—প্রতীকী ছবি।
কবি জয় গোস্বামীর ‘ক্রিকেট থেকে কী শিখেছি’ (রবিবাসরীয়, ১৯-১১) শীর্ষক তথ্য সম্বলিত ও যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধটি পড়ে ঋদ্ধ হলাম। তিনি যে সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন, তখন বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে, মূলত শীতকালের কয়েক মাস, খেলাটি হত। তখন পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেটই খেলা হত। ক্রিকেটকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এক দিনের ক্রিকেট সবে শুরু হয়েছে। আর এখন সারা বছর ক্রিকেট খেলা হয়। খেলাটিকে আরও বেশি উত্তেজক করার জন্য চালু হয়েছে টি২০। দর্শকদের কাছে বেশি মনোজ্ঞ করার এই প্রচেষ্টা দারুণ সাফল্য পেয়েছে। যোগদানকারী দেশের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আইপিএল খেলাটিকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে, ভাবা যায় না। অথচ, ক্রিকেটের জন্য আমরা, আমাদের দেশ অনেক কিছু হারিয়েছে।
প্রথমত, এই খেলা দেখার নেশা যাদের আছে, তাদের জীবনের অনেকটা মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে এই ক্রিকেট। এখন আবার এই খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা রকম জুয়া খেলা। লক্ষ লক্ষ মানুষের কঠোর পরিশ্রমের টাকা কয়েক ঘণ্টায় উড়ে যাচ্ছে। এই নেশা আবালবৃদ্ধবনিতার মধ্যে প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিদ্যার্থীরা স্কুলের পড়া, পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে ক্রিকেট দেখায় মগ্ন। বলা যেতে পারে, ‘ক্রিকেট নেশা সর্বনাশা’।
দ্বিতীয়ত, এই খেলা এখন কুবেরের রত্নভান্ডার। প্রতিনিয়ত এখানে নানা ধরনের টাকার খেলা চলে। কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের এখানে অফুরন্ত আয়। তাতেও তাঁদের মন ভরে না। ফলে, বিজ্ঞাপন জগৎও তাঁরা দখল করছেন।
তৃতীয়ত, রাজনীতি ঢুকে পড়েছে এর মধ্যে। শীর্ষপদ দখল, বোর্ড সদস্য, কোচ হওয়ার জন্য কূটনৈতিক চাল বিপুল ভাবে বিদ্যমান।
চতুর্থত, এই খেলাকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ফুটবল, হকি, অ্যাথলেটিক্স এবং অন্য অনেক খেলা অবহেলিত হচ্ছে। আজ ফুটবল পাগল পশ্চিমবঙ্গের মাঠে এবং ক্লাবগুলোতে বাঙালি দক্ষ খেলোয়াড়ের সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে কমে গিয়েছে। অথচ, এক সময় বাঙালি ফুটবল খেলোয়াড় ভারতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে আমাদের দেশ এখনও যোগদান করতে পারেনি। অলিম্পিক্স বা এশিয়ান গেমসে অ্যাথলেটিক্স অথবা অন্যান্য খেলায় যে ক’টি পদক আমরা পাচ্ছি, সেখানে উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ, মাঠ, খেলার সরঞ্জাম দিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করতে পারলে এর থেকে অনেক বেশি পদক পেতাম। যাঁরা এই পদকগুলো পাচ্ছেন তাঁদের জীবনে দারিদ্র, না পাওয়ার তালিকা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই দেখে মনে হয় একটু সরকারি সাহায্য আগে পেলে ওঁরা আরও কত কিছু করতে পারতেন।
তা ছাড়া, আজকাল অনেক অভিভাবক সন্তানকে ক্রিকেট খেলায় উৎসাহিত করতে নিয়মিত ক্রিকেট কোচিং ক্লাসে ভর্তি করছেন। সবার একটাই লক্ষ্য— ছেলেকে ভবিষ্যতের সচিন, সৌরভ তৈরি করা। কোচিং সেন্টারে ভর্তির আগে সন্তান কোন খেলার প্রতি আগ্ৰহী, সেটা দেখা বা যাচাই করা খুব জরুরি।
পরিশেষে বলব, ক্রিকেট নিয়ে অপ্রয়োজনীয় মাতামাতি বন্ধ হোক। খেলাটি জুয়া মুক্ত হোক। মনোরঞ্জনের জন্য খেলা চলুক। পাশাপাশি ক্রিকেটের কিছু টাকা অন্যান্য খেলার উন্নয়নের কাজে লাগুক।
গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অপয়া কেন
