women compartment

নিরাপদ?

সুতরাং, নারীসুরক্ষায় সত্যই উদ্যোগী হইতে হইলে সর্বাগ্রে সর্বস্তরে ইহার গুরুত্বকে অনুধাবন করিতে হইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৯:২০

মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদানে বিশেষ উদ্যোগ করিয়াছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। রাত আটটার পর হইতে সমস্ত লোকাল ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের জন্য একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হইয়াছে। প্রয়োজনে সেই নম্বর ব্যবহার করিয়া বিপন্ন যাত্রী রেলের সুরক্ষা বলয়ের সাহায্য চাহিতে পারিবেন। ছবি, ভিডিয়ো পাঠাইতে পারিবেন, এমনকি সরাসরি ফোন করিলেও সাহায্য মিলিবে। ইহা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। রাতের ট্রেন মহিলাদের জন্য নিরাপদ নহে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা তাহার প্রমাণ। সুতরাং, রেলের পক্ষ হইতে যে সুরক্ষাব্যবস্থায় ফাঁক থাকিবার কথা স্বীকার করা হইয়াছে, এবং সেই ফাঁক মেরামতের উদ্যোগ করা হইয়াছে, তাহা আশাব্যঞ্জক। এই উদ্যোগ যাহাতে রেলের অন্য বিভাগগুলিতেও বিস্তৃত করা যায়, সেই বন্দোবস্ত আশু প্রয়োজন।

কিন্তু এই ব্যবস্থায় এত বিলম্ব কেন? প্রসঙ্গত, দিল্লি গণধর্ষণের পর ২০১৩ সালে দেশব্যাপী মেয়েদের নিরাপত্তা এবং ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করিতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ‘নির্ভয়া তহবিল’-এর সূচনা করে। প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ করা হইয়াছিল প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সালে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের উপর ভার দেওয়া হইয়াছিল তহবিলের অধীন বিবিধ প্রকল্প, যেমন— মহিলাদের অভিযোগ শুনিবার জন্য ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ গঠন, মেয়েদের জন্য হেল্পলাইন নম্বরগুলির সার্বিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় দেখাশুনার। সুতরাং, এখন দক্ষিণ-পূর্ব রেল যে উদ্যোগ করিয়াছে, তাহা বহু পূর্বেই করা যাইত। গণপরিবহণে মেয়েদের সুরক্ষার অভাবের প্রসঙ্গটি নূতন নহে। ‘নির্ভয়া’ নিজেও গণধর্ষণের শিকার হইয়াছিলেন গণপরিবহণেই। তৎসত্ত্বেও গণপরিবহণ তো বটেই, নারীসুরক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রত্যাশিত গতি আসে নাই। কারণ, বিভিন্ন রাজ্য বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগই খরচ করে নাই। কারণ হিসাবে উঠিয়া আসিয়াছে লাল ফিতার ফাঁস, অনিয়মিত বরাদ্দ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কথা। সর্বোপরি, এই তহবিলের অর্থ এমন অনেক খাতে ব্যয় করা হইয়াছে, যাহার সঙ্গে নারীসুরক্ষা ও কল্যাণের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ, নারীকল্যাণ ও নিরাপত্তার বিষয়টিকে অনেকাংশেই যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই। কেন্দ্রেও নহে, রাজ্যেও নহে।

Advertisement

সুতরাং, নারীসুরক্ষায় সত্যই উদ্যোগী হইতে হইলে সর্বাগ্রে সর্বস্তরে ইহার গুরুত্বকে অনুধাবন করিতে হইবে। বিচ্ছিন্ন ভাবে যে উদ্যোগ হইতেছে, তাহা চলুক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারকেও সামগ্রিক ভাবে একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিতে হইবে। অর্থ আছে, অথচ সদ্ব্যবহার নাই— ইহা অত্যন্ত লজ্জার। একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করিলেই, বা মহিলা থানা গড়িয়া তুলিলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হইয়া যায় না। হেল্পলাইনে ফোন করিয়াও সাড়া মিলে নাই, মহিলা থানা কার্যকর পদক্ষেপ করে নাই— এমন অভিযোগ বিস্তর। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীকে হেনস্থা হইতে হয়— মেট্রোয়, বাসে, অ্যাপ ক্যাব-চালকের হাতে। মেয়েদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। নানা ক্ষেত্রে আপত্তিজনক ‘ট্রোলিং’-এর শিকার হইতে হয় তাঁহাদের। অনেক ক্ষেত্রেই থানায় অভিযোগ জানাইয়াও প্রতিকার মেলে না। সর্বস্তরে মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হইলে বিচ্ছিন্ন উদ্যোগগুলি চমকই থাকিয়া যাইবে, বাস্তব প্রতিফলন ঘটিবে না।

আরও পড়ুন
Advertisement