Durga Puja 2022

সম্পাদক সমীপেষু: বুভুক্ষু বাঙালি

শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীরা পরীক্ষায় পাশ করেও খোলা আকাশের নীচে দিনের পর দিন অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন আর অযোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রীদের কল্যাণে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৩৪
এর পর পুজোর কার্নিভাল আছে, যা ততোধিক ব্যয়সাপেক্ষ।

এর পর পুজোর কার্নিভাল আছে, যা ততোধিক ব্যয়সাপেক্ষ।

অতীতে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো ইত্যাদি ভাল ভাবেই পালিত হয়েছে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরে হঠাৎ কী এমন ঘটল যে, রাজ্যের সমস্ত ক্লাব বা পুজো-কমিটিকে অনুদান দিতে হচ্ছে? বর্তমানে যে রাজ্যের চরম আর্থিক অনটন চলছে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অন্য মন্ত্রীদের মুখে অহরহ শোনা যায়। তা সত্ত্বেও আনন্দ-ফুর্তি করার জন্য এই অনুদান কী করে প্রাধান্য পেতে পারে? এর ফল ভোগ করছেন বহু সাধারণ মানুষ। যেমন, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও টালবাহানা করে চলেছে এই সরকার। অভিযোগ, হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আত্মহত্যা করতে হয়েছে অবসরের বহু বছর কেটে যাওয়ার পরও পেনশন না পাওয়ার কারণে। সরকারি পদের নিয়োগে দাঁড়ি টেনে দেওয়া হয়েছে (যে পদে কর্মচারীর মৃত্যু বা অন্য কারণে খালি হলেও তাতে আর নতুন কর্মচারী নেওয়া হচ্ছে না)। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীরা পরীক্ষায় পাশ করেও খোলা আকাশের নীচে দিনের পর দিন অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন আর অযোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রীদের কল্যাণে। এত কিছুর পরে এই অনুদান হাস্যকর মনে হয় না? নতুন শাসক দল আসার পরে রাজ্যে কোনও শিল্প তৈরি হয়নি, বেড়েছে বেকারত্ব। এমতাবস্থায় সাময়িক ক’দিনের জন্য এই উৎসবের মোচ্ছব কি মানায়? সবাই জানে, এই অনুদান দিয়ে প্রকারান্তরে সাধারণ মানুষের মন জিতে ভোট সুনিশ্চিত করা এবং পুরো পাড়াটাকে ‘কিনে নেওয়া’র চেষ্টা চলছে।

এর পর আবার পুজোর কার্নিভাল আছে, যা ততোধিক ব্যয়সাপেক্ষ। হায় বুভুক্ষ বাঙালি, সব বুঝেও এই অন্যায় অনুদানের টোপে পা বাড়াচ্ছে বছরের পর বছর। মানুষ আর কবে বুঝবে যে, এই রাজ্যের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে। তাই, প্রত্যেকের উচিত অবিলম্বে এই অনুদানের প্রতিবাদ করা এবং তা নেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখা।

Advertisement

সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪

কেন এত ছুটি

দুর্গাপুজো পাঁচ দিনের। কী কারণে এই পাঁচ দিনকে টেনে এগারো দিন করা হচ্ছে, কিছুতেই বোধগম্য হয় না। কালীপুজোও এক দিনের পুজো। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি এক দিনই ছুটি থাকত। হঠাৎ এক দিনের এই উৎসবকে টেনে প্রথমে দু’দিন, তার পর তিন দিনে পরিণত করা হল। আগে ছটপুজোয় ছুটি থাকত বিহারে, পশ্চিমবঙ্গে নয়। এখন কী কারণে এই রাজ্যে এক দিনের পর আবার দু’দিন ছুটি বরাদ্দ হল? আবার, ১ সেপ্টেম্বর পুজোর মিছিলের কারণে ঘোষিত ছুটি ছিল আধ বেলা, কিন্তু অঘোষিত ছুটি সারা বেলা। যেখানে এই সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের প্রতি অবিচার কিংবা খেটে-খাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের উপর নেমে আসা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘট সমর্থন করে না শ্রমদিবস নষ্ট হওয়ার অজুহাতে, সেখানে ছুটি দিয়ে এত দিন শ্রমদিবস নষ্ট হবে কেন?

