DA Case

সম্পাদক সমীপেষু: ডিএ-র দাবি কেন?

রাজ্য জুড়ে চলছে সরকারি চাকরিজীবীদের ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন। ডিএ, অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতার এই সমস্যা শুরু বামফ্রন্ট আমলের শেষ থেকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ ০৪:১২
A Photograph of DA Protest

রাজ্য জুড়ে চলছে সরকারি চাকরিজীবীদের ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন। ফাইল ছবি।

রাজ্য জুড়ে চলছে সরকারি চাকরিজীবীদের ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন। সরকার ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করে আন্দোলনে জল ঢালতে চেষ্টা করেছে। তথাপি বকেয়া ৩৩ শতাংশ ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মীরা অনড়। এ দিকে সাধারণ মানুষ ভেবে পাচ্ছেন না, এত মাইনে পাওয়ার পরও সরকারি কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন কী ভাবে!

চলতি বাজারদরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সরকারি কর্মীরা যাতে সততার সঙ্গে জীবন সংগ্রামে লড়াই চালিয়ে প্রশাসনিক কর্মে সহযোগিতা করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই মহার্ঘ ভাতা প্রদান। অর্থাৎ, প্রত্যেক কর্মী যাতে নিজের দায়িত্ব মনোযোগ সহকারে পালন করতে পারেন, তার জন্য ভাতা। পাশাপাশি, সরকারি চাকরিজীবীরা যাতে অর্থের অভাবে অন্য কর্মে নিযুক্ত না হন, বা জনগণের থেকে অবৈধ অর্থ সংগ্রহে বাধ্য না হন, ভাতা প্রদান তার জন্যেও। সরকারের সেই উদ্দেশ্য সাধন হয়েছে কি না, জনগণ যথেষ্ট ভাল জানে।

Advertisement

প্রথমত, ভাল থাকার শেষ নেই। মাসিক বেতন কত হলে এক জন মানুষ সুষ্ঠু ভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারেন, তার নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। দ্বিতীয়ত, যথেষ্ট বেতন পাওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক দফতরগুলিকে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে অস্থায়ী শিবির করে পরিচালনা করতে হচ্ছে; মহার্ঘ ভাতার দাবিদারদের দফতর যদি সঠিক কাজ করে থাকে, তবে গণপরিষেবার জন্য অস্থায়ী শিবির কেন? শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে কেন? ঠিক কত বেতন হলে সরকারের সমস্ত দফতর ১০০ শতাংশ নিয়মমাফিক চলবে?

কেন্দ্রের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার মধ্যে তুলনাই বা কেন? কেন্দ্রের বৃহত্তর আয়ের সঙ্গে রাজ্য সাযুজ্য না রাখতেই পারে। লিখিত কোনও আইন আছে কি যে, কেন্দ্রের হারে রাজ্যকেও মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে? পাবলিক সার্ভিস কমিশন, স্টাফ সিলেকশন কমিশন প্রভৃতি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োজিত কর্মীরাই শুধুমাত্র কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত মহার্ঘ ভাতার দাবিদার। আরও সহজ ভাবে, যাঁরা সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর সদস্য, তাঁরাই একমাত্র মহার্ঘ ভাতার দাবিদার। এখন প্রশ্ন হল, যে কর্মীরা বিক্ষোভ আন্দোলনে আছেন, সবাই কি আইনত মহার্ঘ ভাতার দাবিদার? ঘোলা জলে মাছ ধরতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও নেমে পড়েছে। সেই নেতারাও সকলের জন্য মহার্ঘ ভাতার দাবিতে বক্তব্য পেশ করছেন। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা, সত্যের জন্য নয়।

ডিএ, অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতার এই সমস্যা শুরু বামফ্রন্ট আমলের শেষ থেকে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে বামফ্রন্ট সরকার শেষ বারের মতো সরকারি কর্মীদের খুশি করার চেষ্টায় সকলের জন্য মহার্ঘ ভাতা চালু করে দেয়। সেই নীতি রাজ্য সরকারের কাছে বুমেরাং হয়ে উঠেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা’সহ অন্য রাজ্য সরকারি কর্মীদের হঠাৎ বেতন বৃদ্ধি এই নীতির ফল। কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মীদের উদ্দেশ্যে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই কর্মীরা ছাড়াও স্কুল শিক্ষক-সহ আরও অনেক ধরনের কর্মীকে মহার্ঘ ভাতা দেয়। ফলে কেন্দ্রীয় কর্মী এবং রাজ্য কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার মধ্যে পার্থক্য স্বাভাবিক।

রাজ্য সরকারের তরফে বলা হচ্ছে কেন্দ্রের কাছে প্রচুর টাকা বকেয়া। সেই টাকার জন্য কর্মীরা দাবি করুক, তবেই সমস্যা মিটবে। এই তথ্য ঠিক নয়। কেন্দ্র বকেয়া মিটিয়ে দিলেও তা দেবে বিভিন্ন খাতে। মহার্ঘ ভাতার খাতে যা দেওয়া হবে, তা যদি যাঁদের উদ্দেশে দেওয়া হচ্ছে কেবল তাঁরাই না পায়, অনেকের মধ্যে বণ্টন করা হয়, তবে হিসাব মিলবে কী ভাবে? এই কারণেই অন্যান্য রাজ্যে মহার্ঘ ভাতার পার্থক্য এতটা নেই।

কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রভৃতি প্রকল্প কারও কারও জন্য অবশ্যই কল্যাণমূলক। কিন্তু দান খয়রাত না পেলেই জনতা বেঁকে বসতে পারে, সেই আতঙ্কে সরকারি টাকার মোচ্ছব চলছে। এটা কখনওই সুস্থ রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থা হতে পারে না। মহার্ঘ ভাতা বণ্টনের ভুল নীতিও সেই ধ্বংসযজ্ঞে ঘি ঢালছে। কর্মবিরতি এই ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ কী হতে পারে? একদা বামফ্রন্ট সরকারের চালু করা ‘সবার জন্য মহার্ঘ ভাতা’ নিয়মটি বাতিল করে বর্তমান রাজ্য সরকার মহার্ঘ ভাতার সঠিক আইনটি চালু করতে পারে। রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা প্রাপ্তি প্রসঙ্গে নতুন আইন না আসা পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা আর কোনও দিন বৃদ্ধি পাবে না। তবে বর্তমান সরকারের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে হয়তো সেই ধরনের কোনও কিছু ঘটতে চলেছে।

বরুণ মণ্ডল, রানাঘাট, নদিয়া

মধুর শাসন

‘ফেল’ (২০-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি পড়ে এক পুরনো বাংলা ছবি কখনো মেঘ-এর একটি জনপ্রিয় গান মনে পড়ল। কচিকাঁচাদের নিয়ে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে নায়িকার গানের শুরুটি ছিল এ ভাবে— “সব দুষ্টু ছেলেরাই লক্ষ্মী/ তারা বাঁধনছাড়া পক্ষী।/ সব দিগ্বিজয়ী বীর/ যদি সঙ্গে থাকে ভয় কী।।” তবে সিনেমায় দুষ্টু ছেলেদের নিয়ে যে জয়গানই গাওয়া হোক, এই শিক্ষাব্যবস্থায় কঠিন শাসন-দণ্ডের জেরে অতি-দুরন্ত শিশুর কপালে আজও অনেক ভোগান্তি। তাই পাঁচ বছরের একটি অতি চঞ্চল শিশুর দুরন্তপনার জন্য কলকাতার একটি প্রাথমিক স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাকে ‘সাসপেন্ড’ করেছে।

প্রশ্ন হল, শিক্ষার অধিকার আইনে শিশুর মানসিক ও আচরণগত সমস্যার জন্য তাকে বর্জন বা উপেক্ষা করা বেআইনি হলেও, কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন নীতিবিরুদ্ধ কাজ আজও চালিয়ে যাবে? ‘প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সাহচর্য’ এবং ‘স্পেশাল এডুকেটর পদে নিয়োগ’— প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় এ রকম জরুরি কার্যক্রমকে যথোচিত ভাবে প্রয়োগ ও গ্রহণ করবে কবে?

একটি দুরন্ত শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে গড়ে তুলতে হলে কেবল সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রণালীই যথেষ্ট নয়, শিক্ষকের ভূমিকাটিও হতে হবে সর্বাংশে প্রকৃত আদর্শবাদী ও মানবিক। এই প্রসঙ্গে অনেক কাল আগের এক মাস্টারমশাইয়ের কাহিনি স্মরণ করা যাক।

একটি গ্রামীণ প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে জনা কুড়ি ছাত্র পড়ত। এক অতি দুষ্টু ছেলে সহপাঠীর দামি কলম চুরি করলে ক্লাসে শোরগোল পড়ে যায়। মাস্টারমশাই ক্লাস নিতে এলে যে ছাত্রের কলমটি চুরি হয়েছিল, কাঁদতে কাঁদতে সে শিক্ষককে নালিশ জানায়। শিক্ষক সব ছাত্রকে চোখ বন্ধ করে দেওয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াতে বলেন। এ দিকে যে দুষ্টু ছাত্রটি চুরি করেছে, সে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে ওঠে। শিক্ষক কিন্তু কলমটি ওর পকেট থেকে খুঁজে পেলেও, কোনও কথা না বলে প্রকৃত মালিককে দিয়ে দেন। কাউকে কোনও প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ, কিছুই করেননি। দুষ্টু ছাত্রটি প্রতিজ্ঞা করে, জীবনে অন্যের জিনিস সে আর ছুঁয়েও দেখবে না।

বহু বছর পর গ্রামের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে সেই ছাত্রটি, যিনি তখন সমাজের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই বৃদ্ধ শিক্ষককে দেখতে পেলেন। প্রণাম করে জানান, সে দিন যে ভাবে শিশুমনের ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে শিক্ষক তাকে রক্ষা করেছিলেন, তা তিনি ভোলেননি। শুনে শিক্ষক জানান, সে দিন তিনিও তাঁর নিজের চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। কারণ, যে ছাত্রই কলম নিয়ে থাকুক, সে যে নিজেকে সংশোধন করতে পারবে, সে বিষয়ে তিনি ছিলেন নিশ্চিত।

হরিনাভির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতি দুরন্ত ছাত্রটির পাশে ওই মাস্টারমশাইয়ের মতো আদর্শবাদী যদি কোনও শিক্ষক থাকতেন, তবে কি স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই পাঁচ বছরের অবাধ্য শিশুটিকে এ ভাবে ‘সাসপেন্ড’ করতে পারতেন?

পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি

ব্যাগের দাম

বারাসতে একটি ওষুধের দোকানে দুটো ওষুধ কেনার সঙ্গে ক্যারিব্যাগের দাম দু’টাকা করে নিচ্ছে। ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে ব্যাগের ব্যবসাও করা যায় কি? ব্যবসায়ীরা কি জিনিস কেনার সঙ্গে বিনামূল্যে ক্যারিব্যাগ দিতে বাধ্য নন?

অমিতাভ দাশ, কলকাতা-১২৬

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement