প্রতীকী চিত্র।
আর কিছু ক্ষণের অপেক্ষা। এর পরই চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম পত্রের পরীক্ষা শুরু হবে। এই পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মনে একটা চোরা ভয় কাজ করতে থাকে। সেই ভয় কাটাতে হলে শুধুমাত্র ভাল প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি, সময়কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। নতুন পরিবেশে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতাকে স্মরণীয় করে তুলতে এবং পরীক্ষায় নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে কোন কোন কাজগুলি করে নিতে হবে, সেই সম্পর্কে রইল বিশেষ পরামর্শ।
আমিই সেরা! ভাল ফলাফলের মূলমন্ত্র:
আমিই সবথেকে ভাল। এই ভাবনাটা রেখেই পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। যতটুকু প্রস্তুতি হয়েছে, সেটাকেই হাতিয়ার করে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। সব সময় ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে। কোনও ভাবেই মনোবল হারালে চলবে না। মনে রাখতে হবে, এই ধরনের পরীক্ষায় ভাল ফলাফল শুধুমাত্র ভাল প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাতের লেখা, নিখুঁত মার্জিন টানা খাতা, সঠিক এবং যথাযথ উত্তরই এক জন শিক্ষার্থীর ভাল ফলাফল নির্ধারণ করে।
পর্যাপ্ত ঘুম এবং সঠিক খাবার:
পরীক্ষার আগের দিন বা পরীক্ষা চলাকালীন অভ্যাস না থাকলে রাত জেগে পড়াশোনা করার কোনও প্রয়োজন নেই। এতে মানসিক দুর্বলতা বাড়বে বই কমবে না। তেমন হলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলিতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে, যাই হোক না কেন, ঘুম সম্পূর্ণ করতে হবে। কম ঘুমালে চলবে না। ঘুমের পাশাপাশি, সঠিক খাবার খাওয়াটাও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মশালাদার খাবার খাওয়া একেবারে যাবে না, ফাস্ট ফুড নৈব নৈব চ। পরীক্ষার কয়েকটা দিন হালকা খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। কোনও ভাবে শরীর কিংবা মনের উপর চাপ দেওয়া যাবে না। এর প্রভাব সরাসরি পরীক্ষার খাতায় গিয়ে পড়তে পারে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে হবে:
চলতি বছরের পরীক্ষার সময়ের ক্ষেত্রে নিয়মের বদল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের হাতে বেশি সময় নিয়ে বেরোতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের আগের দিন রাতেই পরীক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এই বিষয়ে অভিভাবকদের সাহায্যও নিতে পারে পরীক্ষার্থীরা। কারণ পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে থেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। তাই সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে গিয়ে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি যাতে হতে না হয়, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তেমন হলে কর্তব্যরত সিভিক পুলিশের সাহায্যও নিতে পারে পরীক্ষার্থীরা।
টেস্ট পেপারের মডেল প্রশ্নগুলি দেখে নেওয়া:
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের টেস্ট পেপারগুলিতে মডেল প্রশ্নপত্র দেওয়া থাকে। পরীক্ষার আগে সেই প্রশ্নপত্রগুলিতে চোখ বুলিয়ে নিলে আসন্ন প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে পরীক্ষার্থীদের ধারণা স্পষ্ট হবে। এতে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
পরীক্ষা দিতে বসার আগে তাড়াহুড়ো নয়:
পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে নিজের সিট নম্বর খুঁজে সিটে বসে পড়লেই হবে না। হাতে সময় নিয়ে তার আগে দেখে নিতে হবে, সেই সিটে পর্যাপ্ত আলো মিলছে কী না, বসার বেঞ্চটি ঠিকঠাক রয়েছে কী না। তেমন কোনও সমস্যা হলে দ্রুত কর্মরত শিক্ষক বা পরিদর্শককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানাতে হবে। এর পর প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পরের ১৫ মিনিটে ভাল ভাবে সমস্ত প্রশ্নগুলি পড়ে নিতে হবে, কোন প্রশ্নের জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তার একটা হিসাব করে নিতে হবে। পাশাপাশি, দেখে নিতে হবে, কোনও প্রশ্ন অসম্পূর্ণ থাকলে, সেই বিষয়টিও কর্মরত শিক্ষক বা পরিদর্শককে দ্রুত জানাতে হবে।
প্রশ্নপত্র বুঝে উত্তর লিখতে হবে:
১৫ মিনিট প্রশ্নপত্র পড়ার সময়ই উত্তর লেখার খসড়াটা মাথায় সাজিয়ে নিতে হবে। ছোট প্রশ্নের ক্ষেত্রে কতটা লিখতে হবে, কিংবা বড় প্রশ্নের ক্ষেত্রে কতটা সময় দিতে হবে— সেই বিষয়টি বুঝে নিতে পারলেই পরীক্ষার সময় উত্তর লেখা সহজ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্যবইয়ের শেষ পাতায় প্রতিটি অধ্যায় থেকে কী ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে, সেই সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকে। পরীক্ষার আগেই সেই তথ্যগুলিতে চোখ বুলিয়ে নিলে প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর উত্তর লিখতে কোনও সমস্যা থাকবে না।
উত্তরপত্রও খুঁটিয়ে দেখতে হবে:
উত্তরপত্র হাতে পাওয়ার পর দেখে নিতে হবে, কোনও পাতা ছেঁড়া রয়েছে কী না কিংবা কোনও পাতায় নম্বর সম্পূর্ণ ভাবে ছাপা নেই কী না। কারণ পরীক্ষা চলাকালীন এই ধরনের সমস্যা চোখে পড়লে তখন উত্তরপত্র পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনেকটা সময় ব্যয় হতে পারে। সেই পরিস্থিতি এড়াতে শুরুতে লেখার আগেই ভাল করে সব ক’টি পাতা দেখে নিতে হবে। কোনও সমস্যা চোখে পড়লে কর্মরত শিক্ষক বা পরিদর্শককে জানাতে হবে।
ভাল খাতাই ভাল নম্বর এনে দেবে:
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাতাই ভাল নম্বর এনে দেবে। যতটা সম্ভব প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করে উত্তর লেখার চেষ্টা করতে হবে। ছোট ছোট মার্জিন দিয়ে খাতাকে সাজাতে হবে। তবে গণিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে মার্জিনের বদলে উত্তরপত্র ভাঁজ করে লেখাই ভাল। এতে সমীকরণ কিংবা সম্পাদ্য-র মত প্রশ্নের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন উত্তর লেখা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও নম্বরের ভিত্তিতে উত্তর লিখতে হবে। সত্য মিথ্যার ক্ষেত্রে সঠিক বিকল্পটি বেছে নিয়ে শুধুমাত্র উত্তরটিই লিখতে হবে, মাল্টিপ্ল চয়েস কোয়েশ্চন (এমসিকিউ)-এর ক্ষেত্রেও একই ভাবে যথাযথ উত্তর লিখতে হবে। অতিরিক্ত বাক্য বা শব্দ লিখে সময় ব্যয় করা চলবে না। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ শব্দের তলায় দাগ দিয়ে উত্তরগুলি চিহ্নিত করতে হবে। কোনও লেখা ভুল হলে একটা স্ট্রোকেই তা কেটে নতুন করে লিখতে হবে। খাতা কোনও ভাবে অপরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না।
সঠিক পেন-পেন্সিল নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ:
পরীক্ষার খাতায় দামি পেন দিয়ে লেখার ইচ্ছে অনেক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থাকে। কিন্তু সেই দামি পেন থেকে যদি দ্রুত না লেখা যায়, বা লিখতে গিয়ে আঙুলের উপর বেশি চাপ পড়ে, তাতে পরীক্ষা সঠিক সময়ে শেষ করতে বেগ পেতে হতে পারে। তাই মসৃণ এবং সহজ ভাবে লেখা যায়, এমন একই রকম অন্তত পাঁচ-ছ’টি কালো এবং নীল কালির পেন সঙ্গে রাখতে হবে। অন্য কোনও কালির পেন ব্যবহার করা যাবে না। একটি পেনের উপর নির্ভর করে থাকলে কিন্তু চলবে না। পেনের পাশাপাশি, পেন্সিলের ক্ষেত্রেও একই বিষয় মাথায় রাখতে হবে। পেন্সিল যেন পরীক্ষার হলে তৈরি করতে না হয়।