medicines

ওষুধের বিপদ

সেপ্টেম্বর মাসে লানসেট-এর এক সমীক্ষাতেও স্পষ্ট হয়েছিল ভারতে অত্যধিক হারে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রবণতা বেশি। অতিমারি পর্বে তা আরও ঊর্ধ্বগামী হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২৪

ওষুধ শুধুমাত্র রোগ সারায় না, ভুল প্রয়োগের কারণে সেই ওষুধই মানবশরীরে মহা বিপদও ডেকে আনতে পারে। তবে এ জাতীয় সতর্কবার্তায় ভারতীয়রা সাধারণত কর্ণপাত করেন না। তাঁরা স্বভাবত অধৈর্য, এবং বাস্তবে হাতুড়িবিদ্যায় বিশ্বাসী। সামান্য রোগলক্ষণেই কড়া ওষুধে ভরসা রাখেন। এই কু-অভ্যাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসে লানসেট-এর এক সমীক্ষাতেও স্পষ্ট হয়েছিল ভারতে অত্যধিক হারে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রবণতা বেশি। অতিমারি পর্বে তা আরও ঊর্ধ্বগামী হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের বিষয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে। বলা হয়েছে, অল্প জ্বর এবং ভাইরাল ব্রঙ্কাইটিসে ঢালাও অ্যান্টিবায়োটিক নয়, যেখানে প্রয়োজন, সেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনেই দিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে কত দিনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে, সেই সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে আইসিএমআর। রাশ টানতে বলা হয়েছে গুরুতর অসুস্থদের ক্ষেত্রে আন্দাজের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের রীতিতেও।

এই নির্দেশিকার প্রয়োজন ছিল। লানসেট-এর সমীক্ষা যে চিত্র তুলে ধরেছিল, তা সবিশেষ উদ্বেগের। অকারণ এবং অত্যধিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণে প্রায় নব্বই শতাংশ ভারতীয়ের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্যাথোজেন গড়ে উঠছে। দিনের পর দিন একই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে এক সময় তা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কারণ, শরীরে উপস্থিত ব্যাক্টিরিয়া সেই ওষুধের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। এবং তা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অবিলম্বে ওষুধ ব্যবহারের কু-অভ্যাসে লাগাম পরানো না হলে একটা সময় পর এই ধরনের ‘সুপারবাগস’-এর সঙ্গে লড়ার মতো প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাবে না। ফলে, বহু রোগের চিকিৎসা সম্ভব হবে না। সমস্যা হল, অ্যান্টিবায়োটিকে রাশ টানার এই তত্ত্ব নতুন নয়। এই বিষয়ে দীর্ঘ দিনই আলোচনা চলছে। প্রেসক্রিপশন অডিট করার প্রসঙ্গও উঠেছে। কিন্তু এখনও এক শ্রেণির চিকিৎসক অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের উপরেই আস্থা রাখেন। এমনকি, অনেকে প্রতিরোধের উপায় হিসাবেও এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। সর্বোপরি, ভারতে ওষুধের দোকানে বিনা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা এই প্রবণতাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। তাই শুধুমাত্র নির্দেশ জারি করা নয়, কড়া নজরদারি এবং নির্দেশ অমান্যে কঠোর পদক্ষেপ না করা গেলে জনস্বাস্থ্য অচিরেই ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হবে।

Advertisement

এবং সতর্ক হতে হবে সাধারণ মানুষকেও। সমাজের যে সমস্ত স্বঘোষিত চিকিৎসক ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজের চিকিৎসা নিজেই করার মহান দায়িত্বটি তুলে নিয়েছেন, তাঁদের মনে রাখা প্রয়োজন, এই ভাবে তিনি শুধুমাত্র নিজেরই নয়, অন্যের ক্ষতির রাস্তাটিও পাকা করছেন। অসুখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে, তাঁর নির্দেশমতো ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোনও মত বা চিন্তার স্থান নেই। অসুখ সারানোর দায়িত্বটি চিকিৎসকের। এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করাই কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিকের প্রধান কাজ।

আরও পড়ুন
Advertisement