আসুক। তবে এলে বাধা দেব না।’’

কেন চান না তাঁর সন্তানেরা রাজনীতিতে আসুক? অভিষেকের বক্তব্য, বিজেপি জমানায় রাজনীতি বিষিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি, বিচার ব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও এই ব্যাপারে কাঠগড়ায় তুলেছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। তাঁর কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে, আমি চাই না ওদের সঙ্গে সেটা হোক। আমি আমারটা লড়ে নেব। কিন্তু সবাই চায় ওই বাংলা কথাটার মতো, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।’’

অভিষেক ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি করেন। পাশাপাশিই তিনি চান, রাজনীতি করতে হলে সে ভাবেই করতে হবে। দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই রকম রাজনীতিকে ধ্যানজ্ঞান করা লোকজনকেই বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছেন অভিষেক। অভিষেক এ ব্যাপারে এতটাই পেশাদার এবং কঠোর যে, স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে এক বাড়িতেও থাকেন না। সপ্তাহ শেষে হয়তো এক বার দেখা হয় অথবা ভিডিয়ো কলে কথা হয়। সেই ধাঁচেই দলকেও পরিচালনা করতে চান তিনি। অনেকের মতে, হয়তো সে কারণেই ‘পুরনোপন্থী’দের সঙ্গে তাঁর কিছুটা সংঘাত তৈরি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে অভিষেক জানিয়েছেন, তাঁর রাজনীতিতে আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। উচ্চশিক্ষা, এমবিএ ডিগ্রির পরে তিনি সামান্য কিছুদিন চাকরিও করেছিলেন। তার পরে তৃণমূলের সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। কারণ, চোখের সামনে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেছিলেন। তাঁর আন্দোলন দেখেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে তাঁর প্রথম ভোটে দাঁড়ানো এবং সাংসদ হওয়ার নেপথ্যে ছিল দলনেত্রী মমতারই নির্দেশ। তাঁর কথায়, ‘‘নেত্রীই আমায় বলেছিলেন ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়াতে।’’ পাশাপাশিই তিনি স্মরণ করিয়ে দিতে চান, তিনি ২০১৪ সালে কারও টিকিট ‘কেড়ে’ ভোটে দাঁড়াননি। কারণ, ২০০৯ সালে ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হওয়া সোমেন মিত্র ২০১৪ সালের ভোটের আগেই কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছিলেন। ফলে কাউকে সরিয়ে বা কারও টিকিট কেড়ে অভিষেক ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়াননি। তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন আপনারা ডায়মন্ড হারবারকে তৃণমূলের গড় বলেন। কিন্তু প্রথম যখন ওখানে গিয়েছিলাম, তখন মানুষের নানা ধরনের অভিযোগ ছিল।’’

‘ব্যক্তি’ অভিষেক এ-ও বলেছেন যে, রাজনীতিক হিসাবে যাঁদের কাছ থেকে কিছু শিখতে চাইবেন, তাঁদের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় মহাত্মা গান্ধী। তৃতীয় লালকৃষ্ণ আডবাণী। চতুর্থ নরেন্দ্র মোদী। কেন মোদী? অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবনযাপনের জন্য।’’ আর আডবাণী? প্রশাসনের চেয়ে সংগঠনে বেশি স্বচ্ছন্দ অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘আডবাণী সোমনাথ থেকে যে রথযাত্রা করেছিলেন, তার মধ্যে দূরদর্শী সাংগঠনিক ভাবনা ছিল।’’

পথ দুর্ঘটনার পরে চোখে আঘাত পেয়েছিলেন অভিষেক। সেই আঘাতের জায়গায় এখনও পর্যন্ত সাত বার অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। বিদেশেও চিকিৎসা করাতে যেতে হয় তাঁকে। কোমরের একটি ব্যথার জন্য প্রতি মাসে ইঞ্জেকশনও নিতে হয় তাঁকে। তা সত্ত্বেও সেই ব্যথা নিয়ে কলকাতা পুলিশের ম্যারাথনে ১০ কিলোমিটার দৌড়েছিলেন তিনি। তবে ভিড়ের জন্য সাধারণত যিনি ৫৪ মিনিটে ১০ কিলোমিটার দৌড়োন, তাঁর সেদিন লেগেছিল প্রায় ৭০ মিনিট। সেটা নিয়ে তাঁর মনে একটা খচখচানি রয়েছে। কারণ, তিনি মনে করেন, মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে।

আরও পড়ুন
Advertisement