G20 summit

সম্পাদক সমীপেষু: ভারতের ভূমিকা

আলোচনার অনেক বিষয় থাকলেও এই জোটগুলোর সম্মেলনে কথাবার্তার কেন্দ্রে জায়গা করে নেয় আমেরিকা ও চিন। প্রবন্ধের আলোচনাতেও তারা গুরুত্ব পেয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১৬
জি-২০ পরের সম্মেলনের দায়িত্ব দিয়েছে ভারতকে।

জি-২০ পরের সম্মেলনের দায়িত্ব দিয়েছে ভারতকে। ফাইল চিত্র।

জি-২০ সম্মেলনে ভারতের কৃতিত্ব গোষ্ঠীগত রাজনীতির কাছে স্বীকৃত হলেও, সে স্বীকৃতিকে সর্বজনীন বলা যাবে কি না, প্রশ্ন আছে (‘ভারতের কৃতিত্ব, এখনও অবধি’ ২১-১১)। ভারতের কৃতিত্ব মূল লক্ষ্য হতে পারে না। জি-৭, জি-২০, জি-৭৭, ‌ইইউ, রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ নানা জোট অনেক বছর নানা ভাবে কাজ করছে, বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বলছে। এটা কৃতিত্ব হতে পারে, যদি বিশ্ববাসী স্বস্তিতে থাকে। অথচ, প্রবন্ধে যথাযথ ভাবে উঠে এসেছে, বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে অতি প্রভাবশালী সদস্য দেশগুলির নানা পরিসংখ্যান, যেখানে দেখা যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান ভয়ানক বৈষম্যের কথা। আজ বিশ্বে কোনও রাষ্ট্র, দেশ বিচ্ছিন্ন নয়। এক জঙ্গি দেশ যুদ্ধ করলে, বোমা ফেললে, দূষণ ছড়ালে অন্য দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ আখেরে বিশ্ব অর্থনীতি, বিশ্ব রাজনীতি, পরিবেশ নীতি, সর্বোপরি বিশ্ব শান্তিতে জোটবদ্ধ প্রয়াসের প্রতিফলন তেমন দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব জুড়ে দরিদ্র, অসুস্থ, প্রান্তিক, বঞ্চিত, অনুন্নত মানুষ সেই তিমিরেই আছেন। আর এই সব জোটের আলোচনায় মতামতের ক্ষেত্রে ভারত সেই গতানুগতিক পথেই চলছে, যা আশঙ্কা দূর করতে পারছে না। এ অবস্থায় জি-২০ পরের সম্মেলনের দায়িত্ব দিয়েছে ভারতকে। সবাই তাকিয়ে আছে ভারতের দিকে। কারণ, এই উপমহাদেশে ভারতের রাষ্ট্রনীতির ঐতিহ্য, ভৌগোলিক অবস্থান, সবুজ পরিবেশের প্রাচুর্য, সর্বোপরি পরমাণু শক্তির সামর্থ অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে।

আলোচনার অনেক বিষয় থাকলেও এই জোটগুলোর সম্মেলনে কথাবার্তার কেন্দ্রে জায়গা করে নেয় আমেরিকা ও চিন। প্রবন্ধের আলোচনাতেও তারা গুরুত্ব পেয়েছে। ইদানীং রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আর এক জোট ন্যাটো জায়গা করে নিয়েছে। প্রবন্ধে উল্লেখ আছে বিশ্ব জুড়ে পারমাণবিক শক্তির ভারসাম্যের অভাব তথা ব্যবহারের আশঙ্কার কথা। উল্লেখযোগ্য, সম্প্রতি শেষ হওয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত সিওপি-২৭ সম্মেলনের কথা। ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি রুখতে তহবিলের সিদ্ধান্ত’ শীর্ষক সংবাদ (২২-১১) অনুযায়ী, “কম উন্নত দেশ, ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র এবং আর্থিক ভাবে কোণঠাসা দেশগুলি জানায়, তারা এই তহবিল আদায় না করে সিওপি-২৭ সম্মেলন ছাড়বে না।” এই ক্ষতিপূরণ তহবিলের বিষয়টি কত দূর এগিয়ে নিয়ে যায় জি-৭৭ ভুক্ত রাষ্ট্রগুলি, তা-ই এখন দেখা দরকার। কিন্তু ‘তহবিলের বিষয়’ ক্ষতিপূরণ পরিবেশনীতির পক্ষে নয়, এতে সমস্যা দূর হয় না, জিইয়ে রাখা হয় মাত্র। একই কথা প্রযোজ্য পরমাণু বোমা নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে। এত খরচ করে, সময় নষ্ট করে ‘ফাঁকা বুলি কপচানোর মঞ্চ’ শুধু জি-২০ নয়, বাকি মঞ্চগুলিও সমান দায়ী।

Advertisement

ভারতকে সাহস করে কৃতিত্ব দাবি করতে হলে এশিয়ার মূল শক্তি রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে সখ্য বাড়াতেই হবে। এতে আমেরিকা, ব্রিটেন, বাকি ইউরোপের সঙ্গে মতান্তর হলেও ভারতের উপায় নেই। জি-২০ দেশগুলির বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে ভারতকে তার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে। সেখানেই প্রমাণিত হবে ভারতের কৃতিত্ব।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

