Building Tilts in Kolkata

সম্পাদক সমীপেষু: সর্ষের মধ্যে ভূতের কথা

আমরা সকলেই জানি, পশ্চিমবঙ্গ পুরসভা আইনে একটি বহুতল কী ভাবে তৈরি করতে হবে। সামনে কত ফুট চওড়া রাস্তা আছে তার উপর ভিত্তি করে একটি বহুতল কত তলা পর্যন্ত তৈরি করা যাবে সেই নির্দেশিকা দেওয়া আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১১

রাজ্য জুড়ে বহুতল নির্মাণ শিল্পে প্রতিনিয়ত অরাজকতা হয়ে চলেছে। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে মধ্যবিত্ত আগাছার মতো গজিয়ে ওঠা ফ্ল্যাটগুলো কিনছেন, রেজিস্ট্রেশন করে পুরসভার থেকে মিউটেশনও করছেন, বিদ্যুৎ লাইন নিচ্ছেন, পুরসভার থেকে জলের লাইনও পাচ্ছেন— সবই বৈধ ভাবে। তার পর যখন বহুতলটি হেলে পড়ছে বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভেঙেও পড়ছে, তখন প্রশাসন উল্টে ফ্ল্যাট মালিকদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছে তাঁরা কেন বেআইনি বাড়ি কিনেছেন? এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে?

Advertisement

আমরা সকলেই জানি, পশ্চিমবঙ্গ পুরসভা আইনে একটি বহুতল কী ভাবে তৈরি করতে হবে। সামনে কত ফুট চওড়া রাস্তা আছে তার উপর ভিত্তি করে একটি বহুতল কত তলা পর্যন্ত তৈরি করা যাবে সেই নির্দেশিকা দেওয়া আছে। পুরসভার বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে ৫১ দফা গাইড লাইন রাজ্যের সমস্ত পুরসভার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা সত্ত্বেও কী করে এই ধরনের কাজ হতে পারে তা বোধগম্য হয় না, এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত। শোনা যাচ্ছে খাস কলকাতা শহরেই নাকি অসংখ্য বহুতল এক দিকে হেলে আছে, আমরা আরও মর্মান্তিক দৃশ্য দেখার জন্য কি অপেক্ষা করে আছি? আগামী দিনে ফ্ল্যাট কেনার আগে মানুষকে বহুতলটির বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র মারফত ভাল ভাবে খোঁজখবর নিয়ে তার পর নিজের জীবনের পুঞ্জীভূত সঞ্চয় দিয়ে ফ্ল্যাটটি কিনতে হবে বলে মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র বাইরে থেকে তার ঝাঁ-চকচকে রূপ দেখে মুগ্ধ হলেই হবে না।

বিভিন্ন ওয়র্ডে ছোট ছোট জমির উপর এবং অপরিসর রাস্তার পাশে আনকোরা সব প্রোমোটার দ্বারা তৈরি বহুতল সম্বন্ধে মানুষকে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কাজে নামতে হবে। পুরসভাগুলির বিভিন্ন ওয়র্ডে, এমনকি কলোনি অঞ্চলেও স্বল্প পরিসর রাস্তার পাশে, যেখানে বহুতলে আগুন লাগলে বা কোনও বিপর্যয় হলে দমকল ঢোকার মতো রাস্তাই নেই, সেই সব অঞ্চলেও ব্যাঙের ছাতার মতো চার তলা, পাঁচ তলা, এমনকি সাত তলা পর্যন্ত বহুতল তৈরি হতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে! প্রতিবাদের স্বর তোলা আশু প্রয়োজন।

সমীর দত্ত, কলকাতা-২৮

জলের ব্যবস্থা

ভূগর্ভের জল নিঃশেষিত হতে থাকলে কলকাতা এবং আশেপাশের মাটির স্তর ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ে মাটির নীচের ধারণক্ষমতা কমে যাবে। এর উপরে একটি মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হলেই ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। কিন্তু, যাঁরা তিনতলা, চারতলা অথবা বহুতল বাড়িতে বসবাসরত তাঁদের পক্ষে কি একতলা থেকে জল উপরে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? কলকাতা ছাড়া শহরাঞ্চলে সব জায়গায় কি পাইপলাইন দিয়ে সরকারি জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা আছে? অগত্যা ডিপটিউবওয়েলের ভরসা ছাড়া সুরাহা কোথায়? প্রোমোটাররা তো বড় বড় ডিপটিউবওয়েল বসিয়ে হাত ধুয়ে ফেলে। সরকারের তরফে এই সমস্যার সমাধান করার কোনও প্রচেষ্টা চোখে পড়েনি। যে-হেতু সরকারের তরফ থেকে জনগণকে উপযুক্ত পরিমাণে জল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই নিজেদের বাঁচার তাগিদে দৈনিক ব্যবহারের জন্য জল সংগ্রহের দায়িত্ব মানুষকে নিতে হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রেও সেই একই কারণে পাম্প চালিয়ে অবাধে মাটির তলার জল তুলে ফেলা হচ্ছে। নিষ্কৃতি পেতে যা প্রয়োজন—

