ভারতের আকাশে বর্তমানে যে স্বৈরতন্ত্রের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে, সেই প্রেক্ষাপটে ‘স্বৈরাচারের বন্ধু ছদ্মবিজ্ঞান’ (১৬-১১) লেখাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। ইতিমধ্যেই অসমের ডিটেনশন ক্যাম্প, বর্ডার সিকিয়োরিটি ফোর্স-এর নজরদারির সীমা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা, সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষদের উপর হিংসাত্মক আক্রমণ ও হত্যার মতো ঘটনা স্বৈরতন্ত্রের মুখোশ খুলে দিয়েছে। শুধু ইউজেনিক্স নয়, বিজ্ঞানমনস্কতা, বৈজ্ঞানিক মূল্যবোধকেও বিকৃত করার কাজটা সমানে চালিয়ে যায় স্বৈরাচারী শক্তি। রাষ্ট্রীয় উৎসাহে ভারতে এখন এমনটাই ঘটছে এবং তা ক্রমবর্ধমান। ১০৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাই ভূতত্ত্বের অধ্যাপককে বেদ-এ ডাইনোসরের উল্লেখ রয়েছে বা ব্রহ্মা ডাইনোসরের সৃষ্টি করেছিল জাতীয় মন্তব্য করতে দেখা যায়। গণেশের দেহে হাতির মাথা প্রতিস্থাপনই নাকি প্রথম প্লাস্টিক সার্জারির উদাহরণ— এই ঘোষণাও বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চেই। গো-হত্যার সঙ্গে ভূমিকম্পের যোগ, গরুর কুঁজে সোনা খোঁজার মতো প্রশ্ন সাজিয়ে অনলাইন পরীক্ষার কথাও ঘোষণা করা হয়। মনুবাদী-মৌলবাদী মানসিকতা দেশের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যকে বিকৃত করেই চলেছে। মানুষেরই তৈরি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে মানুষের মুখ্য পরিচয় হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টার মাধ্যমে মানবতাবাদের প্রাথমিক শর্তগুলোকে অস্বীকারের যজ্ঞ চলছে। সমস্ত ধর্মের মৌলবাদীদের একই কাজ— ধর্মের দোহাই দিয়ে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা ও মানবতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া।
ভবানীপ্রসাদ সাহু
কলকাতা-৪১
অপবিজ্ঞান
‘স্বৈরাচারের বন্ধু ছদ্মবিজ্ঞান’ শীর্ষক স্বাগতম দাসের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য সংযোজনের জন্য এই চিঠি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকা, জার্মানি হয়ে এই ইউজেনিক্স বা সুপ্রজননের অপবিজ্ঞান ছায়া বিস্তার করে জাপানে। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানি যতটা নিন্দিত বা ধিকৃত হয়, তার এক শতাংশও জাপান হয় না। অথচ, এই দু’টি দেশ সমান দায়ী। ১৯৪৮ সালে জাপান ‘ইউজেনিক প্রোটেকশন ল’ বলবৎ করে এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই আইন চালু থাকে। প্রায় ১৭ হাজার জাপানি নাগরিক এই কুখ্যাত আইনের শিকার হয়েছিলেন। এর পিছনে যুক্তি ছিল একই— জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সুস্থ-সবল জাতি গড়ে তোলা। এক সন্তান নীতি নিয়ে চিন আজ পিছু হটছে। জাপানেও জনসংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। জাপান সরকার এখন জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য নানা রকম পরিকল্পনা করছে। তা সত্ত্বেও এ দেশের কিছু মানুষ, যাঁদের জনসংখ্যাতত্ত্ব সম্বন্ধে ন্যূনতম জ্ঞান নেই, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের আইন বানানোর জন্য ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নৃত্য করে থাকেন। অবশ্য তাঁরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে ‘ইউজেনিক্স’ আমদানি করতে চাইলে একটাই কথা বলার থাকে, সাধু সাবধান!
কুশল মিত্র
কলকাতা-৪
অভিশাপ?
‘স্বৈরাচারের বন্ধু ছদ্মবিজ্ঞান’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে সুস্থ সন্তান বনাম নিখুঁত সন্তান, এই দুই ভাবনার অদৃশ্য বিভাজনরেখা প্রসূত নিত্যনতুন দ্বন্দ্বটিকে ছুঁয়েছেন প্রবন্ধকার। প্রসঙ্গটি চিরকালীন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বারেবারেই প্রসঙ্গটিকে সাম্প্রতিক করে তোলে। ‘জিন এডিটিং’, ‘ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ’-এর মতো সর্বাধুনিক পদ্ধতিগুলির যথাযথ ব্যবহার সন্দেহাতীত ভাবে আশীর্বাদই। কিন্তু এই আবিষ্কারগুলির কতটা সামাজিক পরিসরে গ্রহণযোগ্য বা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগযোগ্য, তা বিশেষ ভাবে নির্ভরশীল সেই সময়কার নিয়ামক সংস্থার ভাবনা এবং আইন প্রয়োগের সদিচ্ছার উপর। অন্য বিশেষ বিপদ ও বিপত্তিগুলি হল চোরাপথের ব্যবহার, কালোবাজারি এবং আইন প্রয়োগে শিথিলতা।
তৎকালীন জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর ভয়াল কর্মকাণ্ডে চরম শঙ্কিত পৃথিবী জন্ম দিয়েছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানে নীতিশাস্ত্রের প্রাথমিক আচরণ বিধির। ন্যুরেমবার্গ কোড, জেনিভা ডিক্লারেশন পেরিয়ে, হেলসিঙ্কি ডিক্লারেশন এবং তার বিভিন্ন সংশোধন আজ চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে কোনও গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। এথিক্যাল কমিটির সম্মতিসূচক ছাড়পত্র ছাড়া বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা অনৈতিক। কোনও ‘পিয়ার রিভিউড বৈজ্ঞানিক পত্রিকা’ এই অনুমতি ছাড়া গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারে না।
বিজ্ঞান গবেষণার পরিসরে সরকারের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে ফিরে ফিরে আসে রাজনীতির প্রসঙ্গ। আসে ক্ষমতাবানের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। এখনকার শাসকদের ভাবনার দৈন্যদশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে, রাজনীতি অবহেলার বস্তু নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ শাখার সর্বোত্তম পদাধিকারীরও যথাযথ মত প্রকাশে ইতস্তত ভাবটি বড় বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। কোন বিষয়ে গবেষণা হবে, কোথায় হবে, কে বা কারা গবেষণায় অনুদান পাবেন— এই ব্যাপারগুলোও তাঁরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কারণ রাজনীতির কারিগরদের হাতেই আসল ক্ষমতা। ‘ইয়েসম্যান’ না হলেই নেমে আসে ক্ষমতাবানের খাঁড়া।
সুকুমার বারিক
কলকাতা-২৯
স্মৃতিবিজড়িত
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম অগ্রদূত। প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানী হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় গঙ্গা তীরবর্তী কালসাপা সেচ বাংলোয় কিছু দিন গবেষণা করেছিলেন। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই সুন্দর জায়গাটা বর্তমানে সন্ধের পর থেকেই দুষ্কৃতী ও নেশাখোরদের দখলে চলে যায়। চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে মদের বোতল ও আবর্জনা। শীতকালে চড়ুইভাতির সময়ে বহু প্রাচীন দুর্মূল্য গাছের নীচে আগুন ধরিয়ে রান্নার আয়োজন করা হয়। ফলে গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৩০ নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে উলুবেড়িয়া পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে আবেদন, মহান বিজ্ঞানীর স্মৃতিবিজড়িত এই সুন্দর স্থানটিকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ করা হোক। দুষ্কৃতীদের আখড়া নয়, এটিকে সাধারণ মানুষের দ্রষ্টব্য স্থান হিসাবে গড়ে তোলার আবেদন জানাচ্ছি।
অজয় দাস
উলুবেড়িয়া, হাওড়া
তালিবানি হুকুম
দ্বিতীয় বার আফগানিস্তান দখল করার সময় ও তার আগে তালিবানের তরফে বলা হয়েছিল যে, তারা আগের মতো কড়া বা নির্মম হবে না। মহিলাদের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষিত হবে। কোনও রকম ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না। কিন্তু তালিবান মন্ত্রিসভা গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তালিবানরা আফগানদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে দেয়। অনেক মানুষ খুন হন। বহু সাংবাদিকের উপর হামলা হয়েছে। মহিলাদের উপর হাজার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কলেজে যাওয়া বন্ধ। সহশিক্ষা বন্ধ। চাকরি করার ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নতুন ফতোয়া হল, মহিলা চরিত্রাভিনেতা আছেন এমন কোনও ধারাবাহিক বা অনুষ্ঠান আফগান টিভি চ্যানেলে দেখানো যাবে না। সংবাদপাঠিকাদের হিজাব অবশ্যই পরতে হবে।
অর্থাৎ, যা যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার কোনওটাই মানা হচ্ছে না। তালিবান সরকার অবশ্য এই নির্দেশিকাকে সরকারি নীতি বা নিষেধাজ্ঞা বলতে নারাজ। তাদের মতে এগুলি কিছু ধর্মীয় নির্দেশাবলি। আজকের আধুনিক যুগে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত নিন্দনীয়, অনৈতিক এবং অনভিপ্রেত। এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হওয়া উচিত। রাষ্ট্রপুঞ্জের উচিত এই সব অযৌক্তিক নির্দেশিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রয়োজনীয় কড়া পদক্ষেপ করা।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি