Cyclones

ঝড়ের দাপট

ভারতের সুবিস্তৃত উপকূলভাগ যে প্রায়ই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হবে, এ কথা অজানা নয়। কিন্তু ভারতের পশ্চিম উপকূলের তুলনায় পূর্ব ভাগটিতে ঝড়ের সংখ্যা এবং তাণ্ডবের মাত্রা— উভয়েই কয়েক গুণ বেড়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৩৬

এই বছরেই মে মাসে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল তছনছ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকা। তার ঠিক পাঁচ মাসের মধ্যে ফের অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানল ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে। ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারার কাছে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ‘ল্যান্ডফল’ হয়েছে তার। লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনাও ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত। ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ চিত্র এখনও মেলেনি। দানা-র প্রথম মাটি স্পর্শ করার জায়গাটি ওড়িশার ভিতরকণিকা, যা একটি জাতীয় অরণ্য। বহু বিরল প্রজাতির প্রাণী, ম্যানগ্রোভ এবং অসংখ্য পাখির বাসভূমি। দুর্গম অঞ্চলের অভ্যন্তরে তারা কেমন আছে, জানতে এখনও সময় লাগবে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পরিকাঠামো, ফসল, বাড়িঘরের ক্ষতির সম্পূর্ণ চিত্র প্রকাশ হতেও সময় লাগবে। এই পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড় উপকূলবর্তী মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। ভারতের পূর্ব উপকূলে প্রতি বছর একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের আগমন এক প্রকার নিয়মে পরিণত। আশা এইটুকুই, প্রায় নির্ভুল পূর্বাভাসে প্রাণহানির সংখ্যাকে অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

ভারতের সুবিস্তৃত উপকূলভাগ যে প্রায়ই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হবে, এ কথা অজানা নয়। কিন্তু ভারতের পশ্চিম উপকূলের তুলনায় পূর্ব ভাগটিতে ঝড়ের সংখ্যা এবং তাণ্ডবের মাত্রা— উভয়েই কয়েক গুণ বেড়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে। কেন বঙ্গোপসাগরে বার বার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হচ্ছে, সে বিষয়ে নানা মত। বঙ্গোপসাগরের আকৃতি এবং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র থেকে আসা উষ্ণ জলের প্রভাবের পাশাপাশি অন্যতম কারণটি নিঃসন্দেহে বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা সত্যি হলে ঝড়ের সংখ্যা এবং দাপট আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং, পূর্ব উপকূল সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে প্রশাসনিক স্তরে ঝড় মোকাবিলার এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আশু প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ওড়িশার উদাহরণটি গ্রহণযোগ্য। বস্তুত, সেই ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোন থেকে শিক্ষা নিয়ে ওড়িশা সরকার এত বছর ধরে ঘূর্ণিঝড় সামলাতে যে শক্তপোক্ত বিজ্ঞানসম্মত পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে, তা প্রশংসনীয়। সেই পথে হাঁটা প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিরও। ইতিমধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নতি দেখা গেলেও এখনও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে দুর্বল বাঁধগুলি প্রবল দুশ্চিন্তার কারণ। স্থায়ী সাইক্লোন সেন্টারের সংখ্যাও যথেষ্ট কম, যেগুলি রয়েছে তার রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি লক্ষণীয়।

সর্বোপরি, সমস্ত রাজ্য প্রশাসনকে আগামী দিনে ‘সাইক্লোন টুরিজ়্‌ম’ বন্ধের ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগী হতে হবে। স্তম্ভিত হতে হয় প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে নিছক ঝড় দেখতে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে মানুষের উপস্থিতি দেখে। তাঁরা এখন সংখ্যায় কম হলেও আগামী দিনে তাঁদের কার্যকলাপ যে আরও বিপুল সংখ্যককে উদ্বুদ্ধ করবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং, উল্টোটাই সত্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাঁদের প্রাণরক্ষার দায়িত্ব কে নেবে? এই মাত্রার ঘূর্ণিঝড় উপভোগের বিষয় নয়, তা বহু মানুষের অপরিসীম জীবনযন্ত্রণার কারণ— এই সহজ সত্যটি এক শ্রেণির মানুষ বুঝতে না চাইলে শাস্তির পথে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement