১৯৮৬ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয় পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’ হিসাবে পালন করা হবে। সেই মতোই পালিত হয়ে আসছে। ২০২২ সালে এই বিজ্ঞান দিবসের ভাবনা ছিল ‘সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য সমন্বিত গবেষণা’।
কিন্তু কী তাৎপর্য এই ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটির? স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপাচার্য থাকাকালীন পালিত অধ্যাপক হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেছিলেন বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমনকে। তাঁরই অনুরোধে জাহাজে করে লন্ডন পাড়ি দেন বিজ্ঞানী রমন। জাহাজপথে যেতে যেতেই আলোর ‘স্পেকট্রা’ নিয়ে ছোট ছোট কিছু পরীক্ষা করেছিলেন তিনি। এত দিন ধারণা ছিল যে, আকাশের নীল ছায়াই সমুদ্রের জলকে নীল করেছে। তা তিনি পরীক্ষা এবং প্রমাণ দিয়ে ভেঙে দেন। সমুদ্রের নানান স্তরের জলের নমুনা শিশিতে করে নিয়ে গভীর ভাবে পরীক্ষা করেন, যা পরে বিশ্বের দরবারে ‘রমন এফেক্ট’ হিসাবে পরিচিতি পায়।
১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর গবেষণার বিষয় সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন। ১৯৩০ সালে এই কাজের জন্য এশিয়ার প্রথম বিজ্ঞানী হিসাবে ভারতে এল নোবেল পুরস্কার, ‘রমন এফেক্ট’-এর সৌজন্যে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে ভারতের সমস্ত গবেষণাগার ওই একটি দিনে সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। জাতীয় ও রাজ্যস্তরে বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার-সহ আমজনতার মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার বিকাশে এই প্রয়াসের গুরুত্ব অনেক। এ বছরের বিষয় ভাবনার প্রধান গুরুত্ব হল, দেশের সকল বিজ্ঞান গবেষণাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা, মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তি, জলশক্তি, রেল, জৈব প্রযুক্তি ইত্যাদি সকল মন্ত্রক সমন্বিত ভাবে যাতে গবেষণা করতে পারে। বিজ্ঞানকে সবার জন্যে ছড়িয়ে দিতে এই দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।
অরিজিৎ দাস অধিকারী
সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
শহরের ঐতিহ্য
পরতে পরতে ইতিহাস নিয়ে বেড়ে উঠেছে অধুনা ‘ভিলেজ অব থিয়েটার’ নামে খ্যাত চারশো বছরেরও পুরনো গোবরডাঙা শহর। এক সময় এই অঞ্চল সমৃদ্ধ গোপপ্রধান জনপদ ছিল। ১৮৫০-৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এখানকার ষষ্ঠীতলা গ্রামে মাটি খুঁড়ে একাধিক প্রাচীন মন্দিরের ভিত পাওয়া যায়। গৈপুর, খাঁটুরা অঞ্চলে ‘নবন্যায়’ শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ সংস্কৃত পণ্ডিতরা বসবাস করতেন। পণ্ডিত রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের যথেষ্ট নামযশ ছিল।
গোবরডাঙার জমিদার বাড়ি, প্রসন্নময়ী কালী ও দ্বাদশ শিব মন্দির, সূর্যঘড়ি, ফেয়ারি হল, শাহজাহানের আতরদান, ফ্রেঞ্চ ক্লক, সিংহদ্বার, নহবতখানা, গন্ধর্বপুরে ব্রাহ্মমন্দির, সাহাপুরের মঙ্গলালয়, নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ, গৈপুরের ওলাবিবির দরগা, কুন্ডুপুকুরের শিব মন্দিরের মতো বহু স্থাপত্য এখনও মাথা উঁচু করে উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
একদা স্রোতস্বিনী যমুনা আজ অবশ্য নাব্যতা হারিয়ে মজে যেতে যেতে মৃতপ্রায়। যমুনা নদীর ধারে ছিল বহু চিনির কল। জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠিত মেলা ‘গোষ্ঠ বিহার’ পয়লা বৈশাখে আজও বিশেষ সমারোহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। অতীতে যমুনা নদীতে বড় বড় নৌকায় করে ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হতেন। মেলায় মশলার হাট বসত, এখনও যা চলছে। কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ১২২৯ বঙ্গাব্দে প্রসন্নময়ী কালীমন্দির ও বারোটি শিবমন্দির স্থাপন করেছিলেন। প্রসন্নময়ী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৩৩ বছর পরে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালীমায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসমণিদেবী এক বার এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে প্রসন্নময়ী কালীমন্দিরে এসেছিলেন।
