Animation Courses After 12th

আঁকতে ভালোবাসেন? কার্টুন চরিত্রদের পছন্দ? তাহলে এই পেশা আপনার জন্য

এককালের কার্টুনিস্টদের কাজ এখন অ্যানিমেটর পেশায় বদলে গিয়েছে। তবে আঁকার হাত ভাল থাকাটা বাড়তি সুযোগ এনে দেয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৩ ১৭:৪৯
drawing cartoon.

ছবি যখন হাজার শব্দের ‘প্রতীক’। প্রতীকী ছবি।

ছোটবেলায় পৌরাণিক চরিত্রদের জীবন্ত হতে দেখেছেন অ্যানিমেশন তথা কার্টুনের দুনিয়ায়। সেই দুনিয়ায় ছিল হনুমান, রাম-সীতা, পাণ্ডব-কৌরবের যুদ্ধ। পাশাপাশি বিদেশ থেকে এদেশে আমদানি হয়েছিল ‘টম অ্যান্ড জেরি’, ‘বব দ্য বিল্ডার’, ‘পিঙ্ক প্যান্থার’-র মত মজাদার অ্যানিমেশন কমিকস। যত টেলিভিশনের চ্যানেল বেড়েছে, যত সিনেমার ভাষা উন্নত হয়েছে, ততই বেড়েছে এই অ্যানিমেশন চরিত্র। বর্তমানে অ্যানিমেশনেই থেমে নেই বিনোদনের জগত। ভিস্যুয়াল স্পেশাল এফেক্টসের সাহায্য ভিন গ্রহের কাল্পনিক প্রাণীদের ‘অবতার’, ‘লোন রেঞ্জার’র মত সিনেমাতে যেমন দেখা গিয়েছে, তেমনই ‘নন্টে ফন্টে’, ‘হাঁদা ভোদা’, ‘বাটুল দ্য গ্রেট’, জাপানের ‘মাঙ্গা’ কমিকসের অ্যানিমে সিরিজ এবং মার্ভেল-ডিসি কমিকসের ‘স্পাইডারম্যান’, ‘আয়রনম্যান’ এবং ‘সুপারম্যান’-সহ আরও বহু জনপ্রিয় চরিত্র বইয়ের পাতা থেকে বড় পর্দায় নতুন রূপে ধরা দিয়েছে। হাতে আঁকা কার্টুন সংবাদপত্র এবং সাপ্তাহিক পত্রিকার থেকে ডিজিটাল পর্দায় জায়গা করে নিয়েছে। ছোট কাগজ থেকে কম্পিউটার স্ক্রিনে চরিত্রের রূপান্তরের ক্ষেত্রেও এসেছে বড় সড় প্রযুক্তিগত রদবদল।

Advertisement

আর এই রদবদলের সাক্ষী হতে চান শ্রেষ্ঠা অধিকারী। তিনি চন্দননগর কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষা মন্দিরের ছাত্রী, এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অষ্টম স্থানে ৪৮৯ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পেশার পরিকল্পনায় রয়েছে অধ্যাপিকা এবং কার্টুনিস্ট। কারণ ছবি আঁকতে ভালোবাসেন শ্রেষ্ঠা৷ এবার তাঁকে কি করতে হবে এই পেশায় আসতে হলে? ছবি আঁকতে ভালোবাসলেই কার্টুনিস্ট হওয়া যাবে? উত্তরটা কিন্তু একটা বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। ছবি আঁকতে পারার দক্ষতার পাশাপাশি, প্রয়োজন স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। কারণ ওই ডিগ্রি পরবর্তীকালে পেশা প্রবেশের পথ সুগম করে তুলতে পারে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের।

কোন কোন ডিগ্রি থাকা ভাল কার্টুনিস্ট হতে হলে?

