Mid Day Meal

আনন্দযজ্ঞে

এ রাজ্যের বহু অপ্রাপ্তি, বহু ঘাটতির মধ্যে যদি কোনও আশার বার্তা থাকে, তবে তা এই, শিক্ষকদের একাংশের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের প্রাণের গভীর সংযোগ এখনও রয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:২৬
Mid day Meal

মিড ডে মিল। —ফাইল চিত্র।

শিশুদিবসে রাজ্যের কয়েকটি স্কুলে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা হল ছাত্রছাত্রীদের জন্য। এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রথমত, মিড-ডে মিল কর্তৃপক্ষ বেছে নিয়েছিলেন সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার বিরানব্বইটি স্কুলকে। দ্বিতীয়ত, এই বিশেষ ভোজের জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তা নেওয়া হয়েছিল। তৃতীয়ত, রাজ্যের নানা স্কুলে আনন্দভোজের উদ্যোগ শিক্ষক-শিক্ষিকারাই করেছিলেন, এবং আমন্ত্রণ করেছিলেন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরও। বর্তমানে প্রি-প্রাইমারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা স্কুলে মধ্যাহ্নভোজন পায়। কিন্তু উৎসবের দিনে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের আনন্দভোজ থেকে দূরে রাখতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা নিজেরা চাঁদা তুলে স্কুলের সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীকে খাইয়েছেন। এ অবশ্য ব্যতিক্রম নয়— যথাযথ ক্যালরিযুক্ত খাবার দিতে গিয়ে অনেক স্কুলেই বাজেট ঘাটতি পূরণ হয় শিক্ষকদের পকেট থেকে। বর্তমানে মিড-ডে মিলের জন্য পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ পড়ুয়া-পিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ ৮ টাকা ১৭ পয়সা। মিড-ডে মিলের বরাদ্দে সর্বশেষ বৃদ্ধি হয়েছিল ২০২২ সালে, ইতিমধ্যে বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে রান্নার সব উপকরণের দাম। কেবল ডিমের জন্যই যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে (সাড়ে ছ’টাকা), তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ডিমের বাজারমূল্য।

Advertisement

এ রাজ্যের বহু অপ্রাপ্তি, বহু ঘাটতির মধ্যে যদি কোনও আশার বার্তা থাকে, তবে তা এই, শিক্ষকদের একাংশের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের প্রাণের গভীর সংযোগ এখনও রয়েছে। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-কলতানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিতৃপ্তি লাভ করেন। তবু আফসোস থেকেই যায়। রাজ্যে সত্তর হাজারেরও বেশি স্কুল রয়েছে, অধিকাংশ স্কুলেই দরিদ্র, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানই বেশি। তদুপরি, এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া কেবল খিদে মেটানোর, পুষ্টিবিধানের উপায়ই নয়, তা সামাজিক বন্ধন তৈরিরও উপায়। সেই আনন্দযজ্ঞে বহু শিশু ব্রাত্য যে রয়ে গেল, সেই বেদনা স্পর্শ না করে পারে না। প্রশ্ন উঠবে, এতগুলি শিশুর মাংস-মিষ্টি খাওয়ার বাড়তি খরচের ভার রাজকোষ বহন করবে কী করে? তার উত্তর— সরকারি অর্থ বরাদ্দের বাইরেও বাণিজ্যিক সংস্থার সহায়তা গ্রহণের যে দৃষ্টান্তটি গ্রহণ করেছেন মিড-ডে মিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, তা অনুসরণযোগ্য। সরকারি প্রকল্পে সমাজের এই অংশীদারির প্রয়োজন কেবল রাজকোষের অর্থ বাঁচানোর জন্য নয়। উন্নয়নে শামিল হওয়ার সুযোগ, বিশেষত শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য কিছু করতে পারার সুযোগ, অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানই খোঁজেন। সরকারি বিধি-নিয়মের নানা জটিলতায় সব সময়ে তা সম্ভব হয় না। শিশুদিবস দেখাল, চাইলে নিয়ম নমনীয় করা যায়।

এর আগে বেশ কিছু প্রকল্পে এমন অংশীদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থাগুলির তহবিল থেকে স্কুলগুলিতে শৌচাগার এবং পানীয় জলের পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল। অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে স্কুলের সংযোগ তৈরি করেছেন। পারিবারিক উৎসব উপলক্ষে অনেকেই স্কুলের শিশুদের নানা সুখাদ্য পরিবেশন করে তৃপ্তি লাভ করেন। অতএব মিড-ডে মিলের জন্য বাণিজ্যিক সংস্থা, বিবিধ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, অথবা দানশীল ব্যক্তির অনুদান গ্রহণ করা অসঙ্গত নয়। তবে এই সামাজিক দান কোনও ভাবেই সরকারের দায়বদ্ধতা কমায় না। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মিড-ডে মিলের বরাদ্দও বাড়ানো দরকার, যাতে শিশুদের থালায় প্রতি দিন যথেষ্ট প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার দিতে পারা যায়। খাদ্যের অধিকার মানে সুষম খাদ্যের অধিকার। সব শিশুর পাতে ডাল, ডিম, তরি-তরকারি তুলে দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে, নবম-দশম, এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতেও মিড-ডে মিলের প্রসার দরকার। কী ভাবে তা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে আরও উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োজন।

আরও পড়ুন
Advertisement