India-Nepal

প্রতিবেশী-চিন্তা

নেপালের বর্তমান জোট সরকারও যে ভবিষ্যতে চিনকে কৌশলগত ভাবে সুবিধাজনক জায়গায় রাখবে, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:২৫
নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল। ছবি: রয়টার্স।

গত সাধারণ নির্বাচনে নেপালে পুষ্প কমল দহল বা প্রচণ্ডের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি মাত্র ৩২টি আসনে জয়ী হয়েছিল। শীর্ষ স্থানে ছিল শের বাহাদুর দেউবার নেতৃত্বাধীন নেপালি কংগ্রেস এবং দ্বিতীয় স্থানে কে পি শর্মা ওলি-র মাওবাদী লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। শেষ পর্যন্ত মাওবাদী লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি-র সঙ্গে জোটে তৃতীয় বারের জন্য দেশের মসনদে বসলেন মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান প্রচণ্ড-ই। গত সপ্তাহে সংসদের আস্থা ভোটেও রেকর্ড সমর্থন লাভ করলেন তিনি। নেপালের এ-হেন রাজনৈতিক চিত্র উদ্বেগ বাড়িয়েছে দিল্লির। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলে দেয়, কেন নেপাল সরকারের চরিত্র দিল্লির কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এর আগেও ওলি-প্রচণ্ড যৌথ সরকারের কালে কাঠমান্ডুর বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছিল। ২০২০ সালে সীমান্ত বিবাদ সূত্রে পূর্ব লাদাখে যখন চিনের সঙ্গে সামরিক অচলাবস্থায় ব্যতিব্যস্ত ছিল ভারত, সেই সময় ভারতের আপত্তি উড়িয়ে দেশের নতুন মানচিত্রে সিলমোহর লাগানোর উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন বিল পাশ করিয়েছিল তৎকালীন ওলি সরকার। ভারতের প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে নতুন মানচিত্রে নিজেদের বলে দাবি করে তারা। বেজিং-এর নির্দেশেই এমনটা করা হয়েছিল বলে প্রশ্ন ওঠে সেই সময়। ক্ষমতায় আসার পরে বর্তমান জোট সরকার ভারত দ্বারা বেআইনি ভাবে অধিকৃত নেপালের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার অঙ্গীকার করেছে। যদিও নেপালের সঙ্গে চিনের অঞ্চল বিবাদের বিষয়ে নীরব থাকতে দেখা গিয়েছে তাদের। বস্তুত, প্রচণ্ডের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা অজ্ঞাত নয়। প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পরে নেপালের শাসকরা সাধারণত যেখানে ভারত সফর করে থাকেন, সেখানে ২০০৮ সালে প্রচণ্ড তাঁর প্রথম সরকারি সফরটি করেন বেজিং-এ। যদিও দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে তিনি প্রথম সফরটি দিল্লিতেই করেছিলেন। অন্য দিকে, নেপালে নিজেদের ভূকৌশলগত গুরুত্ব এবং সংযোগ বাড়াতে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে চিনকে। নতুন করে চালু হচ্ছে নেপাল এবং চিনের মধ্যে স্থগিত আন্তঃসীমান্ত রেলপথ প্রকল্প। পাশাপাশি, প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পরে নেপাল থেকে রাসুওয়াগড়ি-কেরুং সীমান্ত দিয়ে চিনে যাওয়ার বাণিজ্যপথের বিষয়টিতেও অনুমতি দিয়েছে বেজিং। ফলে, নেপালের বর্তমান জোট সরকারও যে ভবিষ্যতে চিনকে কৌশলগত ভাবে সুবিধাজনক জায়গায় রাখবে, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

তবে কিনা, আর কিছু দিনের মধ্যেই প্রচণ্ডের দিল্লি সফরে আসার কথা। কূটনৈতিক দিক দিয়ে এই সফরের গুরুত্ব বিরাট। এই সুযোগে ভারতের উচিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও মজবুত করা। বিপুল লগ্নির ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও, পড়শি দেশের সঙ্গে সদ্ভাব রক্ষায় যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, আপাতত সেইটাই ভারতের কাজ। সদ্ভাব থাকলে নেপালও চাইবে চিন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে। ভুলে যাওয়া যাবে না, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত-নেপালের এক দীর্ঘ বন্ধন রয়েছে, যা বেজিং-এর সঙ্গে নেপালের নেই। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সেই ইতিহাসকে কাজে লাগাক ভারত।

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement