তীব্র আর্থিক মন্দা ও করোনা অতিমারির অভিঘাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এই সময়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রদানকারী সংস্থাগুলি ইচ্ছেমতো মাসুল বৃদ্ধি করে চলেছে। সিমকার্ড কেনার সময় বলা হত, সিমটি লাইফটাইম ফ্রি। তা হলে মাসিক একটি ন্যূনতম রিচার্জ কেন করতে হবে? ৪৯ টাকা এখন হয়েছে ৭৯ টাকা। শীঘ্রই তা বাড়িয়ে করা হবে ৯৯ টাকা। অর্থাৎ, এক জন দরিদ্র মানুষ যিনি গ্যাস বুক করেন কিংবা কোনও সরকারি প্রকল্পের দরকারি বার্তা পান, তাঁকে এ সবের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১০০ টাকা খরচ করতে হবে। এটা ঠিক, অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ডেটার মূল্য কম। তবে যে সব মানুষ শুধুমাত্র সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য মোবাইল ব্যবহার করেন, তাঁদের কাছ থেকে কেন মাসুল নেওয়া হবে? আজ থেকে ১০ বছর আগে অসংখ্য সার্ভিস প্রোভাইডার থাকার জন্য গ্রাহক অনেক সস্তায় মোবাইল ব্যবহার করতে পারতেন। তার পর শাসকদের বদান্যতায় কতিপয় কোম্পানি একচেটিয়া বাজার দখল শুরু করল। আজ ২-৩টি কোম্পানি নিজেদের সুবিধামতো মাসুল ধার্য করছে আর নেটওয়ার্ক প্রদানকারী কোম্পানিদের নিয়ন্ত্রক ‘ডট’ তাতে সায় দিচ্ছে। এই কোম্পানিগুলি তো প্রথমে নামমাত্র খরচে পরিষেবা দিত। আজ তারা যেমন মাসুল ধার্য করছে, সেটাই মেনে নিতে হচ্ছে। হয়তো এক দিন ফোনের দামের থেকে সিম চালানোর মাসুল বেশি হয়ে যাবে।
সুজিৎ সাহা
চাকদহ, নদিয়া
চটের ব্যাগ
‘কাঁচা পাটের মজুতদারি রুখতে তল্লাশি রাজ্যে’ (১০-১১) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। চটের বদলে প্লাস্টিকের বস্তায় গম মজুত হবে কি না, তার বৈঠক শেষ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটির সিদ্ধান্ত, আগের মতোই বাধ্যতামূলক ভাবে খাদ্যশস্য ভরতে ১০০ শতাংশ আর চিনির জন্য ২০ শতাংশ চটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। অথচ, মন্ত্রকের ১৫ লক্ষ বেল জুট ব্যাগের ক্রয় আদেশ থাকা সত্ত্বেও ঠিক সময়ে সম্পূর্ণ পণ্যের সরবরাহ করতে না পারা— বাংলায় ঝিমিয়ে থাকা চটশিল্পের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও নষ্ট করে দিচ্ছে না কি? তা হলে চাহিদা অনুসারে জুটের সস্তার বস্তা বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে প্রশ্ন কেন? বাংলায় চটের ব্যাগ অপ্রতুল কেন? কাঁচা পাটের অবৈধ মজুতদারি? না কি চটকলের প্রাগৈতিহাসিক মেশিনের আধুনিকীকরণ না হওয়া? শ্রমিক অসন্তোষ? বিগত কয়েক বছরে খান কুড়ি চটকল বন্ধ হয়ে টিকে আছে সর্বাধিক ৫৮টি। তাও চটকলগুলিতে রয়েছে ৯০ শতাংশ অস্থায়ী শ্রমিক।
একই সংবাদে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, “প্রয়োজন মতো চটের বস্তা সরবরাহ করতে না পারলে সেই জায়গা দখলে নামতে পারে প্লাস্টিকের বস্তা...।” তা হলে কি সঙ্কট কালেও প্লাস্টিক ব্যাগকে বিকল্প ভাবা যাবে না? এগুলি দূষণ সৃষ্টিকারী এক বার ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলার ক্যারি ব্যাগ তো আর নয়। বরং বাস্তবিকই এই প্লাস্টিক বস্তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য। তবে এই পাট-প্লাস্টিকের অসম লড়াই চার দশকের। দুটোই ক্ষুদ্র শিল্প। দুটোতেই হাজার হাজার শ্রমিক নিযুক্ত। তাই বলে ব্যাগ বৈষম্যের অর্থনৈতিক দিকটাও কি ভাবব না? চলতি মরসুমে দেশে গমের উৎপাদন প্রায় ৩০ কোটি টন। যদি ৫০ কেজি করে প্রতি ব্যাগে সমস্ত গম ভরা যায়, তা হলে কত সংখ্যক ব্যাগ লাগবে, তা হিসাব করে বার করতে হবে। একটি পাট ও প্লাস্টিক ব্যাগের মূল্যের তফাত প্রায় ৫০ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়তি বোঝার ভার বহন করবে কারা?