উচ্চ মাধ্যমিকের পর গেমিং অ্যান্ড অ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন বিষয়ে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স তথা বিএসসি ডিগ্রি, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স অ্যান্ড ওয়েব ডিজ়াইনে ব্যাচেলর অফ ফাইন আর্টস, ডিজিটাল ফিল্মমেকিং অ্যান্ড অ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন অ্যান্ড গ্রাফিক ডিজ়াইনে ব্যাচেলর অফ আর্টসের ডিগ্রি, অ্যানিমেশনে ব্যাচেলর অফ ডিজাইনের ডিগ্রি থাকলে পেশা প্রবেশের ক্ষেত্রে সুবিধে পাবেন পড়ুয়ারা। স্নাতকোত্তর স্তরেও বেশ কিছু ডিগ্রি রয়েছে, যেগুলো থাকলে প্রযুক্তিগত তথ্যে সমৃদ্ধ হতে পারবেন ভবিষ্যতের কার্টুনিস্টরা। যেমন, গেমিং অ্যান্ড অ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন অ্যান্ড ভিএফএক্স এবং অ্যানিমেশনে মাস্টারস অফ সায়েন্স, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স অ্যান্ড ওয়েব ডিজাইনে মাস্টারস অফ ফাইন আর্টস, ডিজিটাল ফিল্মমেকিং অ্যান্ড অ্যানিমেশন, অ্যানিমেশন অ্যান্ড গ্রাফিক ডিজাইনে মাস্টার অফ আর্টস, অ্যানিমেশনে মাস্টার অফ ডিজাইনের ডিগ্রি।

ডিগ্রি না থাকলে কি কার্টুনিস্ট পদে কাজ সম্ভব নয়?

ডিগ্রি কোর্স ছাড়াও কম সময়ের জন্য ডিপ্লোমা কোর্স করে নিতে পারবেন পড়ুয়ারা। ৬ মাস থেকে ২ বছরের সময়সীমার কোর্স করতে পারবেন আগ্রহীরা। তবে কিছু কিছু ডিপ্লোমা কোর্সের ক্ষেত্রে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ২ডি অ্যান্ড ৩ডি অ্যানিমেশন, স্ক্রিন অ্যান্ড মিডিয়া অ্যানিমেশন, কার্টুনিং অ্যান্ড অ্যানিমেশনের ডিপ্লোমা করার পথ খোলা রয়েছে পড়ুয়াদের কাছে। এই ধরণের কোর্স সাধারণত পেশায় প্রবেশের সুযোগটা বাড়িয়ে দেয়।

কোন কোন সফটওয়্যারের কাজ জানা আবশ্যক?

প্রযুক্তিগত ভাবে কার্টুনিস্টদের কাজ করার পদ্ধতি আধুনিকতম হয়ে উঠেছে। এককালের কাগজ কলম থেকে এখন ডিজিটাল মাধ্যমে তৈরি করতে হয় কার্টুন। সেক্ষেত্রে যে ধরণের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেই বিষয়ে অতি অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে আগ্রহীদের। ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, আফটারএফেক্টস, ইনডিজাইন, প্রোক্রিয়েট - এই কয়েকটি সফটওয়্যার সাধারণত পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে আঁকার অভ্যাসটা রাখতে হবে তাঁদের।

কাজের সুযোগ কেমন?

পেশা প্রবেশের ক্ষেত্রে শুরুতেই বিরাট অঙ্কের মাইনের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা একটু কম রয়েছে কার্টুনিস্টদের। শুধুমাত্র হাতে আঁকা ছবি ছাপাতে চাইলে সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থার উপর নির্ভর করতে হবে আগ্রহী পড়ুয়াদের। তবে বিনোদন জগতেই আবার কার্টুনিস্টদের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে শেষ কয়েকবছরে। সিনেমা এবং টেলিভিশন প্রযোজনা সংস্থা, বিজ্ঞাপন সংস্থা, চারুকলা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সাধারণত শিক্ষানবিশ হিসেবে নবীন কার্টুনিস্টরা পেশায় প্রবেশ করতে পারেন। এরপর নিজের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার সাহায্যে ধাপে ধাপে নতুন নতুন চরিত্র তৈরি করে ফেলতে পারলেই বাজিমাত।

বর্তমানে বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট রাসীপুরম কৃষ্ণস্বামী লক্ষ্মণের আঁকা ছবির ভাবনাকে অনুসরণ করেই ডিজিটাল মাধ্যমের উপযোগী কার্টুন তৈরি করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি অ্যানিমেশনের প্রতি আগ্রহ থাকলে ধৈর্য্য এবং অধ্যবসায় আপনাকে পৌঁছে দেবে কল্পনার দুয়ারে। যে দরজার ওপারে রয়েছে কমিকস জগতের অচেনা অজানা চরিত্র, যাঁরা আপনার ডিজিটাল পেনের আঁচড়ের ছোঁয়া জীবন্ত হওয়ার অপেক্ষা করছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন