United Nations

ভারসাম্যবাদী

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইনের সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট গোটা পশ্চিম এশিয়া জুড়ে এবং তার গভীর প্রভাব পড়ছে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৩

—ফাইল চিত্র ।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে গাজ়ায় সংঘর্ষ বিরতির দাবি সম্বলিত প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখল ভারত। বৈঠকে বলা হয় অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতি, ইজ়রায়েলকে সব ধরনের অস্ত্র এবং সামরিক উপকরণ বিক্রি, বণ্টন ও সরবরাহ স্থগিত রাখা এবং পূর্ব জেরুসালেম-সহ প্যালেস্টাইনে যুদ্ধাপরাধের দায় নির্ধারণ ও বিচারের কথা। ভারত-সহ জাপান, ফ্রান্স এবং রোমানিয়ার মতো তেরোটি দেশ ভোটদানে বিরত থাকলেও, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ব্রাজ়িল, চিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার-সহ ২৮টি দেশ। ফলে সংখ্যাধিক্যের জোরে প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত গৃহীত হয়। পরিষদীয় বিবৃতিতে এও বলা হয়, গাজ়ায় অবিলম্বে ইজ়রায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়ার পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে গাজ়া থেকে প্যালেস্টাইনিদের বলপূর্বক অপসারণও। প্যালেস্টাইনের জনসাধারণকে হত্যা করে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টার নিন্দাও করা হয় প্রস্তাবে।

Advertisement

ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইনের সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট গোটা পশ্চিম এশিয়া জুড়ে এবং তার গভীর প্রভাব পড়ছে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতেও। পশ্চিম এশিয়ার বহু রাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং ইজ়রায়েল-এর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত জোটের ফলে এই সংঘাতের জেরে ভারতকেও কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে পড়তে হয়েছে। যদিও এ-হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানই বজায় রেখে এসেছে দিল্লি। লক্ষণীয়, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের ক্ষেত্রে এক বিশেষ নীতি অবলম্বন করেছে ভারত। ইজ়রায়েল-এর সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সামরিক ক্ষেত্রে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রখা হয়েছে, তেমনই ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’ অনুসারে এক স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবও সমর্থন করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই ইজ়রায়েল, প্যালেস্টাইন এবং আরব দেশগুলির সঙ্গে আলাদা ভাবে সংযোগ রেখে আসছে দিল্লি, যাতে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব না পড়ে।

আগামী দিনেও ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইন-এর সঙ্গে ‘ডি-হাইফেনেটেড’ সম্পর্কই বজায় রাখতে চলেছে দিল্লি, যে কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক প্রস্তাবে ভোটদানে অনেক সময়েই নিজেকে বিরত রেখেছে দিল্লি। প্যালেস্টাইনের প্রসঙ্গেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারংবার দ্বিরাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি কূটনীতি এবং সংলাপের মাধ্যমে দু’তরফের সমস্যা মেটানোর বিবৃতি দিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরের শেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় সিরিয়ান গোলান মালভূম অঞ্চলে ইজ়রায়েলের দখলদারি নীতির বিরুদ্ধে ভোট দেয় ভারত। তা ছাড়া, ওই বছরই ডিসেম্বরে যুদ্ধবিরতি এবং প্যালেস্টাইনি বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তির সপক্ষে একটি প্রস্তাবকেও সমর্থন করে দিল্লি। এ বারও ইজ়রায়েল নিয়ে মানবাধিকার পরিষদের পাঁচটি প্রস্তাবের তিনটির পক্ষে কিন্তু ভোট দিতে দেখা গিয়েছে ভারতকে। ইজ়রায়েল-এর উপরে হামাসের আক্রমণ এমন সময় ঘটে যখন ইজ়রায়েল, কিছু আরব রাষ্ট্র, আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও ভারত— পশ্চিম এশিয়ায় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। যুদ্ধ সেই লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে। তাকে কী ভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, সেটাই এখন দেখার।

আরও পড়ুন
Advertisement