Marital Rape

ঘুমায়ে রয়

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ১৫ বছর বয়সের নীচে স্ত্রীর অসম্মতিতে সহবাস ধর্ষণ বলে গণ্য। সুপ্রিম কোর্ট এই বয়সটিকে বাড়িয়ে ১৮ করে দেয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩০
বৈবাহিক ধর্ষণ ইতিমধ্যেই আইনে নিষ্ঠুরতা হিসেবে পরিগণিত।

বৈবাহিক ধর্ষণ ইতিমধ্যেই আইনে নিষ্ঠুরতা হিসেবে পরিগণিত। প্রতীকী ছবি।

তিন ছোট প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান, তাইল্যান্ড অবধি বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধের আওতায় এনে ফেলল, ভারত শুধু অক্ষম অজুহাতে বন্দি রইল। দেশ জুড়ে দীর্ঘকাল ধরে নারীবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, দিল্লি হাই কোর্টে এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত রায়, কর্নাটক হাই কোর্টে একটি রায়ের বিরুদ্ধে মামলা, সব মিলিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে বিচারতালিকায় আনতে বাধ্য হয়েছিল। এ দিকে সলিসিটর জেনারেল সম্প্রতি আদালতকে জানিয়েছেন, আইনি বৃত্তের বাইরে বিষয়টির বৃহত্তর সামাজিক প্রভাব বিরাট, তাই বিষয়টি সংবেদনশীল। রাজ্যগুলির কাছে মতামত জানতে চেয়েছে কেন্দ্র। জানা যাচ্ছে, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রকে হলফনামা জমা দিতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সরকার জানিয়েছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধের আওতায় আনা যাবে না, তা হলে বিবাহপ্রথার পবিত্র নৈতিকতায় আঘাত আসবে। কিন্তু ওই বছরেই অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৈবাহিক ধর্ষণের সংজ্ঞাটিকে কিঞ্চিৎ বদল করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ১৫ বছর বয়সের নীচে স্ত্রীর অসম্মতিতে সহবাস ধর্ষণ বলে গণ্য। সুপ্রিম কোর্ট এই বয়সটিকে বাড়িয়ে ১৮ করে দেয়। পরের বছর দিল্লি সরকারও আদালতকে জানায়, বৈবাহিক ধর্ষণ ইতিমধ্যেই আইনে নিষ্ঠুরতা হিসেবে পরিগণিত। গত বছর জানুয়ারি মাসে দিল্লি হাই কোর্টে এ বিষয়ে আইনি প্রতর্ক শুরু। কেন্দ্র আগের ‘পারিবারিক নৈতিকতা’র অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে হাই কোর্টকে জানায়, ২০১৭ সালের ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে দাম্পত্য ধর্ষণকে আইনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার জন্য তারা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতামত চেয়েছে। অতঃপর ১১ মে হাই কোর্টের বিভক্ত রায়। এক বিচারপতি বিষয়টিকে অপরাধ বলেন, অন্য জন নাকচ করেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে রকম, তাতে এ বার যে সুপ্রিম কোর্ট ফেব্রুয়ারি মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তাকে বিশেষ স্বাগত জানাতে হয়।

বাস্তবিক, সময় নষ্ট, গয়ংগচ্ছ মনোভাব, অকারণ ও দীর্ঘসূত্রতার এই কুনাট্য আর কত দিন? এমনিতে এ দেশের বহু নারী-অধিকার বিষয়ক আইন ইতিমধ্যে সংস্কারের পথে। গত সেপ্টেম্বরেই সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি রায়ে জানিয়েছে, ২৪ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ ও ঝুঁকিহীন ভাবে গর্ভপাত করানো যাবে। তা হলে দাম্পত্য ধর্ষণ নিয়ে এত দোলাচল কেন? ইতিমধ্যে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশ দাম্পত্যে নারীর শরীরী অধিকারকে মেনে নিয়েছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি ১০৪টি দেশে এখন দাম্পত্য ধর্ষণ নিয়ে মামলা করা যায়। এ দিেক এ দেশের আইনপ্রণেতারা এ নিয়ে কথা উঠলেই আইনের বাইরে ‘বৃহত্তর সামাজিক প্রভাব’ নিয়ে ভাবছেন। বস্তুত, ‘সামাজিক প্রভাব’-এর কথা ভাবলে তো এ দেশে সতীদাহ বা বাল্যবিবাহ রোধ, বিবাহবিচ্ছেদ কোনও আইনই আনা যেত না। ভারতীয় সংবিধান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। বিশেষত কারও উপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে যদি তিনি আইনি সহায়তা না চাইতে পারেন, তবে ব্যক্তির অধিকার কী ভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রে নিশ্চিত হবে? অবশ্য কেন্দ্রের শাসকরা যদি মনুসংহিতার ঢঙে নারীকে স্বামীর সম্পত্তি ভাবেন, তা হলে অন্য কথা!

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement