Social Media

প্রতারণা-মাধ্যম

দেশে অনলাইন জালিয়াতির আবহে এই ধরনের সংবাদ উদ্বেগজনক। সম্প্রতি ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র প্রসঙ্গেও সমাজমাধ্যমের নির্বিচার ব্যবহারের প্রসঙ্গটি উঠেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১৫
সমাজমাধ্যমে বাড়ছে অপরাধ।

সমাজমাধ্যমে বাড়ছে অপরাধ। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সমাজমাধ্যম নিঃসন্দেহে এক বৃহত্তর জগতের সন্ধান দিয়েছে। কিন্তু ‘ভাল’-র পিছনে ‘মন্দ’-এর কালো ছায়াটিও যেমন বহু ক্ষেত্রে সঙ্গী হয়, সমাজমাধ্যমেও তেমনটি ঘটেছে। এই মাধ্যমের উপর ভরসা করে বহু জন প্রতারিত, হেনস্থার শিকার হয়েছেন, চরম বিপদেও পড়েছেন। সম্প্রতি এক বছর ত্রিশের মহিলা পুলিশে অভিযোগ করেছেন, সমাজমাধ্যমে আলাপ হওয়া তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে তিনি দীপাবলির সময় দেখা করতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ঠাকুর দেখার নাম করে তাঁকে এক অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে গিয়ে ওষুধ মেশানো নেশার দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে গণধর্ষণ করে অভিযুক্তরা। অতঃপর তাঁকে ফেলে চলে যায়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে অন্যদের।

Advertisement

দেশে অনলাইন জালিয়াতির আবহে এই ধরনের সংবাদ উদ্বেগজনক। সম্প্রতি ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র প্রসঙ্গেও সমাজমাধ্যমের নির্বিচার ব্যবহারের প্রসঙ্গটি উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই জালিয়াতেরা সম্ভাব্য ‘শিকার’কে বেছে নিয়ে যোগাযোগ করতে সমাজমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়। অতঃপর ভুয়ো অভিযোগের কথা বলে বিভ্রান্ত করে মোটা টাকা দাবি করা হয়। সম্প্রতি এই বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। প্রতারণার অন্যবিধ পন্থার কথাও বহুচর্চিত। উঠেছে সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ। বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠানোর মাধ্যমে আলাপচারিতা, অতঃপর অর্থসাহায্যের আবেদনের মাধ্যমে প্রতারণার চেষ্টাও চলেছে। কিন্তু আর্থিক প্রতারণার ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যমের প্রবল উপস্থিতি যতটা চর্চিত, শারীরিক নিগ্রহ, হেনস্থার পিছনে ততটা নয়। সম্পূর্ণ অপরিচিতের বন্ধুত্বের প্রলোভনে পা দিয়ে বিপদে পড়ার নজির যথেষ্ট থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতা তেমন গড়ে ওঠেনি। ফলে, এমন ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির আশঙ্কাটি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তবুও সচেতন অভিভাবক, শিক্ষকদের নজরদারি কিছুটা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে নিজের যুক্তিবুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞানের উপর ভরসা রাখা ছাড়া উপায় নেই। মাত্র দিনকয়েকের পরিচয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অন্যত্র যেতে রাজি হওয়ার মধ্যে সেই কাণ্ডজ্ঞানের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার যাঁদের হাতে, তাঁরা যেন না ভাবেন যে এমন ঘটনা ঘটলে তাঁদের দায়িত্ব কম, প্রতারিত ব্যক্তির দায়িত্বই বেশি। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রশাসনকেও ভাবতে হবে, কী উপায়ে অনলাইন প্রতারকদের দ্রুত সন্ধান করা, গ্রেফতার করা এবং শাস্তি দেওয়া সম্ভব। বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। কেননা, শুধুমাত্র প্রতারণা বা হেনস্থাই নয়, অতিরিক্ত সমাজমাধ্যম-নির্ভরতা মানসিক শান্তিরও অনুকূল নয়। কিছু মাস পূর্বে কানাডার মন্ট্রিয়লের বাসিন্দা এক তরুণ সমস্ত সমাজমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করেন এই মর্মে যে, এই মাধ্যমগুলি ‘নেশা ধরিয়ে’ দেয়, যার হাত থেকে সহজে পরিত্রাণ মেলে না। ব্যক্তিকে স্থির করতে হবে, দৈনন্দিন যাপনে সমাজমাধ্যমকে কতটুকু জায়গা ছাড়া উচিত, কী ভাবে ভারসাম্য রাখা সম্ভব। আর আইনশৃঙ্খলার রক্ষককে দেখতে হবে, সমাজমাধ্যমের বিপদের হাত থেকে ব্যক্তিনাগরিককে কী ভাবে ও কতখানি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন
Advertisement