Tuberculosis

প্রাদুর্ভাব

এমডিআর-টিবির সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি, প্রায় ২৭ লক্ষ। প্রসঙ্গত, এ দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীকে নিখরচায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:২৪
নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে যক্ষ্মা।

নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে যক্ষ্মা। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে যক্ষ্মা। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ২০২৪-এর যক্ষ্মা রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে ২০২৩ সালে আশি লক্ষেরও বেশি মানুষ নতুন করে এই রোগের শিকার হয়েছেন, যা ১৯৯৭ সালে এই রিপোর্ট চালু হওয়ার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। গত তিন বছরে করোনাকেই সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধি বলে মনে করা হত। এ বার তাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে যক্ষ্মা, এমনটাই আশঙ্কা হু-র। এ দিকে, ২০২৩ সালে ভারতে যক্ষ্মার আনুমানিক সংখ্যা সামান্য কমলেও, রোগের নথিভুক্তিকরণের সংখ্যা বেড়েছে, রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে যা এক ইতিবাচক ফল। শুধু তা-ই নয়, কার্যকর রোগ নির্ণয়ের সুবিধার কারণেই হয়তো গত আট বছরে এই রোগের প্রকোপের হার ১৮ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া, নতুন ধরনের চিকিৎসাপ্রক্রিয়ার সাহায্যে প্রচলিত ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মার (এমডিআর-টিবি) ক্ষেত্রেও কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছে সরকার।

Advertisement

তবে কিছু সাফল্য অর্জন করা গেলেও, বিভিন্ন সমীক্ষায় স্পষ্ট যে, ২০২৫ সালে যক্ষ্মামুক্ত ভারতের যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছিল, তা পূরণ হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরে বিশ্বের মোট যক্ষ্মা সংক্রমণের ২৬ শতাংশই হয়েছে ভারতে, যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। এমডিআর-টিবির সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি, প্রায় ২৭ লক্ষ। প্রসঙ্গত, এ দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীকে নিখরচায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও, যক্ষ্মা আক্রান্ত বহু পরিবারকেই ভুগতে হচ্ছে সাধ্যাতীত খরচের ধাক্কায়, যাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘ক্যাটাস্ট্রফিক হেলথ কস্ট’ হিসাবে। প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, যক্ষ্মা চিকিৎসার জন্য রোগীর পরিবারের খরচ যদি তার বাৎসরিক আয়ের কুড়ি শতাংশের বেশি হয়, তা হলে তাকে ‘ক্যাটাস্ট্রফিক হেলথ কস্ট’ বলা যায়। আর্থিক সুযোগসুবিধার অভাব, সীমিত স্বাস্থ্য পরিষেবা, খারাপ নিকাশি ব্যবস্থা, ঘিঞ্জি জীবনযাত্রা এবং ডায়াবিটিস ও এইচআইভি-র মতো রোগ এ দেশে যক্ষ্মার মতো মারণরোগ নির্মূলের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তা ছাড়া ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান দেওয়ার লক্ষ্যে ‘নি-ক্ষয় পোষণ যোজনা’-র অন্তর্গত রোগীপিছু প্রতি মাসে যে ৫০০ টাকা করে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্র, তা সম্প্রতি বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দরিদ্র পরিবারগুলির পক্ষে এই অর্থও যথেষ্ট কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আক্রান্তের পরিবারের রোগজনিত খরচ ন্যূনতম পর্যায়ে বা শূন্যে নামিয়ে আনতে তাই প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে ভাবতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে এই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সর্বাধিক প্রয়োজন, সেগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর উপরে জোর দিতে হবে। যক্ষ্মা, বিশেষত এমডিআর-টিবি’র নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এই রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া যক্ষ্মা-র বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা যে সম্ভব নয়, সরকার তা যত তাড়াতাড়ি বোঝে ততই মঙ্গল।

আরও পড়ুন
Advertisement