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত রাস্তা সারাইয়ের টাকা ঠিকাদারকে দিতে না পারায় তাঁরা কাজ করতে চাইছেন না। তা হলে যেখানে রাস্তা সারাই, ভাঙা বাঁধ মেরামত, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেওয়ার টাকা নেই, সেখানে পুজো কমিটিগুলোকে ষাট হাজার টাকা দেওয়ার কি কোনও যৌক্তিকতা আছে? কমিটিগুলোকে টাকা দেওয়ার রেওয়াজ তো বাংলায় আগে ছিল না। তারা নিজেরাই চাঁদা তুলে আর স্পনসর জোগাড় করে পুজোর ব্যবস্থা করেছে বছরের পর বছর। কোভিডের কারণে মাঝে দু’বছর অনুদান দেওয়ার তবু যুক্তি ছিল। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। তবে এখনও কেন অনুদান?

পরিস্থিতি অনুসারে নিজেকে চালনা করাই যে কোনও দূরদর্শী নেতার কাজ। যিনি লড়াই করে চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, এ রকম এক জন জনপ্রিয়, লড়াকু নেত্রীর কাছে আমরা আরও অনেক পরিণত এবং কুশলী রাজনীতি আশা করি। যে বাংলা এক দিন সারা ভারতের ঈর্ষার কারণ ছিল, আজ তার এই দুর্দশা, অন্য প্রদেশের কাছে অবহেলা এবং করুণার পাত্র হয়ে থাকা খুবই পীড়া দেয়।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

আদিখ্যেতা

“‘ভাঁড়ার শূন্য’ বলেও বাড়ল পুজো অনুদান” (২৩-৮) প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হল, ভাঁড়ার শূন্য হলেও জনসাধারণের করের টাকায় এমন দেদার পুজোর অনুদান কি বেহিসাবি ছেলেমানুষি নয়? এ যেন খালি পেটে স্নো-পাউডার মেখে বিলাসিতা দেখানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা। আমরা তো ছোটবেলা থেকেই জাঁকজমকপূর্ণ পুজো দেখতে অভ্যস্ত। তখন যদি অনুদানের প্রয়োজন না হয়ে থাকে, তা হলে এখন কেন সরকারকে অনুদানের বোঝা ঘাড়ে নিতে হচ্ছে? পুজোয় অনুদান দেওয়ার শখ যদি হয়েই থাকে, তবে কুমোরটুলি, ঘূর্ণি ও বাংলার অন্যত্র কাজ করা সমস্ত মৃৎশিল্পী, সাজশিল্পীদের দিন, যাঁরা পুজোর সঙ্গে জড়িত।

দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি-সহ ভারতবাসীকে গর্বিত করেছে, তৃপ্তি দিয়েছে। তাই বলে এর জন্য মিছিল করতে হবে কেন? আবার তাতে স্কুল-কলেজ’সহ সরকারি কর্মীদেরও শামিল হতে হবে! অনুষ্ঠানের আগে তাঁদের ছুটি দেওয়ার আবেদনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কর্মসংস্কৃতির প্রশ্ন এ ক্ষেত্রে বাতুলতা মাত্র। বরং ছুটির সংস্কৃতিকেই পুষ্ট করা ভাল। এতে কর্মী খুশি হয়, এই সত্যটি বর্তমান সরকার ভালই অবগত আছে। কথায় কথায় মিটিং-মিছিল আর ছুটি ক্রমে পশ্চিমবঙ্গে একটা অপসংস্কৃতি হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।

তপন কুমার দাস, কলকাতা-১২২

গরিবের লাভ

দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদানের তীব্র সমালোচনায় মুখর বিরোধী শিবির। ভাঁড়ারে টান পড়া সত্ত্বেও এই অনুদানের ঘোষণায় ক্লাবকর্তারা তো অবশ্যই খুশি, পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে খেটে-খাওয়া মানুষ, সকলেই খুশি। কেবলমাত্র বিরোধীরা অখুশি। এ ছাড়া কিছু সরকারি কর্মচারী বেজায় চটেছেন, কারণ তাঁদের বকেয়া ডিএ দেওয়া হচ্ছে না। দিলে বেতন আরও ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়ত। কী মানসিকতা! মাসে লাখ ছুঁই ছুঁই বেতনেও মন ভরছে না? রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা, গরিব মানুষের কথা ভাববেন না? এতটাই আত্মকেন্দ্রিক!

