ভূগর্ভস্থ জলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। কিছু স্বার্থান্বেষী, লোভী মানুষের জন্য আগামী প্রজন্মের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে পারে। উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া ও দেগঙ্গা ব্লকের অন্তর্গত বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হাইব্রিড প্রজাতির মাগুর মাছ চাষের জন্য তৈরি হয়েছে হ্যাচারি। সেগুলোতে পরিস্রুত জলের প্রয়োজন মেটাতে লক্ষ লক্ষ লিটার জল উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সবটাই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। তবুও সবাই নির্বিকার। এই এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ, যার পুরোটাই হয় ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভর করে। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, একটি হ্যাচারিতে জল সরবরাহের জন্য বানানো ১০০০ ঘনফুটের একটি ট্যাঙ্ক থেকে ২৪×৭ জল সরবরাহের জন্য প্রতি দিন কমপক্ষে ৩ লক্ষ লিটার জলের প্রয়োজন। আর এই বিপুল জলের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিটি হ্যাচারিতে কমপক্ষে ৩ অশ্বশক্তি সম্পন্ন একজোড়া বৈদ্যুতিক পাম্প অনবরত কাজ করে চলেছে। কোথাও কোথাও সংখ্যাটা আরও বেশি।
বাগজোলা ও কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত এমন শতাধিক হ্যাচারি আছে, যেগুলো থেকে দৈনিক ৩০০ লক্ষ লিটারেরও অধিক জল তোলা হচ্ছে শুধুমাত্র মাগুর চাষের জন্য। এই কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে দ্রুত নেমে যাচ্ছে ভৌমজলের স্তর ও তার গুণগত মান। ইতিমধ্যেই আশপাশের গ্রামগুলিতে পানীয় জলের অভাব দেখা দিচ্ছে। পঞ্চায়েত ও পুরসভা স্তরে ভূগর্ভস্থ পানীয় জল উত্তোলনের জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকা সত্ত্বেও এর পুরোটাই হচ্ছে বেআইনি ভাবে। প্রশাসনিক লাইসেন্স, অনুমতি, নজরদারি ছাড়াই।
এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জলসঙ্কট তো দেখা দেবেই, সঙ্গে দেখা দিতে পারে পার্শ্ববর্তী দেগঙ্গা ব্লকের মতো জলে আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডের বিষক্রিয়া। যার ভয়াবহ পরিণাম চোকাতে হতে পারে সবাইকেই।
আকাশ বিশ্বাস
বাদুড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগনা
চাষির সঙ্কট
আবহাওয়া দফতরের তরফে যখন জ়াওয়াদের আসার খবর জানানো হচ্ছে, তখন বেশির ভাগ চাষি ব্যস্ত মাঠে ধান কাটতে। প্রথম দিন ঝিরঝিরে বৃষ্টি দেখে আর আবহাওয়ার খবর শুনে মনে হচ্ছিল, অল্প বৃষ্টির পরেই জ়াওয়াদ চলে যাবে। চিন্তাটা বাড়ল দ্বিতীয় দিন। সারা রাত বৃষ্টিতে কেটে-রাখা ধান ডুবে গেল এক হাঁটু জলে। যাঁদের ধান কাটা হয়নি, তাঁদের ধান জলে ডোবা মাঠে নেতিয়ে পড়ল। দক্ষিণ দামোদরের বিস্তৃত অংশের জমি চলে গেল জলের তলায়। গত ৪০ বছরে যে দৃশ্য দেখা যায়নি, তাই দেখতে হল রায়না, সেহারা, শ্যামসুন্দর, কাইতি, মাধবডিহি, খন্ডঘোষ ও বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের চাষিদের। কেটে রাখা ধানের অধিকাংশ কাদাতে একেবারে মিশে গিয়েছে। যেটুকু রয়েছে তা তুলে নিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা চলল সপ্তাহভর। শেষ অবধি পুরো খড়-সহ ধান পাওয়ার আশা ত্যাগ করে, গাদা করে রাখা ধানের শিষটুকু কেটে বস্তায় ভরে জমি থেকে তুলে আনলেন চাষিরা। রাস্তায়, খামারে, বাড়ির ছাদে ধান শুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলল। রাস্তায় ফেলে রাখা ধানের উপর দিয়ে সাইকেল, মোটর সাইকেল, গাড়ি গিয়ে গিয়ে ধান থেকে চাল বেরিয়ে গেলেও হাল ছাড়লেন না এক জন চাষিও। ভেজা ধানের শিষেই আবার নতুন অঙ্কুর বেরিয়ে গিয়েছে কোথাও কোথাও।
এই ভাবে জলে ডুবে যাওয়ার ফলে গোবিন্দভোগ ধান খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে— এই আশঙ্কায় চাষি বেশি দিন এই ধান ধরে রাখবেন না। এর ফলে আগামী দিনে দু’টি সম্ভাবনা দেখা দেবে। এখন ধান ওঠার এই দুর্বিষহ সময়ে পুরনো খাসধানের দাম বাড়ছে হুহু করে। নতুন ধানের দামও মোটামুটি চড়া। কিন্তু ধান নষ্ট হওয়ার ভয়ে যদি একযোগে সব চাষিই ধান বিক্রি করে দিতে চেষ্টা করেন, তা হলে মোটামুটি জ্যৈষ্ঠ মাস নাগাদ ধানের দাম কমে যেতে পারে।
বাদামি শোষকের আক্রমণে আগেই জমির পর জমির খাসধান নষ্ট হয়েছিল। তার পরেই স্থানীয় ব্লক-প্রশাসনকে ক্ষতিপূরণের জন্য ও শস্য বিমার টাকা যাতে দ্রুত দেওয়া হয় তার জন্য চাষিদের তরফে জানানো হয়েছিল। জ়াওয়াদের পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় বিঘে প্রতি পাঁচ বা ছয় কুইন্টাল ফলন হলে চাষির যেখানে লাভ থাকত গড়ে আড়াই বা তিন হাজার টাকা, সেখানে এই বছর চাষের খরচের টাকাটুকু উঠলেই শান্তি পান চাষি।
সৌমেন চট্টোপাধ্যায়
বর্ধমান
ভেজাল গুড়
শীতের মরসুম মানেই খেজুর গুড়ের আমেজ। দেশ-বিদেশের বাজারে লবাৎ, পাটালি, নলেন গুড়ের কাঁচাগোল্লা ও রসগোল্লার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। নলেন গুড়ের রসগোল্লার স্বাদ নেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাংলার নলেন গুড়ের আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে। পৌষ-পার্বণে খেজুর গুড়ের পিঠে ও পায়েস রসনা তৃপ্তির আনন্দ দেয়। খেজুর গুড় শীতকালের বাজার আলোকিত করে। আক্ষেপ, এখন বাজারে সস্তার ভেজাল খেজুর গুড়ের রমরমা চলছে। বাজারে যে খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে, তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নকল গন্ধ মেশানো হচ্ছে। বাড়তি লাভের আশায় অনেকেই ভেজাল মেশাচ্ছেন। অন্য দিকে এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, ভাল খেজুর গুড় তৈরি করেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না শিউলিরা। যাঁরা খেজুর রস সংগ্রহ করেন তাঁদের ‘শিউলি’ বলা হয়। এখন খেজুর গুড়ের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন প্রতি বছর কমে যাচ্ছে। খেজুর গাছের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
কোভিড অতিমারির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে শিউলিদের কাজেও প্রভাব পড়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাঁরা বর্তমানে রাজমিস্ত্রি ও খেতমজুরের কাজ বেছে নিয়েছেন। খেজুর রস থেকে গুড় তৈরির আধুনিক কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে এই কুটির শিল্পের সর্বনাশ হচ্ছে। গাছি ও শিউলিরা সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সাহায্য পেলে এই গুড় শিল্পকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে আশা রাখি। এ ছাড়া বনবিভাগের উদ্যোগে খেজুর গাছ রোপণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিলে ভাল হয়।
বিপদতারণ ধীবর
বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
পৌষে সর্বনাশ
এখন ভরা পৌষ। কড়াকড়ি শুরু হওয়ার কিছু দিন আগেও পিকনিকের তোড়জোড় চলছিল। সাম্প্রতিক কালে আমাদের কাটোয়া এলাকায় পিকনিক-অপসংস্কৃতি সাংঘাতিক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ভ্যানের উপর মাইক, ডিজে, বক্স ইত্যাদি বসিয়ে চড়া গানের তালে অসভ্যতার চূড়ান্ত দেখা যাচ্ছে। প্রতি বছরই আমরা, এলাকার বাসিন্দারা, এর ফলে মারাত্মক শব্দদূষণের শিকার হই। হার্টের রোগীদের অবস্থা ভয়ঙ্কর হয়। বাচ্চারা ভয় পায়। পশু-পাখি আতঙ্কে পালায়। প্রতিবাদ করলে মদ্যপ হয়ে চড়াও হয় প্রতিবাদীর উপরে। পুলিশকে জানালেও প্রতিকার পাওয়া কঠিন। করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও এই শীতে পিকনিক পার্টির বাড়াবাড়ি চলেছে! সরকার এর বিহিত করুক।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান