Gautam Adani In Bribery Case

গুরুত্ব কোথায়

আদানি গোষ্ঠী কোনও সাধারণ শিল্পগোষ্ঠী নয়— নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গত দশ বছরে আদানি গোষ্ঠী ভারতের ভূ-কৌশলগত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য ও প্রধানতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:০৬

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ও সিকিয়োরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যে অভিযোগ এনেছে, তাতে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার উদ্বেগের কারণ একাধিক। প্রথমত, আদানি গোষ্ঠী কোনও সাধারণ শিল্পগোষ্ঠী নয়— নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গত দশ বছরে আদানি গোষ্ঠী ভারতের ভূ-কৌশলগত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য ও প্রধানতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে। নীতিগত ঘোষণা না হলেও বারে বারেই শোনা গিয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার যে ভঙ্গিতে নিজেদের দেশজ বাণিজ্যিক সংস্থার বিশ্বায়নে সহায়ক হয়েছিল, আদানি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঠিক সেই ভূমিকাই পালন করছে। প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন বিদেশ সফরে সঙ্গী হয়েছেন গৌতম আদানি। অতীতে একাধিক বার দেখা গিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের পরে, অথবা কোনও বৈদেশিক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পরে সেই দেশে আদানি গোষ্ঠীর কোনও তাৎপর্যপূর্ণ লগ্নির রাস্তা খুলেছে। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার এক উচ্চপদস্থ আমলা অভিযোগ করেছিলেন যে, আদানি গোষ্ঠীকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের একটি বরাত দেওয়ার জন্য ভারত সরকার তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগটি অস্বীকার করেছিল; শ্রীলঙ্কাতেও ভারতের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে তার পর, ফলে অভিযোগটি নিয়ে বিশেষ কিছু হয়নি। কিন্তু, অভিযোগ যে ছিল, সে কথা অনস্বীকার্য। আজ এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমেরিকার এমন গুরুতর অভিযোগের পরে প্রধানমন্ত্রীর মৌনকে বড়ই বাঙ্ময় মনে হওয়া স্বাভাবিক।

Advertisement

দ্বিতীয় কথা হল, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বহু বার আন্তর্জাতিক অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগটি বহুচর্চিত। সম্প্রতি কেনিয়ায় জোমো কেনিয়াটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের বরাত বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশে আদানি গোষ্ঠীর থেকে বিদ্যুৎ কেনার বরাতটি নিয়ে তদন্ত আরম্ভ হয়েছে। দেশের মাটিতেও বারে বারেই অভিযোগ উঠেছে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। মোট কথা, ভারতের ক্রোনি ক্যাপিটালিজ়ম বা সাঙাততন্ত্রের মুখ হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আদানি গোষ্ঠীর কুখ্যাতি যথেষ্ট। সেই গোষ্ঠীকেই কেন্দ্রীয় সরকার ‘ভারতীয় পুঁজির মুখ’ হিসাবে দেখাতে চাইলে তা ভারতের ভাবমূর্তিরই ক্ষতি করে। অন্য দিকে, আদানি গোষ্ঠীর বৈদেশিক লগ্নির সিংহভাগ হয়েছে বিদেশেরই টাকায়। বস্তুত, আদানি গ্রিন নামক সংস্থাটি আমেরিকায় নথিভুক্ত, এবং সে দেশের বাজার থেকে টাকা তুলেছে বলেই আমেরিকা সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জায়গায় রয়েছে। চিনা সংস্থাগুলির বিশ্বায়নের উদাহরণ দেখলে পার্থক্যটি স্পষ্ট হয়— সে সংস্থাগুলির বিস্তার বিদেশি পুঁজির উপরে নির্ভর করে ঘটেনি। আদানি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ঘটছে, ফলে তার লগ্নিতে অনিশ্চয়তা বেশি। সেই অনিশ্চয়তার দায় ভারতের ভাবমূর্তির উপরেও বর্তাবে— কারণ, দেশের কর্তারা আদানিকেই ভারতের মুখ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে সে ব্যবস্থা পাকা করে রেখেছেন।

আমেরিকার অভিযোগে সারবত্তা আছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। আদানি গোষ্ঠীকে রক্ষা করতে সরকার কতখানি বেড়ে খেলবে, সে উত্তরও সময়ই দেবে। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় জানিয়েছেন যে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া অবধি তাঁকে নির্দোষ হিসাবে গণ্য করাই বিধেয়। ভারতে বিজেপির চলন সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলেই বোঝা সম্ভব, এমন অবস্থান তাদের সমগ্র অস্তিত্বের পরিপন্থী— অবশ্য, বিরোধীদের ক্ষেত্রে। আদানির ক্ষেত্রে এমন উদারবাদী অবস্থান দেখে সংশয় হতে পারে যে, দেশের কর্ণধারদের কাছে সংস্থাটি হয়তো একটি বাণিজ্যিক সংস্থার চেয়ে ঢের বেশি কিছু। সে কারণেই, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমেরিকার অভিযোগ ভারতীয় অর্থব্যবস্থার পক্ষে অতি তাৎপর্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন
Advertisement