Bulldozer Politics

বুলডোজ়ারের শাসন

বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকারের এ তথ্যে কিছু যায় আসে না— তবু জানিয়ে রাখা দরকার যে, গ্রামটি জনজাতি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ০৭:৫৭
Bulldozer politics

—প্রতীকী ছবি।

শীত এলে যেমন তার পিছু পিছু বসন্তও আসেই, তেমনই ভারতের কিছু রাজ্যে এখন সংখ্যালঘুর বাড়িতে পুলিশ এলেই পিছু পিছু বুলডোজ়ারেরও আগমন ঘটে। রাজ্যগুলির মধ্যে একটি চারিত্রিক মিল আছে— প্রতিটি রাজ্যেই বিজেপির শাসন। মধ্যপ্রদেশের মণ্ডলা জেলার এক গ্রামে গত সপ্তাহান্তে পুলিশের বিরাট দল কয়েকটি বাড়ির ফ্রিজ থেকে ‘উদ্ধার’ করল গোমাংস; একটি বাড়ি থেকে পশুর চর্বি ও চামড়া; জনৈকের উঠোন থেকে দেড়শো গরু। ‘অপরাধ’ তো বটেই— কে না জানে, মধ্যপ্রদেশে পশুহিংসা প্রতিরোধ আইন ও গোবধ নিবারণী আইন দুই-ই অতি কড়া; নতুন মুখ্যমন্ত্রী আবার এই বছরটি ‘গোবংশ রক্ষা বর্ষ’ ঘোষণা করেছেন। অতএব পুলিশি অভিযান, এফআইআর দায়ের, মাংসের ডিএনএ পরীক্ষা, অভিযুক্তদের পলায়ন, এক জন গ্রেফতার। কিন্তু এহ বাহ্য, পর দিনই দেখা গেল সরকারের বুলডোজ়ার এসে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বেছে বেছে সেই বাড়িগুলিই, যেখানে ফ্রিজে গোমাংস পাওয়া গেছে। যুক্তি অবশ্য ভিন্ন: সরকারি জায়গা বেদখল করে দাঁড়িয়ে ছিল বাড়িগুলি, কর্তৃপক্ষ নাকি বাসিন্দাদের নোটিসও ধরিয়েছিলেন।

Advertisement

বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকারের এ তথ্যে কিছু যায় আসে না— তবু জানিয়ে রাখা দরকার যে, গ্রামটি জনজাতি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। জেনে রাখা দরকার, এমন নয় যে হঠাৎ করে কিছু গ্রামবাসী সেখানে গো-বধ উৎসব বা গোমাংস ভক্ষণ-সংরক্ষণ শুরু করেছেন— তাঁদের জীবন-জীবিকাই এই ঘিরে; জবলপুরের সুপ্রাচীন জুতোর ব্যবসার সঙ্গেও তা অন্বিত। পুলিশ, স্থানীয় সরপঞ্চ বা সরকারি দফতরের লোকেরা যে এই প্রথম তা জানলেন, বিশ্বাস করা মুশকিল। তবু যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায় যে, রাজ্য সরকারের আইনের লঙ্ঘন হয়েছে, আইনের পথেই তবে তার প্রতিবিধান কাম্য— পুলিশের এফআইআর-এ যদি তার শুরু, আদালতে মামলা হতে পারত তার পরবর্তী ন্যায্য পদক্ষেপ। তার বদলে প্রশাসনের অস্ত্র হল বুলডোজ়ার, বিজেপি-শাসিত একের পর এক রাজ্যে যার ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে সরকারি ‘ন্যায়’-এর প্রতীক ও হাতিয়ার হিসেবে। সরকারি জমি দখল করে নির্মাণকাজ নিশ্চয়ই বেআইনি, কিন্তু তার উত্তরে যখন বেছে বেছে গোমাংস-চিহ্নিত বাড়িগুলি বুলডোজ়ারে গুঁড়িয়ে যায় তখন বুঝতে ভুল হয় না, এ আসলে কিসের জবাব, কিসের শাস্তি।

২০১৫-র উত্তরপ্রদেশে মহম্মদ আখলাকের প্রাণ গিয়েছিল ঘরে গোমাংস রাখার অপরাধে। আইন হাতে তুলে নিয়েছিল উন্মত্ত গ্রামবাসী। প্রায় এক দশক পরেও যে চিত্রটি পাল্টায়নি, দেখিয়ে দিল মধ্যপ্রদেশ। অবশ্য কিছু যে পাল্টায়নি, তা-ই বা বলা চলে কী করে— এত দিন প্ররোচিত, উন্মত্ত জনতা যে কাজ করে এসেছে, এ বার সরকার নিজেই সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য লক্ষণীয়— বিজেপি সরকার রাজ্য থেকে সব ‘উপদ্রব ও দুর্বৃত্ত’ নির্মূলে সক্ষম। গোবংশ রক্ষা বর্ষে সংখ্যালঘুরাই যে তাঁর কাছে মূর্তিমান উপদ্রব, দুর্বৃত্তেরও সমার্থক— সন্দেহের অবকাশ নেই। এই ঘটনা ঘটল কেন্দ্রে বিজেপির তৃতীয় দফার সরকার গড়ার পরে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভারতবাসী যে শিক্ষাই দিয়ে থাকুন, এই দল ও তার সরকারের চোখে যাঁরা নাগরিক নন, স্রেফ উপদ্রব ও দুর্বৃত্ত, তাঁদের ‘উচিত শিক্ষা’ যে পুলিশ আর বুলডোজ়ার দিয়েই চলবে, ফের প্রমাণিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement