hawkers

পথের দাবি

শহরকে ‘হকিং জ়োন’, ‘নন-হকিং জ়োন’ এবং বিধিনিষেধযুক্ত এলাকায় ভাগ করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৫৫
হকারদের দখলদারি।

হকারদের দখলদারি।

শহরের ফুটপাতে হকারদের দখলদারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুজোর আগে কিছু মন্তব্য করেছিলেন। পুজো মিটেছে, ফলে কথাটিকে ফের আলোচনায় নিয়ে আসা বিধেয়। শহরের ফুটপাত ‘চুরি’-র ঘটনা নতুন নয়। ফুটপাত থাকবে হকারদের দখলে, আর পথচারী হাঁটবেন রাস্তা দিয়ে— কলকাতায় এটাই নিয়ম। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলি। শহরাঞ্চলে ক্লায়েন্টেলিজ়ম-এর সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ফুটপাতের অবৈধ দখলদারিকে ছাড়পত্র দেওয়া বহু দিন ধরেই গুরুতর ভূমিকা পালন করে। ফলে কোনও রাজনৈতিক আমলেই কলকাতার ফুটপাত-চিত্র পাল্টায় না। মাঝেমধ্যে কোনও বড় অভিযোগ উঠলে, অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় মাপের কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, বা ভোটের আগে কয়েক দিন প্রশাসনের নানা স্তরে আলোচনা চলে, প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফুটপাত হকারমুক্ত হয় না। প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী সাক্ষী, কলকাতার ফুটপাতে সূর্যালোকের সাধনা অসম্ভব।

২০১৪ সালের পাশ হওয়া ‘পথ বিক্রেতা’ (জীবিকা সুরক্ষা ও পথ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে, শহরে আড়াই শতাংশ জনসংখ্যা হকারিতে থাকবে বলে ধরে নিয়ে শহরের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল। শহরকে ‘হকিং জ়োন’, ‘নন-হকিং জ়োন’ এবং বিধিনিষেধযুক্ত এলাকায় ভাগ করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। আইনি জটিলতায় পূরণ হয়নি হকারদের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিটিও। ফলে, নেতাদের আশীর্বাদ থাকলেই এ শহরে হকার হিসাবে জীবিকা অর্জন করা যায়। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশে হকার বসার অনুমতি দেয়। শহরের অধিকাংশ জায়গায় ফুটপাতের যা আয়তন, তাতে এই ভগ্নাংশ হকারদের দখলে চলে গেলে, হাঁটার জায়গা থাকে না। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন বহু নাগরিক। উদ্বেগের আরও কারণ আছে। ফুটপাতে অনেক সময় দাহ্য পদার্থ মজুত থাকে বিক্রির জন্য। অস্থায়ী দোকানগুলিতেও যে কাপড় বা প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, সেগুলিও মারাত্মক। তারই সাক্ষী গড়িয়াহাট বা বাগড়ি মার্কেটের ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড। আশ্চর্য— এত কিছুর পরেও প্রশাসন থেকে বিক্রেতা, সচেতন হয় না কেউই।

Advertisement

শহরের পরিসরে গরিবের অধিকার আছে, তার জীবিকা অর্জনের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। সরকার সে দায়িত্ব কতখানি নেবে, তা মূলত রাজনৈতিক বিবেচনার প্রশ্ন। যদি কোনও সরকার সেই দায়িত্ব নিতে চায়, তার নির্দিষ্ট পন্থা আছে। ফুটপাত দখল করে, নাগরিকের হাঁটার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে কারও ব্যবসা চালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার অধিকার সরকারের নেই। হকারদের পুনর্বাসনের চেষ্টা একাধিক বার হয়েছে, এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে সেই চেষ্টা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই ফুটপাত দখলের সমস্যাটিকে গুরুত্ব দেন, তবে নির্দিষ্ট স্থানে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। কোনও ফুটপাত যাতে নতুন করে দখল না হয়, পুলিশকে তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিন। প্রশ্ন হল, রাজনীতি এসে কি প্রশাসনিকতাকে নিয়ে যাবে না? ফুটপাত দখল করতে দিলে যেমন রাজনৈতিক আনুগত্য অর্জন করা সম্ভব, তেমনই স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ অর্থলাভও হয়ে থাকে। শহরের মঙ্গলার্থে ততখানি স্বার্থত্যাগ করা সম্ভব হবে কি?

আরও পড়ুন
Advertisement