সংগৃহীত চিত্র।
গরমের ছুটি হোক বা পুজোর ছুটি, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এ বার করাতে হবে ক্লাস। তবে স্কুলে গিয়ে নয়, ক্লাস হবে অনলাইনে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে দেওয়া বার্ষিক কর্মসূচি তালিকায় এমনই উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের সমস্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক কর্মসূচির সবিস্তার তালিকা পাঠানো হয়েছে। আর তাতে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে ‘টিচিং লার্নিং-এর’ উপর। সেই সূত্রেই ছুটি চলাকালীন অনলাইন ক্লাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। স্কুলগুলি চাইলে এই ক্লাস করাতে পারে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে মাধ্যমিকের তুলনায় বিষয় সংখ্যা অনেক বেশি। সেমেস্টার পদ্ধতিতে প্রথম পরীক্ষা হবে সেপ্টেম্বর মাসে। সময়ের মধ্যে পাঠ্যক্রম শেষ না হলে ছাত্রছাত্রীরা কী ভাবে শিখবে? পরীক্ষাই বা দেবে কী করে? তাই ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে সুবিধা মতো অনলাইন ক্লাস নেওয়ার কথা বলা হয়েছে স্কুলগুলিকে।”
এ বছর থেকে চালু হচ্ছে সেমেস্টার পদ্ধতি। তার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকটি স্কুলকে।
প্রত্যেক সেমেস্টারের নির্দিষ্ট ‘কন্টাক্ট আওয়ার’ বা সক্রিয় পঠনপাঠনের সময় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা সংসদের তরফে। ১০০ ঘণ্টা প্রথম সেমেস্টারের জন্য, দ্বিতীয় সেমেস্টারের জন্য ৮০ ঘণ্টা। অর্থাৎ প্রত্যেক বিষয় ভিত্তিক ১৮০ ঘণ্টা করে ‘কন্টাক্ট আওয়ার’ ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০ ঘণ্টা ‘কন্টাক্ট আওয়ার’ ধরা হয়েছে হোম অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল এবং রেমেডিয়াল ক্লাসের ক্ষেত্রে।
দীর্ঘ গরমের ছুটি বা পুজোর টানা ছুটি যাতে সিলেবাস শেষের পথে বাধা না হয়ে ওঠে, তাই এই ধরনের সিদ্ধান্ত। তবে শিক্ষা সংসদের এক আধিকারিক জানান, স্কুলগুলির জন্য এই নিয়ম বাধ্যতামূলক নয়। পড়ুয়াদের স্বার্থে শিক্ষকেরা চাইলে ক্লাস করাতে পারেন অনলাইনে। লক্ষ্মী পুজো থেকে কালীপুজোর পর্যন্ত ছুটিতে যাতে অনলাইনে এই ক্লাস করানো হয়, স্কুলগুলির কাছে সেই আবেদনই জানানো হবে শিক্ষা সংসদের তরফে। এই সময়ে প্রায় ১২-১৩ দিনের একটি টানা ছুটি থাকে।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “সেমেস্টার পদ্ধতিতে সময়ের মধ্যে ক্লাস শেষ করতে গেলে ছাত্র-স্বার্থে শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস করাতে হবে। তাই শিক্ষা সংসদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
ইতিমধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু টানা গরমের ছুটি ও ভোটের কারণে সেই সময়ে ক্লাস শুরু করতে পারবে না স্কুলগুলি। তাই সময় নষ্ট হওয়া আটকাতে ওই সময়ে স্কুল যদি অনলাইনে ক্লাস করায়, তা হলে পড়ুয়াদের অনেকটাই সুবিধা হবে বলে জানাচ্ছে শিক্ষা সংসদ।
এ প্রসঙ্গে কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন “বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু স্কুল কোভিড অতিমারি পরবর্তীকালে এমনিতেই ছুটির মধ্যে অনলাইন ক্লাস করিয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণ ভাবে সব স্কুলের ক্ষেত্রে এর ব্যবস্থা করা বা বাস্তবায়ন ঘটানো অত্যন্ত কঠিন।”
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সূচি অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ থেকে একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টার শুরু হচ্ছে। মার্চের শুরুতে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার পাশাপাশি, একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা রয়েছে। অনলাইনে ক্লাস না নিলে পাঠ্যক্রম শেষ করা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা।
এ নিয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তাদের নির্দেশিকায় বার্ষিক কার্য্য পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস গরমের ছুটিতে ও পূজোর ছুটিতে নিতে পারেন। আগামী বছর দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসও গরমের ছুটিতে অনলাইনে নিতে পারে। কোথাও বলা হয়নি, যে এটা বাধ্যতামূলক। সব কিছু যখন স্বাভাবিক চলছে, তখন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ আগ বাড়িয়ে কেন এটা বলতে গেল, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। কেন্দ্রের সব কিছু অনলাইন করার পরিকল্পনাকে রাজ্য সরকার ঘুর পথে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে না তো?”