ঋতজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা প্রবন্ধ ‘শেষ অবধি নাগরিক আন্দোলন’ (২৮-১২) প্রসঙ্গে কিছু কথা। লেখকের মতে, এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েও রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপিকে জায়গা করে দেয়নি। প্রসঙ্গত, আর জি করের ডাক্তার ছাত্রীর মা-বাবা বারে বারে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইলেও তিনি কোনও বিবৃতি পর্যন্ত দেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে এলে নির্যাতিতার বাবা-মা দেখা করতে চাইলে তাঁদের সঙ্গে দেখাও করেননি। এই ঘটনা প্রমাণ করে, এ ধরনের আন্দোলন হোক, বিজেপি নীতিগত ভাবে চায় না।
কারণ, আজ কেন্দ্রীয় সরকার তারা চালাচ্ছে ১১ বছর। এর মধ্যে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে ইংরেজ আমলে ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে যে আর্থিক বৈষম্য ছিল, বিজেপির শাসনকালে সেই বৈষম্য তার থেকে অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার পরিষেবামূলক সমস্ত স্কিম থেকে আর্থিক বরাদ্দ ছাঁটাই করছে। একটি সমীক্ষা জানিয়েছে, দেশে ২০ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ পেটে ক্ষুধা নিয়ে দিনযাপন করেন। ঋণের দায়ে দৈনিক ১৫৪ জন কৃষক আত্মহত্যা করেন। প্রতি দিন ৭০০০ লোক অনাহারে, ১০০০০ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ সমস্ত আঞ্চলিক দল যারা যেখানে রাজ্য চালাচ্ছে, সর্বত্র ধর্ষণ, ধর্ষণ করে খুন ক্রমবর্ধমান। একটি সংস্থার দাবি, আমাদের দেশে প্রতি ১৫ মিনিটে ১ জন মহিলা ধর্ষিতা হচ্ছেন। এমনকি এই প্রসঙ্গে বিজেপির সদস্যদের দিকেও আঙুল উঠেছে। দেশের শ্রমিক অসন্তোষ প্রবল। বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শাসক দল, অর্থাৎ দেশের নেতা-মন্ত্রীরা গণআন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় হোক এই পরিস্থিতি পছন্দ করবেন না। কারণ, গণআন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের স্বাদ জনগণ হাতে পেলে শাসক সম্প্রদায়ের বিপদ, যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ বাংলাদেশ।
“ন্যায়বিচার শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে এজলাস থেকেই, রাজপথ থেকে নয়।” এই ধরনের মন্তব্য অবাক করল। আন্দোলনই কোনও আইনকে কার্যকর করতে সাহায্য করে। জনমতের চাপেই তো সন্দীপ ঘোষ, অভিজিৎ মণ্ডলরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, বিনীত গোয়েল-এর বদলি হল। আরও কিছু দাবি আদায় হল। অন্য ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দাবি কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে, শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। আট ঘণ্টা কাজের দাবিও আদায় হয়েছিল লড়াইয়ের মাধ্যমে। তাই আর জি কর আন্দোলন গণআন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় অধ্যায়।
বিশ্বনাথ সর্দাররায়, দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
শুভশক্তি চাই
ঋতজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘শেষ অবধি নাগরিক আন্দোলন’ পড়ে বোঝা গেল, প্রবন্ধকার আগামী দিনে আন্দোলনকারীদের সতর্ক করেছেন, সফল হওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর মতে, শেষ অবধি রাষ্ট্র ও নাগরিক পরস্পরবিরোধী শক্তি হয়ে গেছে। তা হলে সাফল্য কী ভাবে আসবে? কারণ নাগরিক তো রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই একক।
রাষ্ট্রশক্তি ও নাগরিকশক্তি পরস্পরবিরোধী হয়েছে বলেই সাফল্য আসছে না। অর্থাৎ রাষ্ট্র স্বয়ং নাগরিক বিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী হয়ে যাচ্ছে। বস্তুত তা-ই হচ্ছে। সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে, শহরে নাগরিক আন্দোলনে ‘কিছুটা সাফল্য’ এলেও তা এখনও মিথ মাত্র। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এজেন্সি কখনও সাড়া জাগিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছে। টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু জায়গায় তল্লাশি হচ্ছে। তার পর সব শীতঘুমে চলে যাচ্ছে। শোনা গিয়েছে, ইডি অফিসারের বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়ে নোটের পাহাড় উদ্ধার করেছে। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজাররা জড়িয়ে পড়ছেন। কিন্তু শাস্তির খবর নেই।
