‘বৈবাহিক হিংসার শিকার পুরুষও’ (পত্রিকা, ২৫-৫) প্রবন্ধে মূল্যবান কিছু পরামর্শ দানের জন্য কোয়েনা দাশগুপ্তকে ধন্যবাদ। এই সমাজে পুরুষও হতে পারেন বৈবাহিক হিংসার শিকার। সমাজ শেখায়, অশ্রুপাত পুরুষের পক্ষে বেমানান; তাই নীরবে সয়ে যেতে হয় দাম্পত্য অশান্তি। কখনও সন্তানের মুখ চেয়ে, কখনও বা সামাজিক ভাবে অপদস্থ হওয়া এড়াতে। এক সময়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। আপাত সহানুভূতির আড়ালে মজার খোরাক হওয়ার অনীহা থাকে অনেকেরই। তাই দাঁতে দাঁত চেপে দিন কাটান।
রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে উপন্যাসে নিখিলেশের কাছে দাম্পত্যের কাঙ্ক্ষিত ভাষা— পারস্পরিক সম্মান ও সখ্যের। ঘরকন্নার সীমারেখা অতিক্রম করে বাইরের বিশ্বকে চিনে নিতে নিখিলেশ বিমলাকে উদ্দীপ্ত করতে চেয়েছিল। অন্য দিকে সন্দীপ বলে, “আমরা পুরুষ কেবল আমাদের দাবির জোরে মেয়েদের আজ উদ্ঘাটিত করে দিয়েছি।” নিখিলেশদের কেবল সাহিত্যের পাতায় নয়, বাস্তবেও ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হয়েই থাকতে হয়। কারণ, অনেক নারীর চোখে এঁরা যথেষ্ট ‘পুরুষ’ নন।
মনে পড়ে লিটল ম্যাগাজ়িনে উৎসাহী এক পরিচিত বন্ধুকে। রবীন্দ্রসদন, নন্দন আর অ্যাকাডেমি চত্বরেই তাঁর অনেক বিকেল সন্ধ্যা কেটেছে বিয়ের কিছু দিন পর পর্যন্ত। কিন্তু তাঁর স্ত্রী মনে করেন, এ সব অকারণ সময় নষ্ট, আঁতলামি। ফলে বইমেলায়, নাটকে বা কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখন বন্ধুটিকে দেখা যায় না। মানসিক স্বাস্থ্যহানির শঙ্কায়, আক্রমণাত্মক ব্যবহার, জিনিসপত্র ভাঙচুর, এ সব এড়াতে আমার বন্ধুটি এখন নির্বিবাদে জীবন কাটাতে চান, তাঁর একমাত্র সন্তানের মুখ চেয়ে। স্ত্রীর দুর্ব্যবহারের কথা বাইরে জানাতে তাঁর অস্বস্তি হয়। ধৈর্য ধরা ছাড়া এমন জীবন বহন করার কোনও উপায় তাঁর নজরে পড়ে না।
শান্তনু রায়, কলকাতা-৪৭
আইনের ফাঁদে
‘বৈবাহিক হিংসার শিকার পুরুষও’ প্রবন্ধের সঙ্গে সহমত। আজকের সমাজে ‘পুরুষতন্ত্র’ ব্যাপারটি ঠিক কোথায়, কতটা প্রভাবশালী অবস্থায় আছে, তা বিচারের সময় এসেছে। পুরুষের শাসন, অথবা যে কোনও ধরনের শাসন কায়েম করার জন্য সমাজে চাই সহায়ক ব্যবস্থা, অর্থাৎ আইন। কিন্তু আজ পুরুষ নারীকে শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক, কোনও ভাবেই শাসন করার অধিকারী নয়। খুব সঙ্গত ভাবেই পুরুষ-নারী অসাম্য, নারীর উপর হিংসা নিয়ন্ত্রণ করতে আনা হয়েছে একের পর এক আইন, যেগুলি মেয়েদের বহুবিধ সামাজিক অবিচার থেকে মুক্তি দিয়েছে।
তবে কালক্রমে যে কোনও হিতকারী আইনি শাসনেরই অপব্যবহার হয়। তাই বর্তমানে ‘পুরুষশাসিত সমাজ’ শব্দবন্ধটি ক্রমশ অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে। সভ্য সমাজের উদ্দেশ্য নারী-পুরুষ সাম্য। তাই পুরুষের হাতে নারীশাসনের দণ্ড থাকবে না এটা যেমন কাম্য ছিল, উল্টো দিকে পুরুষ দণ্ডিত হবে না, এটাও সমান ভাবে কাম্য। নারী-সুরক্ষায় আইনের সংখ্যা যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পুরুষের বঞ্চনা ও অসম্মানের সমস্যা। সাম্প্রতিক কালে কিছু সংগঠন পুরুষ অধিকারের বিষয়টি নিয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। এটাই প্ৰমাণ করে পুরুষের প্রতি রাষ্ট্রের আইন তথা সমাজবিধি, এমনকি আমাদের পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি অনমনীয়।
এই প্রবন্ধে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছেন স্বামী, এবং আদালতের বিচারে সুরাহা পেয়েছেন। পারিবারিক অশান্তির জেরে বিবাহিত পুরুষের আত্মহত্যার পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়েছে, যা ঊর্ধ্বমুখী। পুরুষ গার্হস্থ হিংসার শিকার হলে তা প্রকাশ করে না। মৌখিক হিংসা পুরুষকে অহরহ সহ্য করতে হয়। স্বামীর রোজগার কম হওয়ায় ক্ষোভ, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের নিরিখে স্ত্রীকে তুলনামূলক ভাবে কম ভোগ্যবস্তু জোগানোর অভিযোগ, পুরুষটির পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরন্তর গালমন্দ, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার হুমকি— ইত্যাদির শিকার আজ ঘরে ঘরে হচ্ছে পুরুষরা। এগুলি অবশ্যই পারিবারিক হিংসা হিসেবে স্বীকৃত হোক, এর প্রতিকারে আইন আসুক।
এই প্রবন্ধে পুরুষের উপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের কিছু মনোবৈজ্ঞানিক ও সামাজিক কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পুরুষকে আশৈশব এই শিক্ষা দেওয়া হয় যে, সে নারী অপেক্ষা বেশি শক্তপোক্ত, শক্তিশালী। নারীকে সে পালন করবে, রক্ষা করবে। নারী তার উপর নির্ভরশীল দুর্বলতর এক প্রজাতি। কিন্তু নারী দুর্বল, অশক্ত, অক্ষম এই ধারণাগুলি প্রকৃতপক্ষে ‘মিথ’। আমাদের সমাজে নারীস্বাধীনতার অগ্রগতি লক্ষণীয়, এবং তা কাম্যও ছিল বটে। সামাজিক যে কোনও সমস্যার আলোচনা কালে রাজনীতি একেবারেই অপরিহার্য একটি শর্ত। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নারীকল্যাণ, নারী উন্নয়নের যে প্রকল্পগুলি সাফল্য অর্জন করেছে, সেগুলি প্রশংসনীয় ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু নারীক্ষমতা ও স্বাধীনতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নারীকে পুরুষের উপর ‘নির্ভরশীল’, নারী ‘দুর্বলতর’— এ রূপ চিহ্নিতকরণ আজ সর্বনাশাহয়ে দাঁড়িয়েছে।
পুরুষের প্রতি ক্ৰমবৰ্ধমান ঘটে চলা নিপীড়নের একটি বড় কারণ নারীর জন্য আইনি পক্ষপাতিত্ব। পারিবারিক হিংসার জন্য ৪৯৮ক ধারা, বৈবাহিক প্রতিশ্রুতিতে সহবাস মামলা (যেখানে নারী-পুরুষ উভয় প্রাপ্তবয়স্কেরই সম্মতি থাকে) ইত্যাদি একপাক্ষিক আইনের অপব্যবহারেরও কিছু পরিসংখ্যান এই প্রবন্ধে দেওয়া রয়েছে। এমতাবস্থায়, পুরুষশাসিত সমাজে (কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে খাপ পঞ্চায়েত ইত্যাদি ব্যবস্থা ব্যতীত) পুরুষ কেবল নারীকে শাসন করার অধিকার কায়েম করার জন্য জন্মেছে, এবং যথেচ্ছাচার করার ঢালাও ছাড়পত্র জন্মসূত্রে পেয়ে গিয়েছে, এই ভাবনা থেকে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে।
নারী-সুরক্ষার জন্য নারী কমিশন-সহ নানা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা রয়েছে, যেখানে মহিলারা অভিযোগ জানাতে পারেন। পুরুষের জন্য তেমন ব্যবস্থা নগণ্য। এখন পুরুষের প্রয়োজন ‘মেল শভিনিজ়ম’ বা পৌরুষ গরিমাবোধ ত্যাগ করে, নারীকে দুর্বলতর না ভেবে, নিজেদের প্রতি ঘটে যাওয়া সামাজিক অবিচারগুলি নিয়ে সরব হওয়া।
ডালিয়া রায় মুখোপাধ্যায়, ব্যাঁটরা সদর, হাওড়া
দামের ছ্যাঁকা
বাজারে আনাজপাতি কিনতে গিয়ে হিমশিম। সাধারণ মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো ভাত কিংবা মুড়ির সঙ্গে আলুসেদ্ধ আর পেঁয়াজ কিংবা কাঁচালঙ্কা সহযোগে ক্ষুধা নিবারণ করবে, তাতেও পড়ছে টান। আলুর বর্তমান দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ঠেকেছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় আর কাঁচালঙ্কা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে প্রভৃতি আনাজ সাধারণ সময়ে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও এখন এগুলির দামও ৫০ টাকা পার করেছে। আর যে আনাজগুলি সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের মূল্য— কেজি প্রতি ডাঁটা ২৫০-৩০০ টাকা, ক্যাপসিকাম ২০০-২৫০ টাকা, বরবটি ১৩০-১৫০ টাকা, টম্যাটো ১০০-১২০ টাকা, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০০-৩৫০ টাকা। দুই থেকে আড়াই টাকার পাতিলেবু এখন পাঁচ টাকা। নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষের খাদ্যতালিকায় থাকা লাউ, কুমড়ো, পেঁপে, রাঙা আলু ৪০-৫০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে। যে শসা কিছু দিন আগে পর্যন্ত কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হত, এখন তা-ও ১০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আদা ও রসুনের দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি পিস প্রতি ৮০ টাকা।
আনাজের এই দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বিক্রেতারা বৃষ্টি না হওয়ার কথা বলছেন। মাঠের আনাজ মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলন কম হচ্ছে, তাই এই মূল্যবৃদ্ধি। বৃষ্টি হলে দাম কম হবে কি না, এখন সেটাই দেখার।
শ্রীমন্ত পাঁজা, গঙ্গাধরপুর, হাওড়া