Bangladesh Unrest

সুবিবেচনাই কৌশল

দেশের নানা প্রান্তে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়ি, ভাঙচুর চলেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতেও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সঙ্কট কোনও নতুন বিষয় নয়, বিগত দশকগুলিতে তার যথেষ্ট প্রমাণ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:২৭

অশান্তি অব্যাহত বাংলাদেশে। তার পরিমাণ, ধরন ও বিস্তার নিয়ে তর্কবিতর্ক থাকতেই পারে, তবে স্পষ্টতই, পরিস্থিতি এত অস্থির, বহু মানুষের পক্ষে এত অনিরাপদ যে সে দেশ থেকে ভারতে আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় ক্রমাগত বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে। গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। ইউনূস-পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি বদলায়নি, এমনকি উত্তরোত্তর লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থানে। দেশের নানা প্রান্তে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়ি, ভাঙচুর চলেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতেও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সঙ্কট কোনও নতুন বিষয় নয়, বিগত দশকগুলিতে তার যথেষ্ট প্রমাণ। কিন্তু উনিশশো একাত্তরের পর এই সঙ্কট এত ব্যাপক আকার ধারণ করল এই বারেই।

Advertisement

দিল্লির বিপন্নতা অনুমেয়। গত অগস্ট থেকে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। অনুপ্রবেশ আটকাতে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সাহায্য নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিরও। সীমান্তের গেটগুলিতে বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক লক। সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বসেছে অতিরিক্ত ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরা। দিনের পাশাপাশি রাতেও চলছে বাড়তি নজরদারি। তৎসত্ত্বেও সীমান্তের কাঁটাতারহীন এলাকাগুলি চিন্তায় রেখেছে সীমান্ত বাহিনীকে। প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের ১৯৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে দশ শতাংশ কাঁটাতারবিহীন। এই মুহূর্তে একাধিক স্থানে নতুন করে কাঁটাতার স্থাপন বা পুরনো বেড়া মজবুত করার কাজ চলছে। এর পাশাপাশি কূটনীতির উপরও জোর দিচ্ছে দিল্লি। সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার বিষয়ে ঢাকা-র আরও সক্রিয় ভূমিকা চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এখনও পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রেখে চাপ বাড়ানোর পক্ষে তারা। লক্ষণীয়, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিজেপির নেতারা কিন্তু কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের থেকে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। তাঁদের সমর্থক জনগোষ্ঠীর মনোবাঞ্ছা আন্দাজ করে শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা তীব্র ভাষায় উস্কানিমূলক বার্তা দিচ্ছেন। অর্থাৎ বিজেপির দলীয় অবস্থান এবং কেন্দ্রীয় সরকারি অবস্থানের মধ্যে একটা ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। প্রথম পক্ষ উত্তাপের আঁচে রাজনৈতিক লাভের আশায় উত্তাপ বাড়ানোয় উৎসাহী। দ্বিতীয় পক্ষ, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে ভারত সঙ্কটে পড়বে অনুমান করে উত্তাপ কমিয়ে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। সীমান্তের ওপারে হিন্দু সংখ্যালঘুর নিপীড়ন এপারে বিজেপির দলীয় রাজনীতিকে বাড়তি ইন্ধন দেবে ঠিকই, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে তা বিষম উদ্বেগের কারণ। প্রথম উদ্বেগ— নতুন উদ্বাস্তু স্রোত বিষয়ক। উপরন্তু, আশ্রয়সন্ধানী উদ্বাস্তুদের ভিড়ে দুষ্কৃতী বা জঙ্গি চলাচল বাড়তে পারে। সীমান্ত অঞ্চলে অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনিতেই মণিপুরে জাতিদাঙ্গার সূত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক হতে হচ্ছে। এখন আবার নতুন চাপে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা সীমান্তে বাড়তি জটিলতা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত। সরকার ও দলের এই দ্বিধান্বিত পরিস্থিতি, বিজেপিকে নিশ্চয়ই চিন্তায় রাখছে।

অপর দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপের দাবি তুলতে দেখা গেল। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হাওয়াটি কাড়ার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু তাঁরও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, একটি সার্বভৌম প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ভারতের অযাচিত ‘হস্তক্ষেপ’, কৌশল হিসাবে একান্ত বর্জনীয়। মমতা তো কেবল তৃণমূল নেত্রী নন, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক মন্দ হলে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গই ভুগবে সবচেয়ে বেশি। এই সঙ্কটাবর্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গকে সুরক্ষা দিতে চাইলে আরও অনেক সংযম ও সুবিবেচনা তাঁর কাছে প্রত্যাশিত।

Advertisement
আরও পড়ুন