KGP IIT

আধিপত্যবাদ

শিক্ষকদের একটি সংগঠন কয়েক মাস আগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের কিছু কার্যকলাপের সমালোচনা করে এবং তার প্রতিকার চেয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫২

দেশের প্রথম আইআইটি তার তিয়াত্তর বছর বয়সেও প্রযুক্তিবিদ্যার চর্চায় আপন উৎকর্ষের কারণে সম্মানিত, সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক গবেষক ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য মাঝে মাঝেই সংবাদ হয়ে ওঠে। কিন্তু খড়্গপুরের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অধুনা যে কারণে সংবাদের বিষয় হয়েছে, তা আনন্দের নয়, উদ্বেগের কারণ। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের একটি সংগঠন কয়েক মাস আগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের কিছু কার্যকলাপের সমালোচনা করে এবং তার প্রতিকার চেয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রককে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের প্রধান অভিযোগ ছিল এই যে, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আইআইটি কর্তৃপক্ষ নিয়ম অবং নীতি অমান্য করে যথেচ্ছ স্বজনপোষণ করছেন। অভিযোগের সত্যাসত্য নির্ধারণ এবং প্রতিকারের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রকের আগ্রহের কোনও প্রমাণ মেলেনি, উল্টে আইআইটি কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিবাদীদের কাছে এই সব অভিযোগের প্রমাণ তথা কৈফিয়ত চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠান এবং সন্তোষজনক উত্তর না পেলে কার্যত শাস্তির হুমকি দেন। অতঃপর শিক্ষক সংগঠনের কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বহু শিক্ষক এই দমন নীতির প্রতিবাদ করলে তাঁদের বিরুদ্ধেও নোটিস জারি করা হয়। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পরিচালন পর্ষদ বা বোর্ডের কর্ণধারের কাছে গোটা ব্যাপারটি জানিয়ে প্রতিকারের আবেদন পাঠিয়েছিলেন। তিনি যথাবিহিত বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং কারণ দর্শানোর সময়সীমা ঈষৎ সম্প্রসারিত করেছেন। কিন্তু শুরু থেকে এখনও অবধি তাঁদের পাল্টা বক্তব্য একটাই: শিক্ষকদের একটি ক্ষুদ্র অংশের এই শোরগোলের ফলে সমাজের চোখে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অর্থাৎ, টানাপড়েন অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতে তা ঘোরতর আকার ধারণ করতে পারে।

Advertisement

বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী শিক্ষকরা যে সব অভিযোগ করেছেন, সেগুলি ঠিক কতটা যথাযথ, তার মধ্যে অতিরঞ্জন আছে কি না, তাঁরা কোনও স্বার্থগোষ্ঠীর অংশীদার বা প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলছেন কি না, এই প্রশ্নগুলি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু তার সদুত্তর খোঁজার সুস্থ ও স্বাভাবিক উপায় একটিই: অবাধ ও আন্তরিক কথোপকথন। যে কোনও পরিসরেই মতানৈক্য বা বিরোধ দূর করার জন্য খোলামেলা আলোচনার বিকল্প নেই, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কথাটি বিশেষ ভাবে সত্য। সমস্যা হল, এই প্রতিষ্ঠানটিতে দৃশ্যত সেই আলোচনার পরিবেশ সম্পূর্ণ অন্তর্হিত হয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের ক্ষোভের কথা এবং প্রতিকারের দাবি জানিয়ে এসেছেন, কিন্তু কোনও ফল হয়নি, সেই কারণেই শেষ অবধি সমস্যার কথা সরকারের কাছে এবং বৃহত্তর সামাজিক পরিসরে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের পরবর্তী দমনমূলক আচরণই জানিয়ে দেয়, শিক্ষকদের এই বক্তব্য অহেতুক নয়।

এমন আচরণের মূলে যে ব্যাধি, তা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানে সীমিত নয়। বহু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কথায় এবং কাজে তার দুর্লক্ষণ ক্রমাগত প্রকট হয়ে চলেছে। সেই ব্যাধির নাম অসহিষ্ণু একাধিপত্যবাদ। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যও এই বিপদ থেকে মুক্ত নয়, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে তার প্রকোপ ভয়াবহ হয়েছে। শাসকরা নিজেদের পছন্দসই লোকজনকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাথায় বসাবেন এবং তাঁরা সেখানে যথেচ্ছাচার চালাবেন, কোনও প্রতিকার হবে না— এমনটাই এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে শিক্ষার সর্বনাশ হয়, প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষ ও সম্মান বিনষ্ট হয়। বলা বাহুল্য, এই অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হানি ঘটে না, হৃতমর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্যই প্রতিবাদ জরুরি।

Advertisement
আরও পড়ুন