আচ্ছা, পুজো অনুদানের সম্ভাব্য ২৪০.৫৫ কোটি টাকা ৪০,০৯২টি ক্লাবের মাধ্যমে যায় কোথায়? গ্রাম বাংলার মফস্‌সলের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবার সারা বছর এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরা উৎসবের রোজগার নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে। এই মহানগর উৎসবের ক’দিন যে ঝলমল করে, তার কারিগর তো এই খেটে-খাওয়া দিনমজুররাই। ওই শিশুদের হাসিমুখ দেখার জন্য এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রীর এই পুজোর অনুদান বৃদ্ধি। এই সরল সত্যটা বিরোধী ও তাঁদের সহায়তা যাঁরা করেন এবং যাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁরা বুঝলেন না। সরকারি কর্মচারী, বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে মধ্যবিত্ত মানুষ এই উৎসবের ব্যয়ভার অনেকটাই বহন করতেন, এই অনুদানের ফলে তাঁদের উপর চাপ অনেকটাই কমেছে। এটা বিরোধীরা বুঝবেন কবে? শুধু সরকারি কর্মীদের কথা ভাবলেই হবে? নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ কী চান, এটাও সকলকেই বুঝতে হবে। বোঝেন না বলেই পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী শক্তি ক্রমহ্রাসমান।

কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া হকের টাকা (যেটা রাজ্যের মানুষের থেকেই তোলা) পাওয়ার ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই রাজ্যের বিরোধীদের উপর সাধারণ মানুষের ভরসা বাড়বে, বিরোধী শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। গণতন্ত্রে যেটার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

রামমোহন চক্রবর্তী, নবদ্বীপ, নদিয়া

অতীতে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো ইত্যাদি ভাল ভাবেই পালিত হয়েছে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পরে হঠাৎ কী এমন ঘটল যে, রাজ্যের সমস্ত ক্লাব বা পুজো-কমিটিকে অনুদান দিতে হচ্ছে? বর্তমানে যে রাজ্যের চরম আর্থিক অনটন চলছে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অন্য মন্ত্রীদের মুখে অহরহ শোনা যায়। তা সত্ত্বেও আনন্দ-ফুর্তি করার জন্য এই অনুদান কী করে প্রাধান্য পেতে পারে? এর ফল ভোগ করছেন বহু সাধারণ মানুষ। যেমন, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ নিয়ে কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও টালবাহানা করে চলেছে এই সরকার। অভিযোগ, হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আত্মহত্যা করতে হয়েছে অবসরের বহু বছর কেটে যাওয়ার পরও পেনশন না পাওয়ার কারণে। সরকারি পদের নিয়োগে দাঁড়ি টেনে দেওয়া হয়েছে (যে পদে কর্মচারীর মৃত্যু বা অন্য কারণে খালি হলেও তাতে আর নতুন কর্মচারী নেওয়া হচ্ছে না)। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীরা পরীক্ষায় পাশ করেও খোলা আকাশের নীচে দিনের পর দিন অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন আর অযোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রীদের কল্যাণে। এত কিছুর পরে এই অনুদান হাস্যকর মনে হয় না? নতুন শাসক দল আসার পরে রাজ্যে কোনও শিল্প তৈরি হয়নি, বেড়েছে বেকারত্ব। এমতাবস্থায় সাময়িক ক’দিনের জন্য এই উৎসবের মোচ্ছব কি মানায়? সবাই জানে, এই অনুদান দিয়ে প্রকারান্তরে সাধারণ মানুষের মন জিতে ভোট সুনিশ্চিত করা এবং পুরো পাড়াটাকে ‘কিনে নেওয়া’র চেষ্টা চলছে।