১৮৭০ সালে গোবরডাঙা পুরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন স্বনামধন্য কথক রামধন তর্কবাগীশের পুত্র তথা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন। তিনি ছিলেন এক জন সমাজ সংস্কারক। ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বিধবা বিবাহ আইন সরকারি অনুমোদন লাভ করলে তিনি তৎকালীন সামাজিক নিয়ম ও প্রচলিত সংস্কারকে উপেক্ষা করে সে বছরের ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে বর্ধমানের বাল্য বিধবা কালীমতীকে বিয়ে করেন। বিবাহ বাসরে উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে রমাপ্রসাদ রায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহের মতো প্রথিতযশা মানুষ। শ্রীশচন্দ্রের বিধবা বিবাহের ঘটনা আজও গোবরডাঙাবাসী মনে রেখেছেন।
১৮৭১ সাল। গ্রামের লোকজন উঁকি দিয়ে দেখে, পাল্কিতে বসে আছে বছর ১৫-১৬’র এক কিশোর। বেহারারা জানায়, এ ছেলে বড়ই অসুস্থ। তাই সে পাল্কি করে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। পরীক্ষার ফল বেরোনোর পর দেখা গেল, ছেলেটি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। গোবরডাঙার গৈপুরের সেই কিশোরের নাম প্রমথনাথ বসু, যাঁর ইংরেজি লেখা দেখে কেমব্রিজের অধ্যক্ষ স্যামুয়েল লব বলেছিলেন, আমার জীবনে এর মতো ভাল ইংরেজি লিখিয়ে ছাত্র আমি দেখিনি। সেই ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ বসু, যিনি ময়ূরভঞ্জ জেলায় লৌহখনি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর এই আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী কালে গড়ে ওঠে জামশেদপুর টাটার ইস্পাত কারখানা। শোনা যায়, জামশেদজি টাটাকে তিনিই পরামর্শ দেন ইস্পাত কারখানা স্থাপনের।
উল্লেখ্য, গোবরডাঙা রেলস্টেশনে গোবরডাঙা থেকে বনগাঁ অভিমুখে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাঁ দিকে প্রায় নজরে না-পড়া একটি ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম অবস্থিত। মালগাড়িতে হাতি উঠবে, তাই এই ‘এলিফ্যান্ট প্ল্যাটফর্ম’ বানিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসকরা। সেটিই বর্তমানে ‘সাড়ে তিন নম্বর’ প্ল্যাটফর্ম নামে পরিচিত।
এই সুপ্রাচীন শহরটিকে যদি হেরিটেজ শহরের মর্যাদা দেওয়া যায়, তা হলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।
অমিয় বিশ্বাস
গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
পুজোর লড়াই
পঞ্চাশ ফুট দূরত্বে দু’টি বড় বড় শিব মন্দির। একটি শিব সঙ্ঘ, অপরটি শৈব্য সম্মিলনী। দুটোই বড় শিবপুজো। এদের যাত্রা, তো ওদেরও যাত্রা। এদের নাটক, তো ওদেরও নাটক। এদের বাউল, তো ওদেরও বাউল। এদের বিচিত্রানুষ্ঠান, তো ওদেরও তা-ই। এই অভিনব শিবপুজোর লড়াই চলে আসছে গত ৭০-৮০ বছর ধরে, যে লড়াই দেখতে মুখিয়ে থাকেন হাজার হাজার শিবভক্ত। এই অভিনব শিবের লড়াই দেখতে যেতে হবে হাওড়ার আমতায়।
আমতার জোতকল্যাণ গ্ৰাম। গ্ৰামের কুমোরপাড়ায় দেড়শতাধিক কুম্ভকারের বাস। আগে ঘরে ঘরে চলত কুমোরের চাক। তৈরি হত মাটির হাঁড়ি-কলসি-থালা-সরা-ঘট কত কী! কোনও ঘরে তৈরি হত মাটির প্রতিমা। ওঁরা সবাই শৈব্য। এখন কুমোরপাড়ায় পাল্টে গিয়েছে আদি পেশা। পাল্টে গিয়েছে জীবন-জীবিকা। নিজেদের পেশা বাঁচিয়ে রেখেছেন কয়েক ঘর। তাঁদের মধ্যে বিধান পাল, শুকদেব পাল, রবে পাল, বাবলু পাল ও সোনাই কুন্ডু এখনও চাক ঘুরিয়ে তৈরি করেন মাটির সামগ্ৰী। চাক ছাড়া কেবল হাত দিয়ে মাটির হাঁড়ি, সরা, মালশা তৈরি করেন ছায়া পাল, গীতা পাল, অসীমা পাল-সহ কয়েক জন মহিলা। আর মাটির প্রতিমা শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছেন অষ্ট পাল, গোপাল পাল ও মানস পালের পরিবার। প্রয়াত বাসুদেব পালের প্রতিমার ছিল খুব নামডাক।
কুমোরপাড়ার শিবপুজোর নামডাক পৌঁছে গিয়েছে অন্য জেলাতেও। ১২-১৪ ফুটের, বিশাল ওজনের শিব দেখার মতো। প্রায় ২০০-৩০০ বছর ধরে চলে আসছে এই শিবপুজো। আগে কুমোরপাড়ায় একটিই পুজো হত। পরে জন্ম নেয় আর এক পুজো। সারা বছর এক সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধুলা, খাওয়াদাওয়া থাকলেও, পুজোর ক’টা দিন ওরা আলাদা। পুজো মিটে গেলে আবার আলিঙ্গন। এক সঙ্গে থাকা।
দীপংকর মান্না
আমতা, হাওড়া
কার্ডে ভুল
আমার পরিবারের তিনটি রেশন কার্ডে ভুল নাম সংশোধনের জন্য খাদ্য দফতরে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখনও নাম সংশোধনের কার্ড হাতে পেলাম না। খাদ্য দফতরে যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি। বার বার খাদ্য দফতরে গিয়ে কার্ড না পেয়ে ফিরে এসেছি।
হাকিম সেখ
অর্জুনপুর, মুর্শিদাবাদ