অসহায় নিরপরাধ আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্রের লাঠি খাচ্ছেন, বুক চাপড়াচ্ছেন, ভরসা হারাচ্ছেন। রাষ্ট্রশক্তি প্রতি দিন প্রবল ভাবে গণতন্ত্রবিরোধী হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ধুয়োয় এমন কত আন্দোলনের পথ হারিয়ে যাচ্ছে। আপাতত উপায় হল নাগরিক, জনবাদী ও রাষ্ট্রের শুভশক্তিকে অঞ্চল বিশেষে বিভিন্ন ভাবে সংহত করা। জনগণের মধ্যেই আছে প্রকৃত শুভশক্তি। তারাই চাইছে সংস্কার। জনগণের জন্য জনগণের তৈরি জনগণ নির্বাচিত রাষ্ট্র তার নাগরিকদেরই সংগঠন। আগামী রাজনীতি এই শুভশক্তির খোঁজ জারি রাখুক। তবেই সাফল্য আসবে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
দুর্ভেদ্য দেওয়াল
কুন্তক চট্টোপাধ্যায়ের ‘গণতন্ত্র ও বহুস্বরের দেশ’ (১-১) প্রবন্ধে বলা হয়েছে বহুস্বরের গুরুত্ব গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করে। কিন্তু দুঃখের কথা, আমাদের দেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ক্রমশ গণতন্ত্রের ব্যবহারিক অনুশীলনের অবনমনই দেখতে পেল। নরেন্দ্র মোদীর প্রথম পাঁচ বছরের কার্যকালের মধ্যে ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম বার সাংবাদিক সম্মেলনে সীমিত সময়ের জন্য দেখে অবাক হয়েছিলাম। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রধান প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই চান না! সরকারি পোর্টালে পাঠানো জনগণের প্রশ্নগুলি থেকে বেছে নেওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি মাসের শেষ রবিবার বেতারে দেশবাসীকে মনের কথা শোনান। কিন্তু দেশবাসীর মনের কথা অনুভব হয় কি ওঁর? তা যদি হত, তা হলে এ বারের নির্বাচনে ওঁদের আশা আর ফলাফলের মধ্যে ফারাক কেন?
আসল কথা দেশের শাসক দেশবাসীর মনের কথা পড়তে পারছেন না অথবা চাইছেন না। আমাদের দেশের সংসদের অধিবেশনগুলি এখন কার্যত হট্টগোল আর ওয়াক আউটে পর্যবসিত হয়েছে। পরিণতি হল গণতান্ত্রিক বাতাবরণ আর সকলের কথা শুনে চলার অভ্যাস অস্তমিত হয়েছে। সংসদ পরিচালনার বিপুল খরচ জলে চলে যাচ্ছে, যার উৎস জনগণের দেওয়া করের টাকা। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিভাগীয় কাজের উপর কোনও প্রশ্ন উঠলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সেটির উত্তর দেওয়ার কথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা যথাযথ ভাবে হচ্ছে কোথায়? এমনকি প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রীরা অনুপস্থিত থাকছেন। বিরোধী পক্ষের সাধারণ অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী অধিকাংশ দিন সংসদে থাকছেন না। সুতরাং এ কথা স্পষ্ট, জনপ্রতিনিধিদের ঔদাসীন্য আর দায়সারা কাজ ভারতীয় গণতন্ত্রকে আরও দুর্বল জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া, গণতন্ত্রে দলতন্ত্রের আধিপত্য ক্রমবর্ধমান। তা যেন জনগণ আর জনপ্রতিনিধিদের মাঝে দুর্ভেদ্য দেওয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবুও বহু স্বরের বৈচিত্রময় আমাদের দেশ বহুত্বের মধ্যেই গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
আব্দুল জামান নাসের, চন্দননগর, হুগলি
প্রতিভার বিকাশ
আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ক্রীড়া-বান্ধব নয়। মাঠ আছে তো বল নেই, বল আছে তো মাঠ নেই। ছেলে আছে তো খেলার সময় নেই, খেলার সময় আছে তো পথ দেখাবার লোক নেই। পরিস্থিতির বদল দরকার। দরকার প্রাথমিক স্তরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারকে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। সে সব শিশুরা বেহিসাবি ভাবেই ব্যবহার করুক। তবেই খেলার প্রতি ভালবাসা জন্মাবে। দেখা যাবে কারও প্রতিভা দৌড় বা জাম্পিং-এ, কারও প্রতিভা ফুটবল বা হকিতে। কারও শরীর গঠিত বাস্কেটবলের জন্য, কারও দেহ জিমন্যাস্টিক্সের উপযোগী। তার পর যথাযথ পরিকাঠামো ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে প্রতিভার প্রতিপালন করতে হবে।
প্রদীপ রঞ্জন রীত, আমতা, হাওড়া