India-Pakistan

জয়ের শিক্ষা

পাক জঙ্গি মাসুদ আজ়হারকে একই তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া বেজিং চার বার আটকে দিয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ০৫:০১
A photograph of Pakistan\\\'s militant leader, Abdul Rehman Makki

পাকিস্তানের জঙ্গি নেতা, আব্দুল রেহমান মাক্কিকে অবশেষে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। ফাইল ছবি।

পাকিস্তানের জঙ্গি নেতা, লস্কর-ই-তইবার উপপ্রধান আব্দুল রেহমান মাক্কিকে অবশেষে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। মাক্কি মুম্বইয়ে তাজ প্যালেস হোটেল ও সংলগ্ন এলাকায় ২৬/১১-র কুখ্যাত হামলার মূল ষড়যন্ত্রীদের অন্যতম, হামলার ঘটনাতেও প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত, আবার কাশ্মীর সীমান্তে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গেও তাঁর নাম জড়িয়ে। ভারত ও আমেরিকা অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছিল এ-হেন জঙ্গি নেতার নাম যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকায় ওঠে, তাতে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিশ্ব স্তরে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করায় সুবিধা। কিন্তু এ কাজটিই হচ্ছিল না চিন বেঁকে বসায়। ইসলামাবাদের সঙ্গে বেজিং-এর সুসম্পর্ক সুবিদিত, গোড়া থেকেই বেজিং মাক্কিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল অথচ ঝেড়ে কাশছিল না, আবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য বলে তার অসম্মতিটুকু হয়ে উঠছিল বাকিদের পথের কাঁটা। এত দিনে সেটুকু নির্মূল হল, চিন অবশেষে নিজের আপত্তি প্রত্যাহার করায়।

স্বাভাবিক ভাবেই দিল্লি ও ওয়াশিংটন এই ঘটনাকে দেখছে বিরাট নৈতিক ও কূটনৈতিক জয় হিসাবে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকায় মাক্কির নাম ওঠানোর বিষয়ে বেজিং কার্যত হয়ে পড়েছিল একঘরে— রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পনেরো সদস্যের মধ্যে ভারত-সহ চোদ্দোটি দেশই যেখানে এক দিকে, সেখানে চিনের যাবতীয় আপত্তি এক সময় তুলে নিতেই হত। চিন এ ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা আগেও করেছে, পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজ়হারকে একই তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া বেজিং চার বার আটকে দিয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি। এ বারে মাক্কির ক্ষেত্রেও একই ঘটনাক্রমের পুনরাবৃত্তি। উপরন্তু এ বার চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বিবৃতিতে উঠে এসেছে পাকিস্তানের মাটিতে মাক্কির কারাদণ্ড ভোগের কথা, এবং এই সবই যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আপসহীন লড়াইয়ের নমুনা— সেই মন্তব্যও। ও দিকে ইসলামাবাদও বিবৃতি দিয়েছে, পাকিস্তান নিজেই বরং ‘সন্ত্রাসবাদের শিকার’, আর সে যে কস্মিন্‌কালেও সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীর ধাত্রী নয় সে তো মাক্কির কারাদণ্ড থেকেই প্রমাণিত। বেজিং-ইসলামাবাদের এই এক সুরে গান গাওয়া থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না তাদের যৌথ কূটনৈতিক কৌশল: পাকিস্তান ‘ভিক্টিম কার্ড’ খেলে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে না পারার মনোভাব দেখাবে, বন্ধু চিন তাতে সমর্থন জোগাবে নিরন্তর।

Advertisement

বেজিং ও ইসলামাবাদের এই বন্ধুত্ব ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে ধরেই নেওয়া যায়, কারণ তার ভিত্তিটি পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার। চিনের উইগুর সুন্নি মুসলমানদের উপর চিন সরকারের নিপীড়ন নিয়ে পাকিস্তান চুপ, এমনকি ইসলামি বিশ্বের নীরবতা রক্ষার দায়িত্বটিও সে-ই নিয়েছে, প্রতিদানে পেয়েছে চিনের প্রচ্ছন্ন মদত, ভারত যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জকে দিয়ে পাক জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে না পারে তার বন্দোবস্ত। মাক্কিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা দিল্লির কাছে স্বস্তির নিশ্চয়, তবে উচ্ছ্বাসের কারণ না হলেই ভাল। ভবিষ্যতেও এমনই সব বাধা আসবে, কূট কৌশলও— এই অদৃশ্য দেওয়াল-লিখনটি বরং পড়া দরকার।

আরও পড়ুন
Advertisement