রাজনীতির গ্রাসে

‘সিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা রামমন্দিরে’ শীর্ষক প্রতিবেদন (২২-১১) পড়ে এই চিঠি। দেশের বিজ্ঞানীরাও কার্যত রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নন। তা বলে ওই বিজ্ঞানীরা সরাসরি রামমন্দিরে গিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষকে হাতেকলমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ২০২৪ সালে রাম নবমীর দিন প্রথম সূর্যরশ্মি রামলালার মাথায় ঠিক কেমন করে, কখন, কী ভাবে এসে পড়বে, এ চিত্র সত্যিই আমাদের বিস্মিত করে! কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ২০২৪ সালে রামমন্দির উদ্বোধনের দিনটি। কয়েক দিন আগে রামমন্দির নির্মাণ কমিটির বৈঠক হয়। তার আগের দিন (২১ নভেম্বর) সিএসআইআর-এর অধীন সংস্থা সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীদের একাংশ সেখানে যান। রামলালার মূর্তির মাথায় কী ভাবে কখন সূর্যের আলো এসে পড়বে, তা প্রোজেক্টরের সাহায্যে দেখানো হয়। কী ভাবে বিষয়টি সম্ভব হয়েছে, সেই প্রযুক্তিও নির্মাণ কমিটির কর্তাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

১৯৪২ সালে তৈরি করা হয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএসআইআর। স্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, রসায়নবিজ্ঞান, ধাতুবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান-সহ নানা বিষয়ে সেখানে গবেষণা হয়। এমন এক ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানকে রামমন্দিরের সঙ্গে যুক্ত করায় ভ্রু কুঁচকেছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল। লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, প্রতিষ্ঠানের গৈরিকীকরণ আরও বাড়বে।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

অশালীন

রাজনীতিতে বাড়তে থাকা কু-কথার মধ্য দিয়ে যে ক্লেদাক্ত পরিবেশটি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে ‘অতলের আহ্বান’ (১৮-১২)সম্পাদকীয়টির জন্য ধন্যবাদ। বাস্তবিক সরকার এবং বিরোধীপক্ষের নেতা-মন্ত্রীরা কেউ ভাবছেন না, এমন সব কথার কত মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে। সত্য যে, রাজনীতি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাতেই কথা বলে। কিন্তু রাজনীতিরও দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠের অভ্যাসকে অশালীনতার সংক্রমণ থেকে রক্ষার। তাঁরা সেই দায়িত্ব বিস্মৃত হচ্ছেন।

ব্যক্তি আক্রমণ যে ভাবে রাজনীতির মূল স্রোতে পরিণত হচ্ছে তাতে সন্দেহ হয়, ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদের নীতিগত ফারাক ক্রমাগত কমে আসছে কি না। না হলে ক্ষমতাসীনদের নীতিগত বিচ্যুতিগুলি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার পরিবর্তে বিরোধীরা এমন ব্যক্তি আক্রমণে যাচ্ছেন কেন? বাস্তবে রাজনীতি জনস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করার পরিবর্তে যত ব্যক্তিস্বার্থ, সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থের প্রতিনিধি হয়ে উঠছে, ততই তা ব্যক্তি আক্রমণকে লক্ষ্য করে তুলছে। তবে নাগরিক সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে যে কোনও রাজনীতিকে নির্বিচারে গ্রহণ না করার। নাগরিক সমাজের নীরবতা নেতাদের কুকথার প্রতি সম্মতি হিসেবে ধরা হয়।

সমর মিত্র, কলকাতা-

অনাবাসীর ভোট

শুধুমাত্র ভোট দেওয়ার জন্যে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক অথবা মহারাষ্ট্র, কেরল থেকে পশ্চিমবঙ্গে নিজের ভোট কেন্দ্রে আসা বড় সমস্যা। আশা করতে পারি কি যে, আগামী ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অনাবাসী ভারতীয় বা পরিযায়ী শ্রমিক নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে ভোট দিতে পারবেন?

কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাব অনুযায়ী, অনাবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ষাট শতাংশ ভোট দেওয়ার যোগ্য। পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা এর অনেক গুণ বেশি। সুপ্রিম কোর্টেও এই ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তথ্যের নিরাপত্তার জন্যে নির্বাচন কমিশন হয়তো ই-ভোটিং বা ইন্টারনেট-এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণে রাজি নয়। এই কারণেই ইভিএম মেশিন কখনও নেটওয়ার্ক-এ সংযুক্ত করা হয় না। ‘প্রক্সি ভোট’-এর ক্ষেত্রে ভোটারের কোনও আত্মীয় তাঁর হয়ে ভোট দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও উঠেছে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন। আশা করব, নির্বাচন কমিশন একটি উপযুক্ত সমাধান বার করবে।

শঙ্কর দে, কলকাতা-৭৪

আরও পড়ুন
Advertisement