International Relations

নতুন অঙ্ক

কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সাল থেকে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে আঞ্চলিক দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির যে প্রয়াস চালু করেছিল, তা অব্যাহত রাখা ছাড়া গত্যন্তর নেই দিল্লির কাছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৬:৩৪

বিশ্বের ক্রমপরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক আবহের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি কি শুরু করে দিয়েছে ভারত? অন্তত তেমনই ইঙ্গিত মিলল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এক সাক্ষাৎকারে। আমেরিকার কৃত্রিম মেধার গবেষক লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একুশ শতককে এশিয়ার শতক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, চিন ও ভারতের গভীর সাংস্কৃতিক যোগের কথা তুলে তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক স্থিতি ও কল্যাণের স্বার্থে দুই দেশের সুসম্পর্ক জরুরি। লক্ষণীয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টার মাঝে তাঁর ভূরাজনৈতিক অবস্থান বদলে যে ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাতে ইউরোপীয় দেশগুলিকে এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক সমীকরণটি পুনরায় নতুন করে কষতে হচ্ছে। একই ভাবে সাম্প্রতিক কালে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে সাক্ষাৎ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যা চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশেরই। কোয়াডভুক্ত দেশগুলির সাহায্যে এত কাল এই অঞ্চলে চিনের আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা ভারত প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিদেশনীতির চলন অনুযায়ী সে সুযোগ মিলবে কি না, প্রশ্ন থাকছে। ইউরোপের মতো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প বিচ্ছিন্নতা নীতি অবলম্বন করলে, তা শুধুমাত্র দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিতে দখলদারির প্রচেষ্টাকেই ঘৃতাহুতি দেবে না, চিনের তাইওয়ান অধিগ্রহণের অভিপ্রায়কেও উৎসাহিত করবে।

Advertisement

অন্য দিকে, অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি তার স্বার্থ যাতে কোনও ভাবেই ব্যাহত না হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তা নিশ্চিত করাই ভারতের অন্যতম উদ্দেশ্য, যে-হেতু এই অঞ্চলের বাণিজ্য জলপথ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জ্বালানি সংক্রান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। ফলে এই অঞ্চলে কোনও প্রকারের অস্থিরতা জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি তার অবস্থান দৃঢ় করার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে। শুধু তা-ই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে চক্রব্যূহ তৈরি করে ভারতের প্রভাব হ্রাস করা যে চিনের অন্যতম উদ্দেশ্য, তা বিলক্ষণ জানে দিল্লি। এমতাবস্থায় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সাল থেকে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে আঞ্চলিক দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির যে প্রয়াস চালু করেছিল, তা অব্যাহত রাখা ছাড়া গত্যন্তর নেই দিল্লির কাছে। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মরিশাস সফর তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। তা ছাড়া, ভারতের ক্রমবিবর্তনশীল সামুদ্রিক কূটনীতির এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ‘মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারেনস’ (এমডিএ) ক্ষমতা, যার সাহায্যে সে জলপথের গতিবিধি ও পরিবেশ সম্পর্কে তাৎক্ষিক তথ্য মরিশাস, মলদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো পড়শি রাষ্ট্রগুলিকে সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই যা এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলিকে তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চোরাকারবারিদের কার্যকলাপ রুখতে সাহায্য করেছে। অন্য দিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারতের মানবিক সহায়তা এবং বিপর্যয়ের ত্রাণসাহায্যের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। ধরে নেওয়া যায়, চিনের আধিপত্য বৃদ্ধির আশঙ্কার মাঝে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনীতির জটিল খেলায় টিকে থাকতে আপাতত এই প্রয়াসই চালিয়ে যাবে দিল্লি।

Advertisement
আরও পড়ুন