আমরা ছোটবেলায় কোনও মাঠে খেলতে গেলে মাঠটি কার, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। খেলায় হার-জিতের বিষয়টি ছিল মুখ্য। ভারত ১০টি ম্যাচে জেতার পর আমরা বড্ড বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, ভারত বিশ্বকাপ জয় করবেই। আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন, খেলার শেষে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি কেন? গুজরাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন-এর অধীনে ‘মোতেরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ সংস্কার হয়ে ২০২১ সালে নাম পরিবর্তন করে হয় ‘নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম’। তখন সেই বিতর্কে আমিও প্রশ্ন রেখেছিলাম, এক জন জীবিত ব্যক্তির নামে কী ভাবে স্টেডিয়ামের নামকরণ হতে পারে? পরবর্তী কালে রাষ্ট্রপতি এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিশ্বকাপ ফাইনাল হতে চলেছে, তা আমরা সকলেই জানতাম। কিন্তু যাঁরা আজ ওই মাঠকে অপয়া বলছেন, তাঁরা ফাইনালের আগের দিন কেন তা বলতে পারলেন না? ভারত জিতলে বোধ করি এই প্রসঙ্গ উঠত না। প্রতিবাদটা করা উচিত ছিল যে-সময় নামকরণ হয়েছিল। হার-জিতের সঙ্গে মাঠের কোনও সম্পর্ক নেই, সেটা সবার বোঝা প্রয়োজন।
মলয় মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১১০
তথ্য বিচ্যুতি
জয় গোস্বামীর রচনাটি মনোগ্রাহী হলেও কিছু তথ্য বিচ্যুতি চোখে পড়ল। যেমন, লেখক বলেছেন, ১৯৯৬-৯৭ সালে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ়ের প্রথম টেস্ট ডারবানে ভারত প্রথম ইনিংসে করেছিল ৬৬ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০। এটি ঠিক নয়। ভারত দুই ইনিংসে করেছিল যথাক্রমে ১০০ ও ৬৬ রান। একই ভাবে ১৯৮৭ সালের ভারত-পাকিস্তান টেস্টের স্কোরটিও উল্টে গিয়েছে। সঠিক তথ্য— পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে করে ১১৬ রান, ভারত ১৪৫। আবার, ১৯৮২-৮৩’র ভারত-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ়ের দ্বিতীয় টেস্ট করাচিতে ভারত পরাজিত হয় ইনিংস ও ৮৬ রানে (লেখকের মতে, ইনিংস ও ৩৬ রানে)। ওই সিরিজ়ের ফয়জ়লাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সুনীল গাওস্কর অনবদ্য অপরাজিত ১২৭ রান করেন। প্রবন্ধকার লিখেছেন, শেষ ৩৮ মিনিট সঙ্গী একাদশ ব্যাটসম্যান মনিন্দর সিংহকে নিয়ে গাওস্কর ৮৯ থেকে ১২৭-এ পৌঁছেছিলেন। সঠিক তথ্য হল, দশম ব্যাটসম্যান ছিলেন মনিন্দর সিংহ। তিনি ৩৬ মিনিট ক্রিজ়ে থাকেন। একাদশ ব্যাটসম্যান ছিলেন দিলীপ দোশী।
প্রবন্ধকার বলছেন, বিশ্বনাথের এক ইনিংসের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন গাওস্কর স্বয়ং। গাওস্কর সেই ইনিংসে ১০১ রান করেন। বোঝাই যাচ্ছে, প্রবন্ধকার ভারত-ইংল্যান্ড, ম্যানচেস্টার টেস্ট ১৯৭৪-এর কথা উল্লেখ করছেন। বিশ্বনাথ কিন্তু সেই ইনিংসে ৫৮ রান নয়, করেছিলেন ৪০ রান। ওই টেস্টে জন স্নো খেলেননি। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণকে সমৃদ্ধ করেছিলেন বব উইলিস, ক্রিস ওল্ড ও মাইক হেনড্রিক-এর মতো পেস বোলার। প্রবন্ধটির শেষের দিকে লেখক লিখেছেন, ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার ট্রেভর বেলি টেস্টে ১০০০-এর বেশি রান এবং ১০০-র বেশি উইকেটের মালিক। বেলি যে সিরিজ়ে অবসর নিতে বাধ্য হন, সেই সিরিজ়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে এক তরুণের। তার নাম গারফিল্ড সোবার্স। তথ্যটি বিভ্রান্তিকর। স্যর সোবার্স-এর টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ১৯৫৪ সালে। ট্রেভর বেলি তাঁর শেষ টেস্ট খেলে অবসর নিয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে।
সঞ্জয় সেনগুপ্ত,কলকাতা-৩১
শিক্ষার খেলা
এ বারের ওয়ান ডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখলাম। প্রথমত, ওয়ান ডে-তে সচিন তেন্ডুলকরের ৪৯টি সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে বিরাট কোহলি যখন ৫০টি সেঞ্চুরি করলেন, তখন সবাই বিরাটকে সেরা ক্রিকেটারের তকমা দিলেও বিরাট স্বয়ং তাতে জল ঢেলে দিয়ে সচিনকেই এগিয়ে রাখলেন। এই বিনয় আমাদের কাছে এক অপূর্ব শিক্ষা। দ্বিতীয়ত, খেলার সময় ক্রিকেটারকে যে সদা সতর্ক থাকা উচিত, তার প্রমাণ বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার ম্যাথুজ়-এর আউটও হয়ে যাওয়া। শেষে, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দেখালেন, চোট সত্ত্বেও কী ভাবে মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে দেশকে জেতাতে হয়। এই খেলায় অনেক পরিবর্তন এলেও, শেখার রসদ চিরকালই থেকে যায়।
প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি