সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।
দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটাতে বিশেষ উদ্যোগী কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। এই মর্মে বিভিন্ন সময় সর্বভারতীয় স্তরে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি চন্দ্রযান ৩-এর উৎক্ষেপন এবং তার সফল অবতরণ সম্পর্কিত বিষয়ে একটি বিশেষ ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এমনই আরও একটি কর্মসূচি ‘বিদ্যার্থী বিজ্ঞান মন্থন’, যা প্রতি বছর স্কুল পড়ুয়াদের দেশের বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে পরিচয় করাতে সাহায্য করে থাকে।
২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিএআরটি) এবং কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের (এনসিএসএম) সহযোগিতায় একটি সর্বভারতীয় বিজ্ঞানমঞ্চের তরফে এই বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে অনলাইনে এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন স্কুলের পড়ুয়ারা।
সম্প্রতি এই পরীক্ষার দিন ক্ষণ সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি এনসিএসএমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্কুল পড়ুয়াদের মেধার মূল্যায়ণ করতে জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে পরীক্ষাও নেওয়া হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং নবম থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের দু’টি বিভাগে আলাদা করে পরীক্ষা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। পড়াশোনার জন্য বিশেষ স্টাডি মেটেরিয়ালও দেওয়া হবে।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বভারতীয় স্তরে বিজ্ঞান বিষয়ে সেরা পড়ুয়াদের বাছাই করে তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চনের মাধ্যমে ১০০ নম্বরের পরীক্ষাটি ৯০ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হবে। আয়োজক সংস্থা সূত্রে খবর, পড়ুয়াদের সুবিধার্থে পরীক্ষাটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এনসিএআরটি-র অনুমোদিত নির্দেশিকা মেনেই তৈরি করা হয়েছে।
এনসিএসএমের ন্যাশনাল কো-কনভেনর কৈলাশ এন. ভরদ্বাজ এই প্রসঙ্গে বলেন, “এই কর্মসূচির মাধ্যমে অনলাইনে বিজ্ঞান এবং আবিষ্কার সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ে পড়ুয়াদের শিক্ষা দান করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি, দেশের বৈজ্ঞানিকদের অবদান সম্পর্কেও তাঁদের সচেতনামূলক পাঠ দান করা হয়। এছাড়াও তাঁদের বিজ্ঞানে উৎসাহ বৃদ্ধি করতে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে স্কলারশিপ এবং শংসাপত্রও দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীরা যাতে গবেষণামূলক কাজ করতে পারেন, সেই কারণে ফেলোশিপ এবং মেন্টরশিপেরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।”
এই প্রসঙ্গে এনসিএসএম-র জনসংযোগ আধিকারিক সত্যজিৎ এন. সিংহ জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে প্রতি বছর এক জন ভারতীয় বৈজ্ঞানিকের বিষয়ে আলাদা করে পড়ানো হয়ে থাকে। এই মর্মে অনলাইনে সাবজেক্ট মেটেরিয়ালও দেওয়া হয়ে থাকে। এই বছর প্রয়াত উদ্ভিদবিজ্ঞানী বীরবল সাহনির বৈজ্ঞানিক অবদান সম্পর্কে প্রশ্ন রাখা হবে। এই বছর ওপেন বুক এগজ়াম সিস্টেম অনুযায়ী পড়ুয়ারা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে পাবেন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য পড়ুয়াদের ২০০ টাকা অ্যাপ্লিকেশন ফি হিসাবে জমা দিতে হবে। এছাড়াও স্কুল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তরফেও নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। একটি মক টেস্ট এবং পরে ফাইনাল এগজ়ামিনেশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্বের জন্য পড়ুয়াদের বাছাই করে নেওয়া হবে।
আয়োজক সংস্থার ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর এবং আউটরিচ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন বিভাগের আধিকারিক ময়ূরী দত্ত জানিয়েছেন, ১ অক্টোবর মক টেস্ট, ২৯ এবং ৩০ অক্টোবর ফাইনাল এগজ়ামটি নেওয়া হবে। ওই দিন বেলা ১০ টা থেকে সন্ধ্যে ৬টার মধ্যে যে কোনও সময় অ্যাপ ডাউনলোড করে পড়ুয়ারা এই পরীক্ষাটি দিতে পারবেন। পরীক্ষাটি হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা-সহ ১১টি আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া যাবে। আয়োজক সংস্থা সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, সর্বভারতীয় স্তরে ৭০ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করে ফেলেছেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত রাজ্য থেকে এখনও পর্যন্ত ৯,০৯২ জন পড়ুয়ারা নাম নথিভুক্ত করেছেন।
এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থ প্রতীম বৈদ্য জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে রাজ্যে বিজ্ঞানের মূল ধারার বিষয়ে পড়াশোনার ঝোঁক কমেছে। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ১৩ জন পড়ুয়া বিজ্ঞান শাখায় উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ দেখান। সেই পরিস্থিতিতে কলেজের আসনও খালি থেকে যাচ্ছে। তাই এই ধরণের সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা স্কুল পড়ুয়াদের অনেকটা বেশি উৎসাহ যোগাবে। পাশাপাশি, তাঁদের বিজ্ঞান চেতনা বৃদ্ধি পাওয়ারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়াও এই পরীক্ষার মূল্যায়ন থেকেই সিবিএসসি, আইসিএসই বোর্ডের পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পর্ষদের পড়ুয়ারা কতটা পাল্লা দিতে পারছেন, সেই ছবিটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্তকরণের জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনলাইন পোর্টাল চালু থাকবে। আরও বিস্তারিত জানতে বিদ্যার্থী বিজ্ঞান মন্থন কিংবা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটটি দেখে নিতে হবে।