Mobile Phone

সম্পাদক সমীপেষু: ভয়ানক আসক্তি

সমাজমাধ্যম ভাল না খারাপ, এ কথা বলার সময় হয়তো এখনও আসেনি। তবে নিশ্চিত ভাবেই, এর ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর ব্যবহার এক শ্রেণির মানুষকে বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৫৬
স্মার্টফোন

স্মার্টফোন

মৈত্রীশ ঘটক বলেছেন, দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষের সমাজমাধ্যমে উপস্থিতি তুলনায় কম (‘আইনের বাঁধন অবশ্যই চাই’, ২১-৯)। বাস্তবে চিত্রটি ভিন্ন। কবি ভারতচন্দ্রের ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়’-এর মতোই, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশের ফেসবুক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ স্বঘোষিত কবি, কেউ সাহিত্যিক বা দার্শনিক।

এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। সমস্যা শুরু হয়, যখন ব্যবহারকারী তাঁর দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাগুলি অপরকে দেখতে বাধ্য করেন। কেউ তাঁর পোস্টে মতামত না দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শুরু হয় ডিজিটাল হিংসা। এখানেই সমাজমাধ্যমের সঙ্গে প্রিন্ট মিডিয়ার মূল পার্থক্য। প্রিন্ট মিডিয়ায় কিছু লিখলে অথবা ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে গেলে তাঁকে একটি সম্পাদকীয় বিভাগ হয়ে আসতে হয়। লেখা বাতিল কিংবা পরিমার্জন হওয়াও আশ্চর্যের নয়। তা ছাড়া বড় প্রিন্ট মিডিয়াতে লেখার সঙ্গে সূত্র এবং তথ্যের সত্যতা প্রমাণের নথি লিপিবদ্ধ করতে হয়। সমাজমাধ্যমে সেই সব একেবারেই ব্রাত্য। ফলে, ভুয়ো খবর, মিথ্যা তথ্য, বিষোদ্গার, রাজনৈতিক দলাদলি, অকথ্য ভাষার প্রয়োগ ছড়িয়ে পড়ে অবাধে। ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ যেন মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ঙ্কর।

Advertisement

সমাজমাধ্যম ভাল না খারাপ, এ কথা বলার সময় হয়তো এখনও আসেনি। তবে নিশ্চিত ভাবেই, এর ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর ব্যবহার এক শ্রেণির মানুষকে বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। কোনও আইন এই প্রবণতাকে বশে আনতে সক্ষম হবে না, যত ক্ষণ না পর্যন্ত মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটে।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

বাঁচার উপকরণ

মৈত্রীশ ঘটক বলেছেন যে, সমাজমাধ্যমের একটা আসক্তিমূলক দিকও আছে। এ কথা মানছি, কিন্তু মানতে পারছি না লেখক-কথিত পরিণাম। সমাজমাধ্যমের দৌলতে বহু মানুষ তাঁর একাকিত্ব দূর করছেন, যেটা আজকের সমাজে একটা বিরাট সমস্যা। সেখানে তিনি যদি তাঁর মনের কিছু কথা ভাগ করে নিতে পারেন, তা হলে একাকিত্ব অনেকটাই লাঘব হয়। এটা ইতিবাচক দিক। এমন একাকী মানুষদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। ভারতে এখন (২০২১) বরিষ্ঠ নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি, এঁদের একটি বড় অংশ একা, কারণ নিকট পরিজনরা বিদেশে, বা দেশেরই অন্য প্রান্তে থাকেন। তাঁরাও তো সুস্থ ভাবে বাঁচতে চান। সমাজমাধ্যমকে তাঁদের বাঁচার একটা উপকরণ হিসাবে আমরা দেখতে পারি।

লেখক বলেছেন, মানুষের মনস্তত্ত্ব এমন যে, নেতিবাচক কথা যা রাগ, ঘৃণা বা ভয় এই ধরনের আবেগকে উস্কে দেয়, তার বিস্তার সহজে হয়। সদর্থক চিন্তা বা আবেগের ক্ষেত্রে তা হয় না। কিন্তু যে কথায় রাগ হয়, ঘৃণা হয়, সেই কথাই তো যাচাই করতে শেখায় সমাজকে, খুঁটিয়ে দেখতে চায়। না হলে মানুষ কেবল এক স্থবিরত্বের প্রতিনিধিত্ব করবে। সেটা নিশ্চয়ই কাম্য নয়। রাগ থেকেই সতীদাহ প্রথার বিলোপ, লজ্জা থেকেই তো বিধবা বিবাহের প্রচলন— এগুলো মানুষের আবেগেরই ফসল, যা ভবিষ্যতে রাগ না হওয়ার, লজ্জা না পাওয়ার অবস্থাগুলো থেকে নিবৃত্ত করে মানুষকে। কথা বলার এই ক্ষেত্রটিকে নষ্ট করা যায় কি?

লেখক বলেছেন যে, সমাজমাধ্যমের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল সমমনস্ক মানুষদের মধ্যেই মেলামেশা ও চর্চার প্রবণতা। ফলে তথ্য যাচাই করার সম্ভাবনা কমে যায়। উত্তরে বলা যায়, সমমনস্ক মানুষদের মধ্যে কথা চালাচালি হলেই কি তাঁদের তথ্য যাচাই করার সম্ভাবনা কমে যাবে? আমি তো দেখি সমমনস্ক মানুষদের মধ্যে যথেষ্ট বাগ্‌বিতণ্ডা চলে সমাজমাধ্যমে, তার থেকে বেশ কিছু তথ্যও উঠে আসে প্রায়শই অপরের যুক্তিকে খণ্ডন করার জন্য, আবার সেই তথ্য নিয়েও চলে বেশ টানাটানি— এগুলো কি নিষ্ফল? সমাজ তো অনেক বারই এ রকম আলোচনা থেকে নিজেকে চিনেছে, নির্যাস নিয়েছে, নিজের মতো করে তথ্যও যাচাই করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগিয়েছে। এ কথা বলাই যায় যে, সমাজমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ হওয়া জরুরি, কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণ যেন নিরপেক্ষ হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্য না হয়।

অম্লান রায় চৌধুরী, কলকাতা-৮৪

দায়িত্ব কার?

মৈত্রীশ ঘটক বলেছেন, “কারও ব্যক্তিগত মতামত বা পছন্দ নিয়ে তর্ক চলে না— তা নিয়ে আমাদের নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে, কিন্তু কে কী দেখবে, বলবে, বা চর্চা করবে, সেটা তার ব্যাপার— তাতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমাদের নেই।” অর্থাৎ সোজা কথায়, সবার মতামত প্রকাশের অধিকার আছে, আবার তা না-শোনারও অধিকার আছে। যিনি এ অধিকার পান, তিনি তা প্রয়োগ করেন। কিন্তু যিনি এ অধিকার পান না, তাঁকে তা অর্জন করতে অন্য পথে যেতে হয়। যেমন এই প্রবন্ধে আছে, বর্তমানে পৃথিবীতে ঐতিহাসিক নানা কারণে দক্ষিণপন্থীদের তুলনায় বামপন্থীদের পিছিয়ে যাওয়া, গণ-আন্দোলনের কথা। এ ক্ষেত্রে বাম ও দক্ষিণ, দুই একেবারে বিপরীত ধর্মের রাজনৈতিক পথ একে অপরের বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করবে, এমনই ধরে নেওয়া হয়। সেখানে ব্যক্তিগত বা দলগত মত যা-ই হোক, তা নিয়ে আরও কারও ‘হস্তক্ষেপ’ সহ্য করা হবে না। কারণ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি প্রতিটি স্তরে প্রত্যেকের অস্তিত্ব ও তার নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়াও সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

এখানে লেখক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন, এ সব নজরদারি কে করবে? এ দায়িত্বের ব্যাপ্তি বিশাল। এ ব্যাপারে অ্যাপ-এর মালিক, দেশে দেশে শাসক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক ও সেই সূত্রে প্রভাবশালী এক তত্ত্ব সামনে আসে, যেখানে সাধারণ মানুষ অসহায়, দুর্বল। অনলাইন সমাজমাধ্যম থাক, কিন্তু তা যেন ব্যক্তিগত সামাজিক সম্পর্ককে দূরে সরিয়ে না দেয়।

শুভ্রাংশু কুমার রায় , চন্দননগর, হুগলি

দাস শ্রমিক

‘আধুনিক দাসত্ব’ (২১-৯) সম্পাদকীয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী। দিন বদলেছে, কিন্তু দাসত্ব বদলায়নি। প্রকাশ্যে নিলাম ডেকে এখন আর মানুষ বেচা-কেনা হয় না ঠিকই, তবে ‘আধুনিক দাসত্ব’ খুবই মারাত্মক! আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন ও আট ঘণ্টা বিশ্রাম এখন ইতিহাস। আইনের চোখে ধুলো দিয়ে ১২-১৪ ঘণ্টা এক নাগাড়ে কাজ, তিন জনের কাজ এক জনের সামলানো, অর্ডার শিট-নোট শিটের তোয়াক্কা না করে উপরমহল থেকে শুধু মেসেজ পাঠিয়ে ছুটির দিনেও ভয় দেখিয়ে কাজ করানো, এ সবই আধুনিক দাসত্বের উদাহরণ। আইএলও-র হিসাব, সওয়া দু’কোটি দাসকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মজুরিহীন এই দাসরা রাতদিন খেটেও শিকার হন শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হেনস্থার, এবং মৃত্যুই হয় পরিণতি!

অমরেশ পাল, পশ্চিম বলাগড়, হুগলি

ডেঙ্গির হানা

‘ডেঙ্গিতে মৃত্যু এখন স্বাভাবিক’ (১৭-৯) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, ঘর বা বাড়ির আশেপাশে জল জমতে দেওয়া যাবে না। পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো নিরাপদ। কিন্তু মানুষের হেলদোল নেই। ভাব দেখলে মনে হয়, সব দায়িত্ব প্রশাসনের। অনেক সময় পুরসভা থেকে খোঁজ নিতে গেলে নাগরিকরা মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। পুরকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা না করলে ডেঙ্গির দাপাদাপি সহজে বন্ধ হবে না।

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

আরও পড়ুন
Advertisement