Protest

সম্পাদক সমীপেষু: পথ আটকে বিক্ষোভ?

রোগীদের জন্য জাতীয় সড়কে অন্তত ছ’ফুট চওড়া একটি লেন তৈরি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৪:৩৩

‘অবরোধের বলি বালক’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি (১১-১১) প্রসঙ্গে কিছু কথা। জগদ্ধাত্রী বিসর্জনে বেহারাদের কাঁধে বাঁশের মাচা (সাং)-র দাবিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে গভীর রাতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভে আটকে পড়ে প্রাণ হারাতে হল তরতাজা ফুটফুটে সাত বছরের বালক সাকিবুলকে। বিক্ষোভকারীদের কি কখনও টনক নড়বে না! বিক্ষোভের ফলে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হন। বহু অসুস্থ রোগীকে নিয়ে ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনো যায় না। অনেক সময় চাকরিপ্রার্থীরা ঠিক সময়ে ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারেন না, অনেক খেটে-খাওয়া দিনমজুর নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে হাজির হতে না পেরে ঘরে ফিরতে বাধ্য হন।

এই মৃত্যু কতকগুলি বিষয়ে জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরল— ১) প্রতিটি জাতীয় সড়কে কিছু দূর অন্তর সিসিটিভি লাগানো হোক। এর মাধ্যমে রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্সই হোক বা দুষ্কৃতীদের গাড়ি— সেগুলি কোথায় রয়েছে, তা সর্বদা নির্দিষ্ট অফিস থেকে তদারকি করা হোক। ২) দাবিদাওয়া জানানোর সময় অ্যাম্বুল্যান্সের পথ খালি রেখে তবেই অবরোধ করতে হবে। তা না হলে অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আরও কঠোর ব্যবস্থা করতে হবে। ৩) প্রশাসনিক দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হোক। সর্বসাধারণের পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো চলবে না। ৪) বহু জায়গায় প্রশাসনের তরফে জোর করে অবরোধ তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হল না কেন! ৫) পুলিশ-প্রশাসন মন্ত্রী ও আমলাদের পথ মসৃণ করে দেওয়ার জন্য সর্বদা ব্যস্ত। অথচ, এই ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য সেই তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি!

Advertisement

সবশেষে, রোগীদের জন্য জাতীয় সড়কে অন্তত ছ’ফুট চওড়া একটি লেন তৈরি করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

শ্রীমন্ত পাঁজা

গঙ্গাধরপুর, হাওড়া

নিন্দা জানাই

করোনাকালে মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও প্রথা মেনে বেহারাদের কাঁধে বাঁশের মাচায় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনের দাবিতে অবরোধ-বিক্ষোভ। ফলস্বরূপ ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া ছোট্ট সাকিবুলকে (৭) মালদহের অনন্তপুর গ্রাম থেকে প্রথমে মালদহ সদর হাসপাতাল, পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কৃষ্ণনগরে অবরোধের মুখে পড়তে হয়। দীর্ঘ অবরোধ চলাকালীন কর্তব্যরত পুলিশও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। কোনও রকমে গাড়িটাকে অবরোধ থেকে মুক্ত করে যাওয়ার একটু পথ অন্তত বার করে দেওয়া যেত। যদি ভাবতাম এক মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অবরোধ, তবু মনকে প্রবোধ দেওয়া যায়। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সময় অবরোধ চলল এখানে, তার জন্য অবরোধকারীদের প্রতি নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

শৈলেন দেবনাথ

কলকাতা-১৫৯

অপূরণীয় ক্ষতি

একক ভাবে মানুষের চরিত্র এক রকম, দলবদ্ধ ভাবে সেই মানুষের চরিত্রই ভিন্ন রূপ ধারণ করে। তাই জালালখালির রেল অবরোধই হোক কিংবা কৃষ্ণনগরের ‘সাং’ বার করতে দেওয়ার আন্দোলন, সেখানে নিশ্চয়ই ভাল মানুষও ছিলেন। কিন্তু দলে পড়ে ওই ভাল মানুষদেরও বোধবুদ্ধি লোপ পায়। কিছু দিন আগে জালালখালি রেলস্টেশনে দীর্ঘ সময় (প্রায় দু’দিন) রেল অবরোধ হয়েছিল। দাবি ছিল, জালালখালি রেলস্টেশনে আরও বেশি সংখ্যক ট্রেন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘ দু’দিন রেল অবরোধের ফলে হাজার হাজার নিত্যযাত্রী হয়রানির শিকার হয়েছেন। শুধু কি তাই! কত রকমের কাজে মানুষকে ট্রেনে চড়তে হয়। নিত্যযাত্রী ছাড়া রেল বা রাস্তা অবরোধ হলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন মুমূর্ষু রোগী ও তাঁর পরিবার। মালদহের মেঠাবাড়ি থানার জোত অনন্তপুর গ্রামের বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হওয়া সাত বছরের সাকিবুল মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু রাস্তা অবরোধের বলি হল বালকটি। গাড়িগুলো এতটাই জট পাকিয়ে ছিল যে, অ্যাম্বুল্যান্সের ড্রাইভার কোনও ভাবেই বার হতে পারেননি। অন্যান্য আটকে যাওয়া গাড়ির ড্রাইভাররা অনেক চেষ্টা করেও অ্যাম্বুল্যান্সটিকে বার করতে পারেননি। দরিদ্র অসহায় বাবা-মা চোখের সামনে নিজের সন্তানকে একটু একটু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেও কিছু করতে পারলেন না। সন্তান হারানোর যে অমূল্য ক্ষতি হল তার দায় কে নেবে?