এর পর আবার পুজোর কার্নিভাল আছে, যা ততোধিক ব্যয়সাপেক্ষ। হায় বুভুক্ষ বাঙালি, সব বুঝেও এই অন্যায় অনুদানের টোপে পা বাড়াচ্ছে বছরের পর বছর। মানুষ আর কবে বুঝবে যে, এই রাজ্যের অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে। তাই, প্রত্যেকের উচিত অবিলম্বে এই অনুদানের প্রতিবাদ করা এবং তা নেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখা।

সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪

কেন এত ছুটি

দুর্গাপুজো পাঁচ দিনের। কী কারণে এই পাঁচ দিনকে টেনে এগারো দিন করা হচ্ছে, কিছুতেই বোধগম্য হয় না। কালীপুজোও এক দিনের পুজো। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি এক দিনই ছুটি থাকত। হঠাৎ এক দিনের এই উৎসবকে টেনে প্রথমে দু’দিন, তার পর তিন দিনে পরিণত করা হল। আগে ছটপুজোয় ছুটি থাকত বিহারে, পশ্চিমবঙ্গে নয়। এখন কী কারণে এই রাজ্যে এক দিনের পর আবার দু’দিন ছুটি বরাদ্দ হল? আবার, ১ সেপ্টেম্বর পুজোর মিছিলের কারণে ঘোষিত ছুটি ছিল আধ বেলা, কিন্তু অঘোষিত ছুটি সারা বেলা। যেখানে এই সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষকদের প্রতি অবিচার কিংবা খেটে-খাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের উপর নেমে আসা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘট সমর্থন করে না শ্রমদিবস নষ্ট হওয়ার অজুহাতে, সেখানে ছুটি দিয়ে এত দিন শ্রমদিবস নষ্ট হবে কেন?

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত রাস্তা সারাইয়ের টাকা ঠিকাদারকে দিতে না পারায় তাঁরা কাজ করতে চাইছেন না। তা হলে যেখানে রাস্তা সারাই, ভাঙা বাঁধ মেরামত, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেওয়ার টাকা নেই, সেখানে পুজো কমিটিগুলোকে ষাট হাজার টাকা দেওয়ার কি কোনও যৌক্তিকতা আছে? কমিটিগুলোকে টাকা দেওয়ার রেওয়াজ তো বাংলায় আগে ছিল না। তারা নিজেরাই চাঁদা তুলে আর স্পনসর জোগাড় করে পুজোর ব্যবস্থা করেছে বছরের পর বছর। কোভিডের কারণে মাঝে দু’বছর অনুদান দেওয়ার তবু যুক্তি ছিল। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। তবে এখনও কেন অনুদান?

পরিস্থিতি অনুসারে নিজেকে চালনা করাই যে কোনও দূরদর্শী নেতার কাজ। যিনি লড়াই করে চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, এ রকম এক জন জনপ্রিয়, লড়াকু নেত্রীর কাছে আমরা আরও অনেক পরিণত এবং কুশলী রাজনীতি আশা করি। যে বাংলা এক দিন সারা ভারতের ঈর্ষার কারণ ছিল, আজ তার এই দুর্দশা, অন্য প্রদেশের কাছে অবহেলা এবং করুণার পাত্র হয়ে থাকা খুবই পীড়া দেয়।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

আদিখ্যেতা

“‘ভাঁড়ার শূন্য’ বলেও বাড়ল পুজো অনুদান” (২৩-৮) প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হল, ভাঁড়ার শূন্য হলেও জনসাধারণের করের টাকায় এমন দেদার পুজোর অনুদান কি বেহিসাবি ছেলেমানুষি নয়? এ যেন খালি পেটে স্নো-পাউডার মেখে বিলাসিতা দেখানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা। আমরা তো ছোটবেলা থেকেই জাঁকজমকপূর্ণ পুজো দেখতে অভ্যস্ত। তখন যদি অনুদানের প্রয়োজন না হয়ে থাকে, তা হলে এখন কেন সরকারকে অনুদানের বোঝা ঘাড়ে নিতে হচ্ছে? পুজোয় অনুদান দেওয়ার শখ যদি হয়েই থাকে, তবে কুমোরটুলি, ঘূর্ণি ও বাংলার অন্যত্র কাজ করা সমস্ত মৃৎশিল্পী, সাজশিল্পীদের দিন, যাঁরা পুজোর সঙ্গে জড়িত।

দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি-সহ ভারতবাসীকে গর্বিত করেছে, তৃপ্তি দিয়েছে। তাই বলে এর জন্য মিছিল করতে হবে কেন? আবার তাতে স্কুল-কলেজ’সহ সরকারি কর্মীদেরও শামিল হতে হবে! অনুষ্ঠানের আগে তাঁদের ছুটি দেওয়ার আবেদনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। কর্মসংস্কৃতির প্রশ্ন এ ক্ষেত্রে বাতুলতা মাত্র। বরং ছুটির সংস্কৃতিকেই পুষ্ট করা ভাল। এতে কর্মী খুশি হয়, এই সত্যটি বর্তমান সরকার ভালই অবগত আছে। কথায় কথায় মিটিং-মিছিল আর ছুটি ক্রমে পশ্চিমবঙ্গে একটা অপসংস্কৃতি হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।

তপন কুমার দাস, কলকাতা-১২২

গরিবের লাভ

দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদানের তীব্র সমালোচনায় মুখর বিরোধী শিবির। ভাঁড়ারে টান পড়া সত্ত্বেও এই অনুদানের ঘোষণায় ক্লাবকর্তারা তো অবশ্যই খুশি, পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে খেটে-খাওয়া মানুষ, সকলেই খুশি। কেবলমাত্র বিরোধীরা অখুশি। এ ছাড়া কিছু সরকারি কর্মচারী বেজায় চটেছেন, কারণ তাঁদের বকেয়া ডিএ দেওয়া হচ্ছে না। দিলে বেতন আরও ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়ত। কী মানসিকতা! মাসে লাখ ছুঁই ছুঁই বেতনেও মন ভরছে না? রাজ্যের আর্থিক অবস্থার কথা, গরিব মানুষের কথা ভাববেন না? এতটাই আত্মকেন্দ্রিক!

আচ্ছা, পুজো অনুদানের সম্ভাব্য ২৪০.৫৫ কোটি টাকা ৪০,০৯২টি ক্লাবের মাধ্যমে যায় কোথায়? গ্রাম বাংলার মফস্‌সলের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবার সারা বছর এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরা উৎসবের রোজগার নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে। এই মহানগর উৎসবের ক’দিন যে ঝলমল করে, তার কারিগর তো এই খেটে-খাওয়া দিনমজুররাই। ওই শিশুদের হাসিমুখ দেখার জন্য এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রীর এই পুজোর অনুদান বৃদ্ধি। এই সরল সত্যটা বিরোধী ও তাঁদের সহায়তা যাঁরা করেন এবং যাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁরা বুঝলেন না। সরকারি কর্মচারী, বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে মধ্যবিত্ত মানুষ এই উৎসবের ব্যয়ভার অনেকটাই বহন করতেন, এই অনুদানের ফলে তাঁদের উপর চাপ অনেকটাই কমেছে। এটা বিরোধীরা বুঝবেন কবে? শুধু সরকারি কর্মীদের কথা ভাবলেই হবে? নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ কী চান, এটাও সকলকেই বুঝতে হবে। বোঝেন না বলেই পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী শক্তি ক্রমহ্রাসমান।

কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া হকের টাকা (যেটা রাজ্যের মানুষের থেকেই তোলা) পাওয়ার ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই রাজ্যের বিরোধীদের উপর সাধারণ মানুষের ভরসা বাড়বে, বিরোধী শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। গণতন্ত্রে যেটার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

রামমোহন চক্রবর্তী, নবদ্বীপ, নদিয়া

আরও পড়ুন
Advertisement