Droupadi Murmu

সম্পাদক সমীপেষু: কুরুচিকর মন্তব্য

রাজনৈতিক আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ যেন কখনও ব্যক্তি আক্রমণে পরিণত না হয় এবং তা যেন কখনও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে না যায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে বইকি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৫৬
এক জন জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলা হিসেবে দেশের রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন দ্রৌপদী মুর্মু।

এক জন জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলা হিসেবে দেশের রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ফাইল চিত্র।

‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কুকথা’ (১৩-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই। এই প্রথম এক জন জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলা হিসেবে দেশের রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। অথচ, সম্প্রতি তাঁর প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের এক মন্ত্রী। আজকের সমাজে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতির রূপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা এক অত্যন্ত নিম্ন, পশ্চাৎগামী মানসিকতার পরিচয় দেয়। আবার যিনি এই মন্তব্য করছেন তিনি এক জন জনপ্রতিনিধিও বটে। কয়েক লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি হয়েও তাঁরা যদি অপর এক জনকে তাঁর জাত, বর্ণ, রূপ দিয়ে বিচার করেন, তবে মানতেই হয় যে, সত্যিই এক অদ্ভুত সমাজে বাস করছি আমরা! এক জন নাগরিক হিসেবে, ভারতের রাষ্ট্রপতি তথা দেশের প্রথম নাগরিকের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

Advertisement

স্বামীজি তাঁর স্বদেশ মন্ত্রে বলেছিলেন— “হে ভারত, ভুলিও না— নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই! হে বীর, সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল— আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। বল— মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই।” স্বামীজি যে ‘শূদ্র জাগরণ’-এর কথা বলেছিলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সমাজের সকল স্তরের উন্নতি সাধনের কথা বলেছিলেন, তা ধীরে ধীরে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এখনও কিছু মানুষ দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে অন্যদের প্রতি এমন অবমাননাকর মন্তব্য করছেন। দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে এই মন্তব্যগুলি এক প্রকার বাধা। এই বাধাগুলি অতিক্রম করতে গেলে এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।

সর্বোপরি, দেশের রাষ্ট্রপতি, অর্থাৎ প্রথম নাগরিক দেশ তথা সমগ্র ভারতবাসীর প্রতিনিধি। তাঁর বিরুদ্ধে যে কোনও কুরুচিকর মন্তব্যই ব্যথিত করবে সমগ্র ভারতবাসীকে। রাজনৈতিক আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ যেন কখনও ব্যক্তি আক্রমণে পরিণত না হয় এবং তা যেন কখনও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে না যায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে বইকি।

দিগন্ত চক্রবর্তী, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

পদের মর্যাদা

‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কুকথা’ শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে দু’-এক কথা সংযোজন করতে চাই। সম্প্রতি মাননীয়া রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী অখিল গিরির অশোভন মন্তব্য প্রসঙ্গে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আশ্চর্য হইনি। উল্টোটা হলেই বরং বিস্মিত হতাম। কারণ, বর্তমানে যে কোনও দলের মন্ত্রী-সহ নেতা-নেত্রীরা চিত্তাকর্ষক তথ্যসমৃদ্ধ সুভাষণ দিতে ভুলেই গেছেন। মন্ত্রী অখিল গিরি শুধু নন, এমন আরও অনেকেই আছেন বর্তমান রাজনীতির ছত্রছায়ায়, যাঁরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে ক্ষমতার জোরে যা ইচ্ছে তা-ই বলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাঁদের অনেকেই ঠিকমতো বক্তৃতা করতে জানেন না। জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য বই পড়েন না। সুতরাং, শ্রোতাদের উত্তেজিত করে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে অশোভন কথা না বললে তাঁরা জনসভায় হাততালিও পান না। রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা জানেন, বর্তমানে অধিকাংশ সভা-সমাবেশে যাঁরা যোগ দিয়ে ভাষণ শুনতে আসেন, তাঁরা কোনও বুদ্ধিজীবী শ্রোতা নন। এঁদের একটি বড় অংশই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের বশংবদ এবং স্বল্পশিক্ষিত মানুষ। তাঁদের মাঝেমধ্যে এমন অশোভন কথা না শোনালে সভা বেশ জমে ওঠে না।

বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক বিবেকানন্দ ত্রিপাঠী তাঁর অন্বীক্ষা গ্রন্থের ‘চায় ক্ষমতা’ প্রবন্ধে লিখেছেন— যাঁরা ভাল মানুষ তাঁরা ভোটের ময়দানে যেতে চান না। কারণ, ভোটে যাঁরা দাঁড়ান তাঁদের সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়ানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।” আবার দেখুন, মন্ত্রী অখিল গিরি যা দোষ করার তা তো করলেনই। তার উপর কিছু মানুষজন, কিছু রাজনৈতিক দল তাঁর মন্তব্য নিয়ে রাস্তা অবরোধে নামলেন। বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকেও ভুল বুঝিয়ে এই অবরোধে নামানো হল। মনে রাখতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি কোনও জাতপাত-ধর্ম বা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সম্পত্তি নন। রাষ্ট্রপতি পদটি দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননীয় সাংবিধানিক পদ। তাই মাননীয়া রাষ্ট্রপতি এখন কোনও জাত, ধর্মের নিজস্ব নন। রাজনৈতিক দলের তো ননই। দেশের সমস্ত জাতি-ধর্ম-রাজনীতির ঊর্ধ্বে তিনি। তাঁকে কেউ অসম্মানজনক কথা বললে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সেই কথাকে হাতিয়ার করে শুধুমাত্র আবেগের বশে, বাস্তবকে ভুলে, পরের উস্কানিতে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে পথ অবরোধ করে বহু মানুষ, রোগী, পথচারীকে বিপদে ফেলাও উচিত নয়।

কিছু মানুষ অকথা-কুকথা বললেও অন্য সবাই যেন মৈত্রী ভাবনায় প্রীতিরূপে বিদ্যমান হতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী-মন্ত্রীদের কুকথা বলার জন্য দলে সে ভাবে শাস্তির ব্যবস্থা নেই বলেই যার যা মুখে আসে, বলে দেন। এই প্রবণতা খুব দুঃখের ও হতাশার। দেশ ও রাজ্যের রাজনীতির লোকেরা বর্তমানে যত না সমৃদ্ধতর ভারত বা সমৃদ্ধতর রাজ্য গড়ছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি গড়ছেন আত্মসমৃদ্ধি। দুর্মুখ মানুষের কাছে রুচিশীল কথার আশা করাই বৃথা। মধু মৌচাক থেকেই পাওয়া যায়। অন্য কিছু থেকে মধু মেলে না।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এক্তেশ্বর, বাঁকুড়া

সুরক্ষাজাল

বর্তমানে অনলাইনেই সারা হয় যাবতীয় কাজ। অনলাইন মাধ্যমের উপরে যত নির্বরশীলতা বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ছে সাইবার প্রতারণা ও অপরাধের ঝুঁকিও। সাইবার সুরক্ষা হল সেই ব্যবস্থা, যার সাহায্যে যন্ত্র এবং তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকার জন্য সাইবার সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সময়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ পাঠ্যসূচির বিষয় হিসেবে সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চলেছেন (‘উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় হচ্ছে সাইবার সুরক্ষা’, ১৭-১১)। বর্তমান সময়ে যে ভাবে সাধারণ মানুষ অনলাইন কেনাকাটা এবং অনলাইন টাকা-পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারে অংশগ্রহণ করছেন, তাতে এই বিষয়টির উপরে সম্যক ধারণা প্রত্যেকেরই সুনির্দিষ্ট ভাবে থাকা প্রয়োজন। কারণ কোনও একটি নতুন বিষয় আমরা যদি অভ্যাস করতে চাই, সে ক্ষেত্রে সেখান থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে যেমন অবগত থাকা প্রয়োজন, ঠিক তেমনই সেখান থেকে কী কী অসুবিধা হতে পারে, সে বিষয়ে সচেতনতা সর্বাগ্রে জরুরি। অত্যন্ত সঙ্গত কারণেই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংসদ বিষয়টিকে যথার্থ ভাবে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে।

এ ক্ষেত্রে এই বিষয়টি নিয়ে কেবলমাত্র যারা পড়াশোনা করতে চায়, অর্থাৎ যারা পাঠ্য বিষয় হিসেবে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তারাই বিষয়টি সম্বন্ধে ঠিকঠাক অবগত হতে পারবে, অন্যেরা নয়। কিন্তু যদি সামগ্রিক ভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হয়, সে ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে অবশ্যই অন্তত প্রাথমিক জ্ঞান হিসাবে মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, যাতে সকল শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলক ভাবে সচেতনতার অংশ হতে পারে। সাধারণ মানুষ সতর্ক না হলে সাইবার ক্রাইম রুখে দেওয়া খুব মুশকিল। আমাদের প্রযুক্তিবিদরা এই বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ সতর্ক না হওয়া পর্যন্ত তা পুরোপুরি কার্যকর হবে না।

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পথে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ভারত। এ দেশে বর্তমানে ৮০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। তবে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা না এলে এই শক্তি চ্যালেঞ্জ হিসাবে আমাদের সামনে চলে আসবে এবং এই সংক্রান্ত অপরাধের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

সুশীলা মালাকার সরদার , বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা

আরও পড়ুন
Advertisement