Science Index

শ্রেষ্ঠ আসন?

প্রথম একশোয় স্থান পেয়েছে ভারতের কলকাতা, বেঙ্গালুরু ও মুম্বই, যথাক্রমে ৮৪, ৮৫ ও ৯৮ নম্বরে; ১২৪ নম্বরে আছে দিল্লিও। এই ভারতীয় শহরগুলি এর আগেও স্থান পেয়েছিল এই তালিকায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫১

বিশ্বের বড় বড় শহর ও ‘মেট্রোপলিটন এরিয়া’র বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষকরা কেমন কাজ করছেন, কত সংখ্যক এবং কত উচ্চমার্গের বিজ্ঞান-বিষয়ক পেপার প্রকাশিত হচ্ছে তাঁদের— সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি বছর বিশ্বের সেরা দু’শো বিজ্ঞান-নগরীর তালিকা প্রকাশ করে ‘সায়েন্স ইন্ডেক্স’। গত বছরের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি তালিকাটি প্রকাশ পেল সম্প্রতি— সেখানেই দেখা গেল, প্রথম একশোয় স্থান পেয়েছে ভারতের কলকাতা, বেঙ্গালুরু ও মুম্বই, যথাক্রমে ৮৪, ৮৫ ও ৯৮ নম্বরে; ১২৪ নম্বরে আছে দিল্লিও। এই ভারতীয় শহরগুলি এর আগেও স্থান পেয়েছিল এই তালিকায়, কোভিডধ্বস্ত ২০২০ সালেও বেঙ্গালুরু ও কলকাতা ছিল একশোর মধ্যে। তবে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চিন: এ বারের তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় সেরা শহর বেজিং ও শাংহাই, প্রথম কুড়ির মধ্যে দশটিই চিনের। নিউ ইয়র্ক, বস্টন, সান ফ্রান্সিসকো, বাল্টিমোর, টোকিয়ো, প্যারিস, সোল, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগোও আছে প্রথম কুড়িতে।

Advertisement

চিন এক বিরল ও প্রবল ব্যতিক্রম: অ্যাথলেটিক্স থেকে বিজ্ঞান, বুলেট ট্রেন থেকে নগর-পরিকল্পনা, সব কিছুতেই সেরার শিরোপা পেতে তাদের সরকার স্থিরলক্ষ্য ও দরাজ। অন্য শহরগুলির নাম ও মানচিত্রের অবস্থান দেখলেও বোঝা যাবে, সেরা বিজ্ঞান-নগরী তালিকায় তারাই উপরের দিকে, রাষ্ট্রীয় ভাবে যাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পরিকাঠামো নির্বিকল্প। আবার শহরের নাগরিক পরিকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা যে বিজ্ঞান-গবেষণার কাজে ছাপ ফেলতে পারে তাও প্রমাণিত; ‘নেচার ইন্ডেক্স’ কর্তৃপক্ষ উদাহরণ দিয়েছেন সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া-য় অস্বাভাবিক বেশি বাড়িভাড়া বা খরচের, গবেষকরা সেই ভাড়া গুনতে অপারগ হলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের সরে যেতে হবে অন্যত্র, তার জেরেও একটি বড় শহরের ‘ক্রমাবনতি’ ঘটতেই পারে! আবার তথাকথিত ছোট অনেক চিনা শহর যে এ বছর তালিকায় ঈর্ষণীয় স্থানে তার কারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক-একটি বিশেষ ক্ষেত্র ধরে ধরে এক-একটি শহর বা অঞ্চলকে তৈরি করা হচ্ছে বিশ্বমানের।

এই যেখানে সার্বিক চিত্রটি, তার পাশে প্রথম একশোর মধ্যে বেঙ্গালুরু ও বিশেষ করে কলকাতার স্থান পাওয়া, উপরন্তু সেই গৌরব ধরে রাখতে পারার ধারাবাহিকতাকে প্রশংসা না করে উপায় নেই। বিজ্ঞান-গবেষণার পরিকাঠামো, উন্নত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতা থেকে শুরু করে গবেষকদের আর্থিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা— কোনও দিক থেকেই কলকাতার ছবিটি অত্যুজ্জ্বল কি? রাজ্য বা কেন্দ্র, কোনও সরকারেরই এ বিষয়ে ভাবনা বা আগ্রহের প্রমাণ মেলে না, বিজ্ঞানে বরাদ্দ-হ্রাস ও বহুবিধ অব্যবস্থা নিয়ে এ শহর, রাজ্য ও দেশেরও বিজ্ঞান-মহল সরব বহুকাল। শাসকদের রাজনৈতিক মতাদর্শও আর কোনও দেশে জ্ঞান-চর্চায় এমন দুস্তর বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না, সে কথাটিও ভাববার। এত কিছু সহ্য করেও কলকাতা যে সেরা দু’শো বিজ্ঞান-নগরীর মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে, তার কৃতিত্ব একান্ত ভাবেই এই বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরই: এ তাঁদের মেধা, প্রতিভা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়েরই জয়, সরকার ও রাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে গৌণ। এর পরেও যদি রাষ্ট্রের ঘুম না ভাঙে, তবে তা হবে আরও দুর্ভাগ্যের। বিজ্ঞান-চর্চার সুযোগ মানে যে স্রেফ এআই-এর পাঠক্রম খুলে দেওয়া নয়, বিজ্ঞান-গবেষণা ও গবেষক উভয়েরই সামগ্রিক ও সযত্ন লালন, বুঝতে হবে সবার আগে।

Advertisement
আরও পড়ুন