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ

রানাঘাট, নদিয়া

দায়ী রাজনীতি

মানসিকতার এতটা অবক্ষয় মানুষ হিসাবে ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। কতটা নিম্ন মানসিকতা হলে মানুষ নিজেদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ছাড়তে পারছে না। যারা অবরোধ করছে, তাদের সঙ্গে সমান দায়ী প্রশাসন এবং ভোটের রাজনীতি। স্থানীয় দাদা-দিদির প্রভাব না থাকলে, প্রশাসন এ ভাবে নির্বিকার হয়ে থাকতে পারে না। জাতীয় সড়ক অবরোধ অপরাধের অনেকগুলি আইন আছে। কিন্তু সেই আইন পালন করানোর মতো প্রশাসনিক শক্তি আমাদের নেই। ভোটের রাজনীতি বড় বালাই, এটা বুঝতে কোনও বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই।

কবে মানুষের মানসিকতার বিকাশ হবে, জানা নেই। তবে এইটুকু জানি, আন্দোলন নিশ্চয়ই করবেন, নিজেদের অভাব-অভিযোগ নিশ্চয়ই জানাবেন, কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে। আমরা কি এটুকু বুঝতে চাইছি না যে, আমাদের এই অবরোধের জন্য অনেক মুমূর্ষু রোগী মারা যেতে পারেন, এই মন্দার দিনে অনেকে তাঁদের চাকরি হারাতে পারেন, অনেকের দরকারি কাজ আটকে যেতে পারে? সরকারের কাছে আবেদন, যে ভাবে এ রাজ্যে এই সরকার কর্মনাশা বন‌্‌ধ বন্ধ করেছে, সেই ভাবে ভোটের রাজনীতি সরিয়ে রেখে এই রকম জাতীয় সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধ বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা করুক।

চন্দ্র মোহন নন্দী

কলকাতা-৭৮

অসুস্থ আচরণ

‘অবরোধের বলি বালক’ পড়ে মন খারাপ তো হলই, সঙ্গে যে প্রশ্নটা উঠে এল তা হল, অবরোধ করে কার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই আমরা? প্রশাসনই তো লক্ষ্য! তা হলে প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করলে যে কোনও সমস্যার সুরাহা চটপট হতে পারে। প্রশাসন না পারলে আদালত রয়েছে। মানুষজনের এই বেআইনি অবরোধ সময়ে সরাতে পারলে ছোট্ট সাকিবুলকে বাবা-মায়ের কোল খালি করে চলে যেতে হত না। এ দৃশ্যও চোখের সামনে দেখতে হল তার পাশে থাকা স্বজনদের। না, ভাবতে পারছি না, এটা কোনও সভ্য দেশের নাগরিকদের পারস্পরিক ব্যবহার হতে পারে! সুস্থ শিক্ষিত এলাকাবাসী থাকতে এমন অসুস্থ অস্বস্তিকর আচার-আচরণ সমাজে স্থান পায় কী করে? ভালমন্দ বিচার করার ক্ষমতা কি হারাচ্ছি আমরা! হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে বৈধ-অবৈধের সূক্ষ্ম ফারাক বুঝতে অপারগ হচ্ছি। একটি বাচ্চার জীবনের থেকে বিসর্জনের পদ্ধতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হল অবরোধকারীদের। কাদের প্রশ্রয়ে বা উদাসীনতায় এরা বেড়ে উঠছে পাড়ায় পাড়ায়!

স্থানীয় থানা বা পুলিশ দেখে না জাতীয় সড়ককে সব সময় মুক্ত রাখাটা কত জরুরি। কত অঘটন তো ঘটছে অহরহ বেপরোয়া নাগরিক সমাজে। আইন একটু কঠোর ভাবে প্রয়োগ না করতে পারলে কে শাসক, কিসের প্রশাসন, কিসের আইন— একেবারে লন্ডভন্ড অবস্থা হয়ে যাবে! অবাকও লাগে, সব কিছুতে রাষ্ট্রকে জনস্বার্থবিরোধী অনর্থ আটকাতে হবেই বা কেন! নিজেদের অস্তিত্ব যে প্রশ্নের মুখে, এটা আমরা কবে বুঝব!

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা

কলকাতা-১৫৪

আরও পড়ুন
Advertisement