ED

বিরোধী ঐক্য

প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ ইত্যাদির পাশাপাশি অতি সম্প্রতি ১৭টি বিরোধী দল একযোগে ইডি-র যথেচ্ছাচারের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৫:৩৭

ধর্মক্ষেত্রে দুই সেনাদলের মধ্যে রথ সংস্থাপনের যে অনুরোধ অথবা নির্দেশ অর্জুন জানিয়েছিলেন, সেটি পালন করতে পার্থসারথির কোনও সমস্যা হয়নি, কারণ যুযুধান দুই পক্ষ আপন অবস্থানে সুসংহত ছিল।সে দ্বাপরও নেই, সেই ধর্মযুদ্ধও নেই। ভারতীয় রাজনীতির কুরুক্ষেত্রে সীমানা বদল হয়— কেবল মধ্যরাতে নয়, অহোরাত্র। আবার আপাতদৃষ্টিতে বিরোধী শিবিরে থেকেও শাসকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে নানা ধরনের প্যাঁচপয়জার চলতে থাকে। তার উপরে আছে সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে রাজ্য স্তরের রাজনীতির টানাপড়েন, যার মধ্যে আন্দোলিত হতে-হতে এক-একটি দল এক-এক সময় ঠিক করতে পারে না, কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তারা কী অবস্থান নেবে, তখন ‘বড় বিপদ’ আর ‘ছোট বিপদ’-এর তুল্যমূল্য বিচার চলে। সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গ এমন সূক্ষ্মবিচার বিস্তর দেখেছে।

ছবিটা কি বদলাচ্ছে? সেই পরিবর্তন কি স্থায়ী হতে পারে? গত কয়েক দিন ধরে একটি প্রশ্নে বিরোধী দলগুলির মধ্যে কিছুটা সমন্বয়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। প্রশ্নটি নতুন নয়, তবে সহসা সেটি নতুন করে প্রবল আকার নিয়েছে। বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই বা ইডি-র ‘রাজনৈতিক অপব্যবহার’-এর অভিযোগ উঠেছে নানা দিক থেকে। বিশেষত, সনিয়া ও রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের এই ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ ক্রমশই জোরদার। প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ ইত্যাদির পাশাপাশি অতি সম্প্রতি ১৭টি বিরোধী দল একযোগে ইডি-র যথেচ্ছাচারের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সাম্প্রতিক অতীতে বিরোধী জোটে ‘ফাটল-ধরানো’ আম আদমি পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেসও এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। শাসকের আধিপত্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে বিরোধী কণ্ঠস্বরের সংহতি গণতন্ত্রের স্বার্থেই মূল্যবান। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তির ঢক্কানিনাদে সেই কণ্ঠস্বর যাতে চাপা না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করাও বিরোধী দলগুলির দায়িত্ব।

Advertisement

এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটি বিশেষ ভাবে জটিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, প্রধানত ইডি এই রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির পর্বতপ্রমাণ অভিযোগের অনুসন্ধানে ব্যস্ত। রাজ্যের শাসক দল এই অভিযানের নিশানা, সুতরাং ইডি-র কর্মকাণ্ড সিপিআইএম বা কংগ্রেসের মতো দলের পক্ষে রাজ্য স্তরে অনুকূল পরিস্থিতি রচনা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস ধর্তব্য নয়, কিন্তু সিপিআইএম এবং তার অনুগামী সংগঠনগুলি এই দুর্নীতির প্রশ্নে প্রতিবাদে সরব ও সক্রিয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই কোনও কোনও মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, ইডি-চালিত অভিযানের সূত্র ধরে শাসক দলের এই বিরোধিতা কার্যত বিজেপির হাত শক্ত করবে না কি? প্রতিবাদী বামপন্থীরা দৃশ্যত এই সংশয় নিরসনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তাঁদের মতে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ইডি তথা বিজেপি কেউই বিশ্বাসযোগ্য নয়, সেই কারণেই তাঁদের দাবি, ইডি-র তদন্ত যেন আদালতের নির্দেশ মেনে চালানো হয়। কথাগুলি অযৌক্তিক বলা যাবে না। কিন্তু এ-সবই আসলে কৌশলের কথা। কৌশলের স্তরে নিজেদের অবস্থানকে সীমিত না রেখে বিরোধীদের— শুধু বামপন্থী নয়, সমস্ত বিরোধী দল বা শক্তিকেই— স্পষ্ট নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। সেই অবস্থান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে। একটির বিরোধিতা করতে গিয়ে অন্যটিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। ন্যায্য দাবি একটিই: দুর্নীতির তদন্ত হোক, বিশেষ-বিশেষ হিসাব কষে বাছাই করা দুর্নীতি নয়, সমস্ত শিবিরের সব দুর্নীতির তদন্ত জরুরি, কিন্তু সেই তদন্তকে রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতিয়ার করা চলবে না। বস্তুত, এই নৈতিকতার ভিত্তিতেই বিরোধী ঐক্যের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার না হলে সুযোগের দাম শূন্য।

আরও পড়ুন
Advertisement