Quick Commerce

সুরক্ষার শর্ত

ভাবনায় শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি। কিছু ই-বাণিজ্য সংস্থা নাকি বলেছে যে, কোনও শ্রমিকের জন্য এ ধরনের তহবিলে টাকা তখনই দেওয়া যাবে, যখন সেই শ্রমিক আগের বছরে অন্তত ৯০ দিন সেই সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভারতে সবচেয়ে দ্রুত কর্মসংস্থান হচ্ছে কোন ক্ষেত্রটিতে, এই প্রশ্নের একটি সম্ভাব্য উত্তর হল গিগ অর্থনীতি। ই-কমার্স এবং কিউ-কমার্সের বাণিজ্যের বহর বাড়ছে; একই সঙ্গে বাড়ছে অ্যাপ ক্যাবের মতো ইন্টারনেট-নির্ভর পরিষেবাও। ২০২০-২১ সালে দেশে গিগ অর্থনীতিতে নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষের কাছাকাছি। একটি হিসাব বলছে, দশক শেষ হওয়ার আগেই সেই সংখ্যাটি পৌঁছে যাবে আড়াই কোটিতে। অর্থাৎ, ক্ষেত্রটিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বছরে সাড়ে তেরো শতাংশের বেশি। অথচ, সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের মধ্যবর্তী এক ধূসর পরিসরে এই ক্ষেত্রের শ্রমিকরা অবস্থিত, অতি সাম্প্রতিক কাল অবধি তাঁদের নিয়ে রাষ্ট্রের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা ছিল না। বিভিন্ন অ-বিজেপিশাসিত রাজ্যে গিগ ওয়ার্কারদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা হওয়ার পরে সম্ভবত কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে— এই ভোটব্যাঙ্কটি নেহাত ফেলনা নয়— এবং, কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এঁদের জন্য বিমা ও পেনশনের সুরক্ষার তহবিল গঠন করা হবে। সেই উদ্দেশ্যে কমিটি গঠিত হয়েছে— সরকারি সূত্রের খবর যে, অনলাইন বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও হচ্ছে। উদ্যোগটিকে স্বাগত জানানো বিধেয়। গিগ শ্রমিকরা এমন বাজারে কাজ করেন, যেখানে চাকরির কোনও সুরক্ষা নেই— তাতে আপত্তি করারও প্রয়োজন নেই, কারণ এমন শ্রমের বাজারই দ্রুততম আর্থিক উন্নতির পক্ষে অনুকূল। কিন্তু, এই শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। কাজ হারালেই যাতে কাউকে পথে না বসতে হয়, পরের কাজটি খুঁজে নেওয়ার মতো রসদ যেন থাকে, তা নিশ্চিত করা কাজের বাজারের নমনীয়তার স্বার্থেই জরুরি।

Advertisement

ভাবনায় শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি। কিছু ই-বাণিজ্য সংস্থা নাকি বলেছে যে, কোনও শ্রমিকের জন্য এ ধরনের তহবিলে টাকা তখনই দেওয়া যাবে, যখন সেই শ্রমিক আগের বছরে অন্তত ৯০ দিন সেই সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। শ্রমিক সংগঠন আপত্তি জানিয়ে বলেছে যে, এক জন গিগ শ্রমিক একাধিক সংস্থায় কাজ করেন, অনেক ক্ষেত্রে একই সঙ্গে একাধিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ফলে, তাঁদের উপরে ন্যূনতম নিরবচ্ছিন্ন তিন মাসের কাজের শর্ত আরোপ করা চলবে না। এই যুক্তি স্বীকার না-করে উপায় নেই। শ্রমের বাজারের নমনীয়তা একপাক্ষিক নয়— সংস্থার যেমন অধিকার আছে প্রয়োজন অনুসারে শ্রমিক নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের, অথবা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করার, ঠিক তেমনই শ্রমিকেরও অধিকার রয়েছে যে-কোনও সংস্থায় যে-কোনও ভাবে কাজ করার। তাঁদের কোনও একটি সংস্থার সঙ্গে অন্তত তিন মাস যুক্ত থাকতেই হবে, সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থাকে এমন শর্তাধীন করা খোলা বাজারের নিয়মের পরিপন্থী। অপ্রয়োজনীয়ও বটে। এই ডিজিটাল যুগে কোনও শ্রমিককে চিহ্নিত করতে তাঁর নিয়োগকর্তা সংস্থার প্রয়োজন পড়ে না, একটি পরিচয়জ্ঞাপক নম্বরই যথেষ্ট। বস্তুত, সংগঠিত ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ইউএএন আছে— কোনও কর্মী এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে গেলেও এই নম্বরটি অব্যাহত থাকে, তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডও। গিগ শ্রমিকদের জন্য এমন একটি ব্যবস্থা না-করতে পারার কোনও কারণ নেই। তার জন্য শুধু সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন
Advertisement