UGC PhD Excellence Citation

গবেষণায় ‘পিএইচডি এক্সেলেন্স’ পুরস্কারের ঘোষণা ইউজিসির, মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষামহলে

আগামী বছর থেকেই ‘পিএইচডি এক্সেলেন্স সাইটেশন’ নামক ইউজিসি-র এই নয়া উদ্যোগ চালু হতে চলেছে।

Advertisement
সুচেতনা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৫
UGC

ইউজিসি। সংগৃহীত ছবি।

গত কয়েক বছরে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নয়া পদক্ষেপ করল। সম্প্রতি তাঁদের তরফে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক গবেষণার জন্য তরুণ প্রজন্মের গবেষকদের পুরস্কৃত করা হবে। সম্মানিত করা হবে উৎকর্ষতার পুরস্কারে।

Advertisement

আগামী বছর থেকেই ‘পিএইচডি এক্সেলেন্স সাইটেশন’ নামক ইউজিসি-র এই নয়া উদ্যোগটি চালু হতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কেই সেরা গবেষক বেছে নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন। এর জন্য বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, সমাজবিজ্ঞান, ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস বা আঞ্চলিক ভাষা, বাণিজ্য এবং ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ‘থিসিস’ বা গবেষণা প্রবন্ধ খতিয়ে দেখা হবে। রাজ্য, কেন্দ্র, বেসরকারি এবং ‘ডিমড’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যে গবেষকেরা ইতিমধ্যেই সফল ভাবে তাঁদের ‘থিসিস’ জমা এবং ‘ডিফেন্ড’ করেছেন, শুধু মাত্র তাঁরাই এই পুরস্কারের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদনগ্রহণ পর্ব শুরু হবে পরের বছর ১ জানুয়ারি থেকে। চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

গবেষণার প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ বাড়াতে ইউজিসি-র এই নয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র কলেজের জার্নালিজ়ম এবং মাস কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেন, “গবেষকদের উৎসাহিত করার জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি অভিনব উদ্যোগ। তবে প্রতিটি শাখার ক্ষেত্রে কিসের ভিত্তিতে ‘থিসিস’-এর গুণমান বিচার করে শ্রেষ্ঠত্বের এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে, তা নির্দেশিকায় স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি। এর ফলে একটা আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে এটি কোনও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হবে কি না বা কোনও পক্ষপাতিত্বের জায়গা সৃষ্টি করবে কি না।” একই মত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন (জুটা)-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের। তাঁর কথায়, “কোন কোন মাপকাঠির ভিত্তিতে বিভিন্ন শাখার সেরা গবেষণাপ্রবন্ধ বাছাই করা হবে, তা উল্লেখ করা জরুরি। নইলে এনআইআরএফ র‍্যাঙ্কিং বা ‘ন্যাক’-এর র‍্যাঙ্কিংগুলির বিতর্ক সৃষ্টি হবে।”

ইউজিসি-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উৎকর্ষতার এই পুরস্কারের জন্য দু’টি স্তরে বাছাই পর্ব সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্ক্রিনিং কমিটি গঠন করে মোট পাঁচটি শাখার বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য গবেষকদের বাছাই করবে। এ ক্ষেত্রে ইউজিসি-র স্থির করা কিছু মাপক ছাড়াও নিজেদের পছন্দ মতো মানদন্ড স্থির করতে পারবে। পরবর্তী ধাপে ইউজিসি পাঁচটি শাখার জন্য পাঁচটি আলাদা সিলেকশন কমিটি গঠন করবে। এর পর প্রতিটি শাখার দু’জন গবেষককে উৎকর্ষতার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তাঁদের তরফে বাছাই করা গবেষকদের সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে ১ অগস্টের মধ্যে। এর পর ৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শিক্ষক দিবসের দিন সেরাদের হাতে উৎকর্ষতার এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

বিগত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচডিতে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৭৭,৭৯৮। যা ২০১৭-১৮ তে বেড়ে হয়েছে ১,৬১, ৪১২। কিন্তু সেই অনুপাতে গবেষকদের সাম্মানিক বা ফেলোশিপের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। উল্টে বন্ধ করা হয়েছে একাধিক গ্রান্ট বা ফেলোশিপ। যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেছেন, “এর মাধ্যমে গবেষকদের মূল সমস্যাগুলির কোনও সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে না কমিশন। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর উন্নয়ন অথবা তাঁদের সাম্মানিক প্রদান করার বিষয়টির দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত। নয়া শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে শিক্ষাখাতে যে ৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিফলনও সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। শুধু দেখানোর জন্য একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন না করে, সার্বিক ভাবে গবেষণাক্ষেত্রে পড়ুয়াদের উৎসাহিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ করা উচিত কমিশনের।”

আরও পড়ুন
Advertisement