প্রচুর জলের অপচয় হয় ফাটা পাইপ বা অন্যান্য কারণে। সেই জলকে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন স্থানে মাটির নীচে বড় বড় জলাধার করা। আগুন লাগলে অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সেই জলাধার থেকে জল পাওয়া যেতে পারে। সম্প্রতি আমেরিকায় সমুদ্রের তটভূমির শহরগুলিতেও দাবানলের ফলে তীব্র জলসঙ্কট হয়েছে, যার জন্য অগ্নি নির্বাপণের কাজে অসুবিধা হয়েছে। সেই সব ক্ষেত্রেও এই জলাধারের জল কাজে লাগবে। বাড়ি তৈরির আবেদন করা হলে পুরসভাকে সেখানে জলের উৎস সম্পর্কে খতিয়ে দেখতে হবে। বিষয়টিতে গাফিলতি দেখলে আবেদন বাতিল করা দরকার। জল জীবন মিশন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। সেটি পূরণ করতে না পারাও কিন্তু সরকারের অদক্ষতার নামান্তর। দক্ষিণে ও খরাপ্রবণ রাজ্যগুলিতে অনাবৃষ্টির সময়ে কৃষিকাজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য ছোট ছোট জলাশয় নির্মাণ করা হয়। এ রাজ্যেও সেই ভাবে স্থানে স্থানে জলাধার তৈরি প্রয়োজন।

সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪

বাঘ করিডর

ছয় বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জঙ্গলমহলে সিমলিপাল থেকে দু’-দু’বার বাঘের নিশ্চিত আগমন ব্যতিক্রম নয়। বাঘ মূলত পরিমিত খাবার, উপযুক্ত বিচরণভূমি, পছন্দসই সঙ্গী না পেলে, অন্য বাঘের সঙ্গে দ্বৈরথে হেরে ‘টেরিটরি’ খোয়ালে, বয়সের কারণে ‘মানুষখেকো’ হলে, আলসেমি-অসুস্থতার কারণে অপেক্ষাকৃত সহজ শিকারে নির্ভরশীল হয়ে পড়লে নিজের চেনা চৌহদ্দি ছেড়ে দেশান্তরি হয়। অন্যান্য বন্যপ্রাণের ক্ষেত্রেও ঠাঁই বদলের কারণগুলো মোটামুটি প্রায় একই। এখন প্রশ্ন, সিমলিপালের সুন্দরী ‘জ়িনত’ বা তার প্রণয়প্রার্থীরা কেন আমাদের পশ্চিমাঞ্চলে অস্থায়ী ঘাঁটি গেড়ে বসছে।

প্রথমত, সিমলিপাল থেকে আমাদের জঙ্গলমহলের দূরত্ব মেরেকেটে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে যা বাঘের জন্য ‘এই একটু আসছি’ গোছের রাস্তা। দ্বিতীয়ত, পুরো রাস্তাটিই ঘন জঙ্গল, ঝোপঝাড় ও ঘাসে ভরা, ফলে বাঘেরা নিজেদের লুকিয়ে যাতায়াত করছে। তৃতীয়ত, প্রকৃতি, ভূমিরূপ, বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্র, আবহাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে সিমলিপালের ‘কোর এরিয়া’ যেমন দেবস্থলী, চাহালা, ভাজাম, বারাহিপানি, প্রভৃতির সঙ্গে আমাদের জঙ্গলমহলের বিস্তর মিল। বাঘেরা নতুন ঠিকানাকে পরভূম মনে করছে না। চতুর্থত, জংলি শূকর, চিতল হরিণ, বুনো খরগোশ-সহ নানা গৃহপালিত পশুর উপাদেয় মাংসের ভরপুর জোগান ও স্বাদু জলের উৎস বাঘেদের বার বার প্রলুব্ধ করছে। পঞ্চমত, সিমলিপালের বাঘেদের গায়ের রং ক্রমেই কালো হচ্ছে। স্বাভাবিক গাত্রবর্ণের বাঘেরা তা হলে কি তাদের সঙ্গ পাকাপাকি ভাবে ত্যাগ করে নতুন বসতি গড়তে চাইছে? অর্থাৎ, অস্বীকারের উপায় নেই সিমলিপাল থেকে আমাদের পশ্চিমাঞ্চলের জঙ্গলমহলে একটি সচল ও স্থায়ী ‘ওয়াইল্ডলাইফ করিডর’ তৈরি হয়ে গিয়েছে যেখানে শুধু হাতিই নয় বাঘেরাও আস্তে আস্তে শামিল হচ্ছে। ভবিষ্যতে যুক্ত হতে পারে গাউর বা ইন্ডিয়ান বাইসন, নীলগাই, শম্বর হরিণ, লেপার্ড, ভালুকের মতো সমীহ জাগানো বন্যপ্রাণেরা। তাদের রক্ষার জন্য চাই উপযুক্ত নজরদারি ও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। ‘লালগড়ের ভুল’ যেন আর না হয়।

পলাশ মান্না, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর

বাঘিনির খিদে

চিরশ্রী মজুমদারের লেখা ‘রায়বাঘিনির থান’ (১৯-১) প্রবন্ধটি পড়ে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে উৎসুক বোধ করছি। আমার স্ত্রী ও কন্যা তাড়োবায় গিয়ে প্রবন্ধে উল্লিখিত ‘ছোটি মধু’ নামের বাঘিনিটিকে দেখেছিলেন। অনেকগুলো সাফারির গাড়ি তার কাছে ছিল। বাঘিনি শিকার করতে বেরিয়েছিল এবং সেই দিকেই তার মন ছিল। পর্যটকদের দেখতে সে অভ্যস্ত বলেই মনে হয়েছিল। গাইড জানান যে ছোটি মধু সদ্য মা হয়েছে এবং নিজের ও সন্তানদের জন্যে শিকারে বেরিয়েছিল।

সুশান্ত কুমার ঘোষ, আন্দুল রোড, হাওড়া

Advertisement
আরও পড়ুন