সুব্রত পাল
শালবনি, বাঁকুড়া
অনলাইনে তথ্য
এমনিতেই কোনও ব্যক্তি দুর্ঘটনায় মারা গেলে, তাঁর মৃতদেহ পেতে পরিজনদের যথেষ্ট হয়রান হতে হয়। এর একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা উচিত। তার উপর আবার যদি সেই ব্যক্তি রেল দুর্ঘটনায় (ট্রেন থেকে পড়ে গেলে বা অন্য ভাবে) মারা যান, তখন সমস্যা আরও বাড়ে। মৃত ব্যক্তির বাড়ি কোন থানা এলাকায়, দুর্ঘটনা ঘটেছে কোন থানা এলাকায় (জিআরপি, যদি রেল দুর্ঘটনা হয়) আর যে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সেটি কোন থানা এলাকায় ইত্যাদি তথ্য লাগেই। এইগুলো যদি আলাদা থানা এলাকা হয়, তা হলে মৃতের পরিজনদের ওই সমস্ত জায়গায় ছুটে বেড়াতে হয়। এতে সময় যেমন নষ্ট হয়, তেমনই তা শোকাহত পরিবারের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে তোলে। সব জায়গা থেকে কাগজে লিখিত তথ্য ঠিকঠাক না এলে দেহ ময়নাতদন্ত করা যায় না। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করা যেতে পারে, যাতে মৃত ব্যক্তির পরিজনদের সব থানায় দৌড়োতে না হয়। পুরো তথ্য আদানপ্রদান প্রক্রিয়াকে অনলাইন করে দেওয়া উচিত। সেখানে সমস্ত থানা, জিআরপি, হাসপাতালের তথ্য জমা করা যেতে পারে। এতে সময় বাঁচবে আর শোকাহত পরিজনদের দুর্ভোগের বোঝা বইতে হবে না।
উত্তম কুমার দে
মাজিদা, পূর্ব বর্ধমান
টোল আদায়
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় সড়কে টোল প্লাজ়ায় ফাস্ট্যাগ-এর মাধ্যমে ফি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, না হলে ১০০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। অর্থাৎ, ফাস্ট্যাগ না থাকলে, ছোট গাড়িকে ৭৫ টাকা + জরিমানা ৭৫ টাকা = ১৫০ টাকা দিতে হবে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি রাস্তায় পানিকাউড়ি টোল প্লাজ়াকে এড়াতে অনেক ছোট গাড়ি রাজগঞ্জ হয়ে যাতায়াত করছে। ফলে, টোল আদায় কম হচ্ছে। ওখানকার অন্তত একটা লেনে নগদ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হত।
আশিস রায়চৌধুরী
পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লি, শিলিগুড়ি
একঘেয়ে গান
কোভিডকালে লোকাল ট্রেনে ঘন ঘন কোভিড সংক্রান্ত সতর্কীকরণ প্রচার শুরু হয়েছিল কামরার পাবলিক অ্যাড্রেস অডিয়ো সিস্টেমে। তা আজও সঙ্গত কারণে বিদ্যমান। এর মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বেজে উঠে। সমস্যা হল ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ... ’, ‘পুরানো সেই দিনের কথা...’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে...’— এই তিনটি গানই বেজে চলে। কেবল এই তিনটি গান ক্রমাগত বাজানোর ফলে যাত্রীদের একঘেয়ে লাগছে বইকি। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সম্ভারের মধ্যে থেকে নতুন কিছু গান চালিয়ে এই অ্যাড্রেস অডিয়ো সিস্টেমে নতুনত্ব আনা যায় কি না, রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
মধুসূদন দাশঘোষ
হরিপাল, হুগলি
জীবনদায়ী
ভাবতে অবাক লাগে, যখন সংবাদপত্রে, বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা জীবনদায়ী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে অনেক আশার বাণী শোনান। ওষুধের মূল্য কমানোর কথা ওঠে। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও প্রচারমাধ্যমে ‘লিড নিউজ়’ হয়। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অসুস্থ মানুষরা মনে মনে আশান্বিত হয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনেন। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। যেমন, বহু মানুষ জন্মসূত্রে ও পরিবেশ বা বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ওষুধ ও ইনহেলারের শরণাপন্ন হন। বর্তমানে ইনহেলারের মূল্য পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধির কারণে এই ধরনের রোগীদের অসুবিধা হচ্ছে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভেসে যাচ্ছে মানুষ ও তাঁদের প্রত্যাশাগুলো। এ থেকে মুক্তির আশায় দিন গুনছেন অসংখ্য অসহায় মানুষ।
মুকুল বাগচি
ডানকুনি, হুগলি