Name Profile

নামভূমিকায়: তুলসী গ্যাবার্ড

ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসির বর্ণনায় ‘উদীয়মান তারা’। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পছন্দে গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষে ‘হিন্দু-আমেরিকান’ তুলসী গ্যাবার্ড।

Advertisement
সৌরজিৎ দাস
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
তুলসী গ্যাবার্ড।

তুলসী গ্যাবার্ড।

এক সময় হিলারি ক্লিন্টন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন— তিনি রুশদের কাছে প্রশিক্ষিত হয়েছেন। সম্প্রতি সেই ব্যক্তিকেই দেশের নিরাপত্তার শীর্ষে বসালেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি, তুলসী গ্যাবার্ড। তাঁর নিযুক্তি সেনেট-এর দ্বারা সম্মত হলে গ্যাবার্ড সিআইএ এবং এফবিআই-সহ আঠারোটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষে বসবেন, যদিও তাঁর নিযুক্তিতে দেশীয় তথা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা মহলে চিন্তা, আশঙ্কা ও জল্পনা তুঙ্গে।

Advertisement

কে এই তুলসী গ্যাবার্ড? ১৯৮১ সালে জন্ম। পিতা মাইক গ্যাবার্ড ছিলেন স্টেট সেনেটর, যিনি প্রথমে রিপাবলিকান হিসাবে নির্বাচিত হলেও পরে দল বদল করেন। মা হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায়, মেয়ের নাম রাখেন ‘তুলসী’। ইসকন-এর সঙ্গে পরিবারগত ভাবে যুক্ত তিনি, তাঁর ভজনের ভিডিয়ো নিয়ে এখন আমেরিকান সমাজ তোলপাড়।

২০০২ সালে, ২১ বছর বয়সে রাজনীতির পথে পা বাড়ান তুলসী। হাওয়াই-এর স্টেট লেজিসলেচার-এ সর্বকনিষ্ঠ মহিলা হিসাবে নির্বাচিত হন। এ দিকে দেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুন মাত্র একটি পর্বের পরেই পদ ছাড়তে হয় তাঁকে। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে তাঁর ইউনিট-কে ইরাকে মোতায়েন করা হয়েছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত হাওয়াই ন্যাশনাল গার্ড-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় সেনাবাহিনীতে। এখন তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে। এ দিকে, ২০০৯ সালে পশ্চিম এশিয়া থেকে তাঁর দ্বিতীয় সামরিক অভিযানের পরে ফিরে আসেন রাজনীতিতে। ২০১২ সালে হাওয়াই থেকে আমেরিকার হাউস অব রিপ্রেজ়েনটেটিভস-এ নির্বাচিত হন।হাউসের প্রথম হিন্দু সদস্য হিসাবে তিনি শপথ নেন ভগবদ্‌গীতায় হাত রেখে।২০১৩-২১— হাউসে তিনি ছিলেন ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য।

এক সময় ডেমোক্র্যাটদের প্রবীণ নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি তাঁকে বলেছিলেন দলের ‘উদীয়মান তারা’। তবে তাঁর অবস্থান বরাবরই দলের ধারার বিপরীতে থেকেছে। বিশেষত, বিদেশনীতি নিয়ে তাঁর ধ্যানধারণা অনেক ক্ষেত্রেই দলে উষ্মার উদ্রেক ঘটিয়েছে। ২০১৫ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ-এর বিরোধীদের সমর্থনের জন্য তিনি তৎকালীন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ওবামা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, সিরিয়ার মানুষকেই নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে দেওয়া উচিত। এমনকি ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সি-কালে সরকারের বহু পদক্ষেপের বিরোধী ছিলেন তুলসী। ২০২০ সালে ইরাকে আমেরিকার বিমানহানায় ইরানের প্রথম সারির সামরিক জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হওয়ার পর তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্প সরকার আমেরিকাকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পথে ঠেলে দিচ্ছে।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স-এর সমর্থন তাঁর ভাবমূর্তিকে জাতীয় স্তরে উন্নীত করতে সাহায্য করেছিল। ২০২০-তে তিনি নিজেও প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে যোগ দেন। ভোটের প্রচারে নিজের সামরিক অভিজ্ঞতার কথা টেনে দাবি করেন, পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে আমেরিকা যুক্ত হওয়ায় সেখানে শুধু আঞ্চলিক অস্থিরতা বাড়েনি, আমেরিকার নিজের নিরাপত্তাও বিপন্ন হয়েছে। তিনি নিজের দলকেই ভর্ৎসনা করেন এই সব যুদ্ধের বিরোধিতা না করার জন্য। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদের লড়াই থেকে তিনি সরে দাঁড়ান, বাইডেনকে সমর্থন করেন।

এর দু’বছর পরে দল থেকেই সরে দাঁড়ান। বলেন, ডেমোক্র্যাটদের দলটি যুদ্ধবাজদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বলেন, সব বিষয়ের সঙ্গে বর্ণবাদকে যুক্ত করে দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে তাঁর পার্টি। একই সঙ্গে উস্কে দিচ্ছে শ্বেতাঙ্গবিরোধী মানসিকতাও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের থেকে তিনি বেশি দোষ দেন নেটো-কে। এবং তার সঙ্গে, বাইডেন প্রশাসনের বিবিধ পদক্ষেপকে।

গত অগস্টে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। পরে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কসভার প্রস্তুতিতেও ট্রাম্পকে সাহায্য করেন তুলসী। এবং অক্টোবরেই নর্থ ক্যারোলিনা-য় ট্রাম্পের একটি প্রচারসভায় তিনি রিপাবলিকান দলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর ডিরেক্টর হলেন আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা গোষ্ঠীর মাথা, যিনি শুধু জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিই দেখভাল করেন না, জাতীয় নিরাপত্তার বিবিধ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি কাউন্সিল এবং হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি কাউন্সিলের পরামর্শদাতা হিসাবেও কাজ করেন। পদটি তৈরি করা হয় ২০০৪ সালে, ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে। তবে, এত গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘হিন্দু-আমেরিকান’ তুলসীর নিয়োগ বিরাট বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তি, এখনও পর্যন্ত গোয়েন্দা গোষ্ঠীর কোনও সদস্যপদে না থাকায় পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে তাঁর।

এ দিকে, ট্রাম্পের লক্ষ্য দেশের গোয়েন্দা গোষ্ঠীর পুনর্গঠন। আগের বার গোয়েন্দা বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে বিবিধ ক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসনকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিভাগ আধিকারিকরা একেবারেই অনুগত না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ফলে এ বার সরকার গঠনের সময়ে নতুন প্রেসিডেন্ট আনুগত্যকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। সেই আলোতেই দেখতে হবে তুলসী গ্যাবার্ডের নিয়োগকে।

আরও পড়ুন
Advertisement