Maternity Leave

দায়িত্ব

উচ্চ আদালতের এই নির্দেশ শিশুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের যৌথ অধিকারের উপর জোর দেয়। মনে রাখা দরকার, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও অধিকারের পাশেই থাকে দায়িত্বের প্রশ্ন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৭
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য মা ও বাবাকে সমান দায়িত্ব পালন করতে হয়, এ কথা বহু দেশে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য হলেও ভারতে এখনও নয়। সম্প্রতি একটি মামলার সূত্রে কথাটি ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। বর্তমানে এক জন মা তাঁর সন্তানের দেখাশোনার জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৭৩০ দিন ছুটি পেতে পারেন, যাকে ‘চাইল্ডকেয়ার লিভ’ আখ্যা দেওয়া হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে সেই ছুটি মাত্র ৩০ দিনের। অথচ, বর্তমান সমাজে নারী-পুরুষ উভয়েই কর্মরত, সন্তানকে বড় করে তোলার দায়িত্বটিও উভয়েরই হওয়া উচিত। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জনৈক শিক্ষক। তিনি দুই সন্তানের পিতা। গত বছর তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি সন্তানদের পরিচর্যা করতে পারছেন না, এই ছিল আবেদন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য বিচারপতির নির্দেশ, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বিষয়টি পর্যালোচনা করে রাজ্যের অর্থ দফতরের যুগ্ম সচিবকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মহিলা ও পুরুষদের সমান শিশু কল্যাণ ছুটি দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

Advertisement

উচ্চ আদালতের এই নির্দেশ শিশুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের যৌথ অধিকারের উপর জোর দেয়। মনে রাখা দরকার, অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও অধিকারের পাশেই থাকে দায়িত্বের প্রশ্ন। ভারতীয় সমাজে শিশুর ক্ষেত্রে বাবার দায়দায়িত্বকে কমিয়ে দেখার প্রবণতা প্রবল, আর সেই প্রবণতার পিছনে রয়েছে কালসঞ্চিত অনতিক্রম্য এক পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। এই মানসিকতায় শিশুর পরিচর্যাকে মনে করা হয় মূলত মায়েরই দায়, বাবার নয়। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মেয়েদের অংশগ্রহণ, উচ্চ পদে মেয়েদের প্রতিষ্ঠা— কোনও কিছুই সেই মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে পারেনি। এই পুরুষতান্ত্রিক ভাবনাধারাকে প্রশ্ন বা সংশোধন করতে হলে প্রথমেই স্বীকার করতে হবে যে, একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনার পরেই পিতার দায়দায়িত্ব মাতার থেকে কোনও অংশে কমে যায় না। আর তাই, পিতার অধিকার ও মাতার অধিকার পাশাপাশি রাখাই যে কোনও সুস্থ আধুনিক সমাজের আচরণীয় হওয়া উচিত। আদালত এই কথাটিই সমাজের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছে। পিতৃত্বের ছুটি নিয়ে পিতৃত্বের দায়টি যথাযথ ভাবে পালন করা হোক, এই দিকেই সমাজকে আর একটু এগিয়ে দিতে চেয়েছে। সে দিক থেকে দেখলে মাননীয়া বিচারপতির বক্তব্যটির গুরুত্ব অপরিমেয়। সুদূরপ্রসারীও বটে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭-র মহিলাদের ‘মেটারনিটি বেনিফিট (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছিল। সেই আইনও এই রাজ্যে সর্বত্র সমান ভাবে চালু হয়নি। বাস্তবে সন্তান পালনের ছুটির সঙ্গে মেয়েদের সংযোগটি এতই ঘনিষ্ঠ যে, অনেক অ-সরকারি প্রতিষ্ঠান মেয়েদের নিতে অনিচ্ছুক হয় শুধুমাত্র তাঁদের এত দিন ছুটি দিতে হবে— এই অজুহাতে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের চিত্রটি আরও ভয়াবহ। সেখানে নামমাত্র ছুটি পান সদ্য মা-হওয়া কর্মীরা। পিতৃত্বের ছুটি যেন এই অনাচারের ফাঁদে না পড়ে, এবং কোনও মতে মাতৃত্বের ছুটি বা মাতৃত্বের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করে, তাও দেখতে হবে। অর্থাৎ পিতৃত্বের দাবি ও অধিকার মাতৃত্বের অধিকারের পরিপন্থী না হয়ে পরস্পরের পরিপূরক ও সহায়ক হয়ে উঠুক, সেটাই কাম্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement