Social Media Obsession

সম্পাদক সমীপেষু: পঞ্চম বিশ্ব

আগামী কল্পবিশ্ব শাসন করবে অভিনব মেটাভার্সের জগৎ, যাকে ষষ্ঠ বিশ্ব বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, আরও বেশি করে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫০
আজকের টিন-এজ নিউ জেনারেশন অবকাশের প্রায় পুরোটাই ব্যস্ত থাকে সমাজমাধ্যমে, ইন্টারনেটের ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’-তে।

আজকের টিন-এজ নিউ জেনারেশন অবকাশের প্রায় পুরোটাই ব্যস্ত থাকে সমাজমাধ্যমে, ইন্টারনেটের ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’-তে। প্রতীকী ছবি।

আমাদের শৈশবের দিনযাপনে বিশ্বধারণায় নয়া সংযোজন ‘কল্পবিশ্ব’ ছিল সায়েন্স ফিকশন-এর আদলে। মাত্র পঞ্চাশ বছরে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিবর্তন সে ফিকশনের বাস্তবায়ন করেছে, যা ডেকে এনেছে মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট। অরবিন্দ সামন্তের ‘কল্পবিশ্বে দিনযাপনের গল্প’ (৪-১) প্রবন্ধটি এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। এত দিন জানতাম, বিশ্ব তিন রকম। প্রথম বিশ্ব— ন্যাটোভুক্ত উন্নত পাশ্চাত্য আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান ইত্যাদির নেতৃত্বে পশ্চিমি জোট। দ্বিতীয় বিশ্ব— ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত কমিউনিজ়ম প্রভাবিত উন্নত সোভিয়েট ইউনিয়ন, চিন ইত্যাদির নেতৃত্বে পূর্ব দিকের জোট। তৃতীয় বিশ্ব— জোট-নিরপেক্ষ বাকি উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ, যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভারত। ইদানীং শোনা যাচ্ছে, বিশ্বে অত্যন্ত দরিদ্র দেশগুলি চতুর্থ বিশ্বের অন্তর্গত। মতান্তরে ফোর্থ ওয়ার্ল্ড হল জ্যাক কার্বি সৃষ্ট এক কমিক-বিশ্ব। শাসন-শোষণ, ডিভাইড অ্যান্ড রুল-এর বিচিত্র বিশ্বে ১৯৯০-উত্তর তথ্যপ্রযুক্তির জগৎ নিয়ে এল আর এক বিভেদ— ডিজিটাল ডিভিশন, যার অন্যতম পরিণাম লেখক উক্ত ‘কল্পবিশ্ব’। প্রবন্ধে প্রকাশিত উদ্বেগ অনুযায়ী একে পঞ্চম বিশ্ব বলা যায়, যেখানে ধনী-দরিদ্র, পূর্ব-পশ্চিম, ন্যাটো-কমিউনিস্ট, উন্নত-অনুন্নত ইত্যাদি সীমারেখা ভুলে যাচ্ছে বা ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক মোহময় জগতে। এখানে সাবধান হতেই হবে।

ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের অতি ব্যস্ত জগতের আধিকারিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম দুই শব্দে, কেমন আছ? উত্তরে দু’শো শব্দ বর্ষিত হল তাঁর সন্তানের সমস্যা নিয়ে। জানলাম, আজকের টিন-এজ নিউ জেনারেশন অবকাশের প্রায় পুরোটাই ব্যস্ত থাকে সমাজমাধ্যমে, ইন্টারনেটের ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’-তে। এরা সমাজে মেশে না, বন্ধুদের সঙ্গে খেলে না, খুনসুটি-মারপিট করে না, বড়দের বকুনি খায় না। লাইক-শেয়ার-কমেন্টের জগতে অভ্যস্ত এরা সুস্থ প্রতিযোগিতায় অচল হয়ে যাচ্ছে। অপ্রাপ্তি, ব্যর্থতা সহ্য না করতে পেরে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এই ভারসাম্যের মুখ্য শর্ত স্মার্টফোন, আইপ্যাড ইত্যাদি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা মানুষের এক আবশ্যক অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। এই শর্ত সরিয়ে নিলে অদ্ভুত এক অসহায় বোধ করে আসক্ত ব্যক্তি, বিশেষ করে নবপ্রজন্ম।

Advertisement

লেখক ‘কল্পবিশ্ব’-এ বড়দের কথায় ‘প্রবীণ ও অশক্ত মানুষদের জীবনে ব্যক্তিস্বাধীনতার এক নতুন অর্থ’-এর উল্লেখ করেছেন। নিরানন্দ অবসর যাপন ঢের বেশি আনন্দঘন হয়ে উঠছে— এ কথাও আংশিক মেনে নেওয়া যায়। কারণ, সত্তরের দশকে সাহিত্যিক-দার্শনিক মার্শাল ম্যাকলুহানের উদ্ভাবন তথা আগ্রহ, যেখানে প্রচারমাধ্যম, গণমাধ্যম কার্যত এক বিপ্লবভূমির ইঙ্গিত দিয়েছিল। এখন হাড়ে হাড়ে সে প্রতিবিপ্লব টের পাওয়া যাচ্ছে। টেলিভিশনে আসক্ত বড়রা। গণমাধ্যম বড়দের মনোজগৎ ক্রমশ গ্রাস করছে। লেখক উপসংহারে লিখেছেন, আমরা আমাদের সামাজিক জীবনযাপনের পাসওয়ার্ডটি আউটসোর্স করে দিয়েছি— যা রূঢ় ও মর্মান্তিক সত্য।

এর রেশ ধরে বলা যায়, আগামী কল্পবিশ্ব শাসন করবে অভিনব মেটাভার্সের জগৎ, যাকে ষষ্ঠ বিশ্ব বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, আরও বেশি করে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে। কথোপকথন বাড়ুক। আবেগ স্পর্শ করুক। ছোটদের সঙ্গে কথা বলতে হবে আরও। নিজের হেডফোন আগে সরাতে হবে। ডেকে আনতে হবে ‘গল্পবিশ্ব’-কে।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

বিদ্রোহী ও ব্যাঙ

শোভনসুন্দর বসুর ‘একশো এক বছর আগে’ (৩-১) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাকে বলা হয় বিদ্রোহের বজ্রনির্ঘোষ। আবুল আহসান চৌধুরীর লেখা (‘সাহিত্যের রূপকার পুনর্বিচারের অবলোকন’, বাংলা একাডেমি, ঢাকা) থেকে জানা যায়, সম্ভবত ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হক সম্পাদিত মোসলেম ভারত পত্রিকায় কার্তিক, ১৩২৮ বঙ্গাব্দে! তবে সর্বাধিক প্রচলিত মত অনুসারে, কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ২২ পৌষ তারিখে সাপ্তাহিক বিজলী পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশনা নিয়ে ধন্দের কারণ, মোসলেম ভারত পত্রিকার প্রকাশনা ছিল অনিয়মিত; এর প্রকাশনা তারিখ ও প্রকৃত প্রকাশকালের মধ্যে পার্থক্য থাকত, যা প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন। প্রকাশের পর তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে প্রবাসী, সাধনা, ধূমকেতু, দৈনিক বসুমতী-তে তা পুনর্মুদ্রিত হতে থাকে।

প্রশংসা ও অভিনন্দনের পাশাপাশি কবিকে বিস্তর সমালোচনারও সম্মুখীন হতে হয়। বড় রকমের বিতর্ক ওঠে কবি মোহিতলাল মজুমদারের লেখা ‘আমি’ নামক এক গদ্যরচনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ ওঠে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ‘আমি’ গদ্যাংশের হুবহু অনুকরণ! এ সম্পর্কে মুজফ্ফর আহমেদ তাঁর কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা-য় লেখেন, “শুরুতে তিনি (মোহিতলাল) ‘আমি’র ভাব নিয়ে ‘বিদ্রোহী’ রচনার কথাই বলে বেড়াচ্ছিলেন। সম্ভবত তাতে তেমন কাজ না হওয়ায় অনেক পরে তিনি বলা শুরু করেছিলেন, নজরুল তাঁর লেখার ‘ভাব’ চুরি করেছে।” এ প্রসঙ্গে মুজ্ফফর আরও বলেন, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লেখার এক বছর আগে নজরুল ‘আমি’ গদ্যাংশটি শুনেছিলেন বন্ধু মোহিতলালের কাছ থেকে। এমন হতে পারে, মোহিতলালের লেখা শুনে নজরুলের মনে হয়েছিল, এ ধরনের একটি কবিতা লেখা যায়।

সজনীকান্তের প্যারডি ‘ব্যাঙ’-এর পিছনেও মোহিতলাল আছেন বলে মনে হয়েছিল নজরুলের বন্ধুদের। তাঁরা জেদ করলেন, এর একটা জবাব দিতে হবে। নজরুলকে প্রায় জোর করেই লিখিয়ে নেওয়া হল ‘সর্বনাশের ঘণ্টা’, ১৩৩১ বঙ্গাব্দের কল্লোল পত্রিকার কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশ পেল। এই কবিতার জবাবে মোহিতলাল মজুমদারের ‘দ্রোণ-গুরু’ ছাপা হল ওই একই সময় শনিবারের চিঠি পত্রিকায়।

‘বিদ্রোহী’ কবিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এর পরও সক্রিয় ছিল। এ প্রসঙ্গে আবুল আহসান মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি প্রয়াসের উল্লেখ করেছেন। মণিলাল ছিলেন ভারতী পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশের পরই মোসলেম ভারত পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি পাঠান এবং ‘আমি’-র অনুলিপি, নানা সাদৃশ্য স্থানগুলোর নীচে দাগিয়ে চিঠির সঙ্গে যুক্ত করেন। ‘বিদ্রোহী’র অকুণ্ঠ প্রশংসা করেও তিনি ‘আমি’-র প্রসঙ্গ তোলেন এবং ‘বিদ্রোহীর বন্ধুস্বরূপ’ রচনাটি পুনর্মুদ্রণের অনুরোধ জানান। রচনা দু’টির “ভাব ও ভাষার এমন একটি আশ্চর্য মূলগত সাদৃশ্য আছে যাহা পাঠককে সন্দিহান করে,” এ কথা বলে তাঁর মন্তব্য, “কিন্তু তাহাতে কোনোটিরই রসভোগের ব্যাঘাত জন্মায় না।” চিঠিতে তাঁর উদ্দেশ্য ও মনোভাব নিরপেক্ষ ছিল না। মোসলেম ভারত পত্রিকায় শেষ পর্যন্ত তাঁর চিঠি ও ‘আমি’ রচনাটি প্রকাশিত হয়নি। ‘বিদ্রোহী’ নিয়ে আর কোনও বিতর্ক হোক, এমনটা হয়তো চাননি পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক।

প্রলয় চক্রবর্তী, কলকাতা-১২৪

ট্রেনে পাথর

প্যাসেঞ্জার ট্রেনের বিকল্প নেই। কিন্তু কোনও ছোট বা হল্ট স্টেশনে যদি রাতারাতি ঘোষণা হয় সেখানে ভবিষ্যতে কোনও নির্দিষ্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন দাঁড়াবে না, স্থানীয়রা কাছাকাছি কোনও বড় স্টেশনে গেলে তবেই ট্রেনটি ধরতে পারবেন, সেটা কি উচিত? প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিকে মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনে রূপান্তরিত করে, সামান্য গতি বাড়িয়ে, ভাড়ার তারতম্য ঘটিয়ে এবং আগের নির্দিষ্ট স্টেশনে দাঁড় না করিয়ে মানুষের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যে দেশের আশি শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন, এই গতি বা ঝাঁ-চকচকে ব্যাপারটা তাঁদের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে, তাঁরা তা মেনে নিতে পারেন না! হয়তো সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন ‘বন্দে ভারত’-এ পাথর ছোড়া।

সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪

আরও পড়ুন
Advertisement