Sikkim Flood

বাঁধের বিপদ

উত্তর-পূর্ব ভারত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তিস্তা নদীর উপরে তৈরি করা চুংথাম বাঁধটি তিস্তা স্টেজ-থ্রি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীন এবং সিকিমের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক স্তম্ভ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৪৮

—ফাইল চিত্র।

হিমালয় এমন এক পর্বত, যার গঠনকার্য এখনও অব্যাহত। ফলত এই জাতীয় পর্বতে অবস্থিত যে কোনও প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট হ্রদ, হিমবাহ অথবা মানুষের তৈরি করা পরিকাঠামো সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে আশেপাশের জনজীবনের সামনে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০২১ সালে আইআইটি রুড়কী; ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স বেঙ্গালুরু; ইউনিভার্সিটি অব ডেটন, আমেরিকা; ইউনিভার্সিটি অব গ্রাৎজ়, অস্ট্রিয়া; ইউনিভার্সিটি অব জ়ুরিখ, সুইৎজ়ারল্যান্ড এবং ইউনিভার্সিটি অব জেনিভা-র বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণায় সিকিমে অবস্থিত হিমবাহের জলে পুষ্ট দক্ষিণ লোনাক হ্রদ সম্পর্কে সাবধানবাণী দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে হিমবাহের ক্রমাগত গলনের ফলে এই হ্রদের এলাকা এবং জলস্তর উভয়েই বিপজ্জনক ভাবে বৃদ্ধি পায়। ইিমালয়ে অবস্থিত বিভিন্ন হিমবাহের গতিবিধি এবং হ্রদগুলির এলাকা ও জলস্তর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ভারতের জাতীয় আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে আমেরিকার ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস-এর মধ্যে একটি তথ্য বিনিময় চুক্তি বর্তমান। এই চুক্তির মুখ্য উদ্দেশ্য হল হড়পা বানের ছয় থেকে চব্বিশ ঘণ্টা আগেই স্থানীয় প্রশাসনকে সচেতন করা, যাতে প্রাণহানি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়! তবে সাম্প্রতিক হড়পা বানের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা সময়মতো কাজ করেনি, যার অন্যতম কারণ হিমালয়ের চরম অনিশ্চিত ভৌগোলিক গতিবিধি।

Advertisement

উত্তর-পূর্ব ভারত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তিস্তা নদীর উপরে তৈরি করা চুংথাম বাঁধটি তিস্তা স্টেজ-থ্রি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীন এবং সিকিমের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক স্তম্ভ। প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে জানা গেছে, হিমালয় থেকে আসা অতিরিক্ত জল এই বাঁধ থেকে ছাড়ার কারণেই তিস্তার জল হড়পা বানের রূপ ধারণ করে। সরকারি ভাবে যদিও বার বার দাবি করা হয়েছিল, এই বাঁধটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে তৈরি। কিন্তু পরিবেশবিদের মতে, এই জাতীয় যে কোনও বাঁধের নির্মাণ হিমালয়ের স্থিতিশীলতার পরিপন্থী।

বহু অকালমৃত্যু, শতাধিক নিখোঁজ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই ধরনের শিক্ষা যাতে বার বার না নিতে হয়, তাই বাঁধগুলি তৈরি করার ক্ষেত্রে পরিবেশকে বাঁচিয়ে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

অর্ক গোস্বামী, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান

সমাজের দায়িত্ব

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে ভারতে যে ঘটনাই ঘটুক না কেন, তার থেকে লাভের গুড় তুলে ভোটের বাক্সে নিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় কেন্দ্রের শাসক দল। জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মহিলাদের জন্য উপহার’ (৪-১০) প্রসঙ্গে সঠিক ভাবেই বলেছেন, ভারতে ঘটেযাওয়া সমস্ত ঘটনাকে, সে ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ হোক, বাচন্দ্রযানের সাফল্য কিংবা রামমন্দির গঠন, শাসক দলের পছন্দের ছাঁচে ফেলে ভোটের বাক্স দখলের চেষ্টা চলেছে।

মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ইসরো-র নিরন্তর প্রয়াস জারি আছে। তাতে কখনও সাফল্য আসে, কখনও বা ব্যর্থতা। কিন্তু চন্দ্রযান-৩’এর আলোয় আলোকিত হতে কেন্দ্রীয় সরকারের যে আগ্রহ দেখা গেল, চন্দ্রযান-২’এর ব্যর্থতার ভাগ নিতে কিন্তু আমরা দেখিনি। মহিলা সংরক্ষণ বিল, যেটা মহিলাদের স্বাভাবিক অধিকার, তাকে বিশেষ ভাবে উপহার হিসাবে দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা বড় চোখে লাগে। দেশের অর্ধেক নাগরিকের জন্য সংরক্ষণ তাঁদের ন্যায্য দাবি। এটাকে উপহার বা অর্চনা হিসাবে দেখানো তাঁদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা। ইসরো-র শাড়ি পরা বিজ্ঞানীদের দেখিয়ে ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতির জয়গান গাওয়ার মধ্যে দিয়েও মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। কেন এই প্রয়াস? কেন্দ্রের শাসকের কাছে সংস্কৃতি মানে প্রাচীন সংস্কৃতি, নারীর পোশাক মানেই শাড়ি। তাই মাঝে-মাঝেই অন্য আধুনিক, কেজো পোশাক পরিহিত মহিলাদের সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করেন শাসক দলের নেতারা। এর থেকে নারীদের প্রতি তাঁদের অশ্রদ্ধাই প্রকাশ পায়। ভাবতে অবাক লাগে, এঁরা এমনকি রাজস্থানের রূপ কাঁওয়ারের সতী হওয়াকেও গৌরবান্বিত করার চেষ্টা করেন। এর পিছনে আছে শাসকের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অনীহা। অবিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের মোড়কে চালাবার চেষ্টা। কর্মহীনতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মত প্রকাশের অধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ইত্যাদির মতো জ্বলন্ত সমস্যার বদলে ধর্মীয় মেরুকরণ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষের মনে। শিক্ষিত সমাজকেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসে মূল সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে হবে, না হলে সমূহ বিপদ।

সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

রেফারি

‘রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে জয় হাতছাড়া ইস্টবেঙ্গলের’ (৫-১০) শীর্ষক প্রতিবেদন বিষয়ে কিছু কথা। প্রথম শ্রেণির সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টে বাংলার ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বারংবার রেফারির পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ক্ষোভ বাড়ছে লাল-হলুদ সমর্থকদের। প্রশ্ন উঠছে, দেশীয় রেফারিদের মান নিয়ে। ফুটবল মাঠের বহু বিতর্কের অবসান ঘটাতে চালু হয়েছে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ‘ভার’।

অত্যাধুনিক ক্যামেরার দ্বারা খেলা চলাকালীন সময়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত যাতে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে নিখুঁত ভাবে নেওয়া যায়, তার জন্যই মূলত এই ‘ভার’ প্রযুক্তি। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম বারের জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এই পদ্ধতি। মূলত রেফারির নেওয়া চার ধরনের সিদ্ধান্তকে আরও নির্ভুল করার জন্যই এই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় আজ কার্ড, পেনাল্টি, অফসাইড সম্পর্কিত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের অবসান ঘটেছে। রেফারির দোষে আর বদলে যাবে না ম্যাচের ভাগ্য। দুর্ভাগ্যবশত এই ব্যবস্থা এখনও ভারতীয় ফুটবলে না আসায় হতাশা গ্রাস করছে ফুটবলপ্রেমীদের। ফুটবলকে বাঁচাতে আইএসএল কর্তৃপক্ষ এবং সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার সময় এসেছে ভারতীয় ফুটবলে ‘ভার’ সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করার।

অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

সুরের ধারা

‘শতবর্ষের আনন্দকণিকা’ (কলকাতার কড়চা, ৭-১০) এবং রুশতী সেনের প্রবন্ধ ‘তাঁর গানে মনের বৈভব’ (৮-১০) প্রসঙ্গে কিছু কথা। সুচিত্রা মিত্র আর কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন পরস্পরের বন্ধু ছিলেন, তেমনই গানের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথাও শোনা যায়। কণিকার গড়ে ওঠায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের অমৃত-স্পর্শ ছিল, আর সুচিত্রার ছিল নিজস্ব স্মার্টনেস। কণিকার মৃত্যুর পর নাকি সুচিত্রা বলেছিলেন যে, মোহর চলে গেছে, তাই তিনি আর শান্তিনিকেতনে যাবেন না। অন্তরে এমনই ভালবাসার সম্পর্কের ফল্গুধারা বইত ওঁদের।

সহজাত সঙ্গীত প্রতিভার কারণে রবীন্দ্রনাথের ‘কণিকা’ (ডাকনাম মোহর) কিছু দিনের মধ্যেই কবির স্নেহভাজন হয়ে পড়েন। ১২ অক্টোবর শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষের সূচনা, যা রবীন্দ্র অনুরক্ত মানুষের কাছে অবশ্যই স্মরণযোগ্য। ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’— কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। বিশেষত টপ্পা অঙ্গের রবীন্দ্রসঙ্গীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই গায়িকাকে নিয়ে ১৯৯৩ সালে বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ মোহর নামে তাঁর জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই গায়িকা ১৯৭৯ সালে সঙ্গীত নাটক অকাদেমি, ১৯৮৬-তে পদ্মশ্রী, ১৯৯৭ সালে বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম-এ সম্মানিত হন।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

আরও পড়ুন
Advertisement