আরও এক বার প্রমাণিত হল, এ রাজ্যে সাধারণ নাগরিক কতটা সুরক্ষিত (‘পুলিশই ভক্ষক হলে কী ভাবে চলবে: বিচারক’, ১৪-১২)। শুধু মেয়েদের নয়, যে কোনও মানুষের সুরক্ষা নিয়েই এই প্রশ্ন ওঠে! এখন এক শ্রেণির মানুষ দেখা যাচ্ছে, যাঁরা হামেশাই নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকেন। এঁদের কাজই হল নাগরিককে হেনস্থা করা। পুলিশ যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটায়, তা হলে ক’জন সাহস করে পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য যাবে? এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, সব পুলিশ এমন নয়। কিন্তু বিচারক যে প্রশ্ন করেছেন, সেই প্রশ্ন আমজনতারও। কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বরাদ্দ হয়েছে পুলিশের জন্য। তারাই আমাদের ভরসাস্থল, বিপদে পড়লে তাদের কাছেই আমরা ছুটে যাই সাহায্যের জন্য। সে দিন অন্ধকার রাস্তায় একাকী তরুণীও পুলিশের বাইক দেখেই হয়তো নির্ভয়ে তাতে উঠে বসেছিলেন। আজ দেখা যাচ্ছে, সাহায্য চাইবার কী পরিণাম!
একটা কথা বোধগম্য হচ্ছে না, ক্ষমতা থাকলেই কি তার অপব্যবহার করতে হবে। পুলিশ তো সমাজবন্ধু। মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে তার অনীহা কেন? শুধু পুলিশ নয়, পোস্ট অফিস, ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন সরকারি দফতরে বিভিন্ন সময় মানুষ হেনস্থার শিকার হন। মানুষ মুখ বুজে সরকারি আধিকারিক, কর্মীদের দুর্ব্যবহার সহ্য করেন, কারণ তাঁদের হাতে কোনও ক্ষমতা নেই, প্রতিকার পাওয়ার উপায় নেই। যত ক্ষণ না সেই হেনস্থার সংবাদ খবরের কাগজে বেরোচ্ছে, তত ক্ষণ কোনও সুরাহা হয় না। তবে প্রতিবাদ করতে হবে, যেমন মেয়েটি করেছে। নতুবা ক্ষমতার অপব্যবহার চলতেই থাকবে।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
সাদাকালো
কতিপয় মানুষের দুষ্কর্মের জন্য যখন একটি গোটা গোষ্ঠীর নাক-কান কাটা যায়, তখন আফসোসের সীমা থাকে না। পুলিশ কি মানবিক কাজের দৃষ্টান্ত রাখে না? পুলিশ কি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় না? নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসে না? সৎ, বিবেকবান, শিক্ষিত, রুচিশীল পুলিশকর্মী কি নেই? পুলিশের ভূরিভূরি ভাল কাজের দৃষ্টান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ সবের উত্তর খুঁজতে হবে। প্রশ্ন ওই কতিপয় মানুষকে নিয়ে, যারা বিবেকবর্জিত এবং উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির। যেমন, জনৈক সিভিক ভলান্টিয়ার কর্তৃক এক যুবককে মাটিতে ফেলে বুকে বুট-পরা পা দিয়ে চেপে ধরে মারধরের ঘটনা। এই প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রের একটি সখেদ মন্তব্যের কথা মনে পড়ে গেল, “এই ধরনের ঘটনা পুলিশের ভাল কাজগুলোকে অর্থহীন করে দেয়।” মাস অতিক্রান্ত হতেই আর একটি এমন ঘটনা ঘটল— জনৈক এএসআই এবং সিভিক ভলান্টিয়ার দ্বারা এক তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল। এই ঘটনাটিতে স্বয়ং বিচারকই প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশই ভক্ষক হলে কী ভাবে চলবে? প্রকাশ্য দিবালোকে গাড়ি থামিয়ে তোলা আদায়, হয়রানি, অশোভন আচরণ করা, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট-এর জন্য টাকা নেওয়া, পুলিশের বিরুদ্ধে এমন নানান অভিযোগ আজ আর গোপন নয়। কেন এমনটি হয়? পুলিশের দায়িত্ব এবং সততা নিয়ে মানুষের মনে কেন এমন শঙ্কা আর হতাশা? থানায় যেতে মানুষের কেন ভয় হয়? এর পিছনে ওই কতিপয় পুলিশকর্মী! এরা এই সব গর্হিত ক্রিয়াকলাপ করে নিজের কিংবা পরিবারের কেবল ক্ষতিসাধন করে না, নিজের পেশার সকলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। পুলিশ পেশাটি যে হেলাফেলার নয়, সে বোধটি হারিয়ে ফেললে বার বার এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে।
বাবুলাল দাস
ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
পোষণ ও বঞ্চনা
রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আমলাদের বিনোদন ভাতার নামে এক ধাক্কায় ২০,০০০ টাকা থেকে ৩৪,০০০ মাসিক ভাতা বরাদ্দ করা হল। এটা অপ্রয়োজনীয় শুধু নয়, অনৈতিক এবং অমানবিকও, বর্তমানে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার। পেটের দায়ে পিএইচ ডি ডিগ্রিধারী তরুণরাও ডোমের চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা দশ হাজার-বিশ হাজারের মাস মাইনেতেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অত্যন্ত অসম্মানজনক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সময়ে তিনলাখি-চারলাখি আমলাদের মাস মাইনে কার্যত এক ধাক্কায় এতটা বাড়িয়ে দেওয়া হল, যা বহু কর্মচারীর মাস মাইনের থেকেও বেশি।
কিছু দিন পূর্বেই এই আমলাদের বিশেষ ভাতা হিসাবে পাঁচ থেকে দশ হাজার পর্যন্ত ভাতা বাড়ানো হয়েছে। যার সুযোগ একেবারে তৃণমূল স্তরের বিডিওরাও আজ পাচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে এই বিনোদন ভাতা ওই স্তর পর্যন্ত পৌঁছনো আজ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এক দিকে সরকার বলছে টাকা নেই, তাই তারা চাকরি দিতে পারছে না। অথবা, খুবই অল্প মাইনেতে ভলান্টিয়ার হিসাবে শিক্ষক-অধ্যাপক থেকে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী— সবই আজ নিয়োগ করা হচ্ছে। ‘টাকা নেই’-এর অজুহাত দেখালেও কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার সাংসদ, বিধায়কদের ভাতা বার বার বাড়াতে কুণ্ঠাবোধ করে না। সরকারি কর্মীদের ন্যায্য বকেয়া ডিএ না দিয়ে দফায় দফায় আমলাদের বেতন বাড়িয়ে চলেছে। কারণ, মানুষকে ন্যায্য অধিকার থেকে দীর্ঘ দিন বঞ্চিত রেখেও শাসন কায়েম করতে দরকার হয় আমলাদের, সেই কারণেই কি?
ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরা গত দু’বছর ধরে দিন-রাত এক করে অতিমারি সামলেছেন। তাঁদের ভাতা কিন্তু প্রায় কিছুই বাড়ানো হয়নি। উপরন্তু ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। আশাকর্মীরা দীর্ঘ আট মাস উৎসাহ ভাতা পাননি। ডাক্তারদের গ্রামে কাজ করার ভাতা (রুরাল অ্যালাওয়েন্স), বিশেষজ্ঞ ভাতা, প্রশাসনিক ভাতা আজও মাসে ২০০ টাকা। সরকারের কাজ কি কর্মীদের দয়ার দান বিলি, না কি তাঁদের অধিকারের সুরক্ষা? স্বয়ং সরকার এই বৈষম্য সৃষ্টি করছে কেন? শুভবুদ্ধিসম্পন্ন শ্রমিক, কর্মচারী থেকে ডাক্তার, সর্বস্তরের নাগরিক যত দিন জেগে না উঠবেন, তত দিন তাঁরা মরলেও সরকারের কী আসে যায়!
সজল বিশ্বাস
সাধারণ সম্পাদক, সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম
সাবধান
শিয়রে হাজির হয়েছে কোভিডের নতুন স্ট্রেন ‘ওমিক্রন’। কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসন শঙ্কিত, চিন্তান্বিত। কেবল চিন্তা দেখা যাচ্ছে না পূর্ব রেল দফতরের শিয়ালদহ শাখার কর্মকর্তাদের মধ্যে। এই অতিমারির দিনেও শিয়ালদহ সাউথ, নর্থ ও মেন শাখার বিপুল পরিমাণ রেলযাত্রী— দৈনিক পাঁচ থেকে আট লক্ষ— মাত্র একটি ১৫-২০ ফুট পরিসরের রাস্তা দিয়ে নিত্য যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেন না শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরকে সুরক্ষিত করার নামে এমন ভাবে ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে যে, অসংখ্য মানুষের এক সঙ্গে ওঠা-নামা (সকলের মুখে মাস্ক নেই) এই রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে চমৎকার এক ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অথচ, কোভিড শুরু হওয়ার আগে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে অনেকগুলি প্রবেশ-প্রস্থানের দরজা ছিল, নর্থ ও মেন-এর জন্য বাইরের দিকে টিকিট কাউন্টার ছিল, যেগুলি এখন পরিকল্পনা-মাফিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, এর পিছনে কিছু ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর এ দিকে না পড়লে কোভিডের তৃতীয় ধাক্কাটি আসার ক্ষেত্রে এই সরু গলিপথই হতে চলেছে ‘সুপার স্প্রেডিং জ়োন’। এই রাস্তাটি চার পাশের নানা ধরনের দোকানের কারণে সঙ্কীর্ণ তো বটেই, সেই সঙ্গে ওই পথ দিয়েই মালপত্র নিয়ে টানা রিকশা, ভ্যান গাড়ি, সাইকেল প্রভৃতি যাতায়াতের ফলে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অথচ, এই সমস্যাগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা দেখেও দেখছেন না। দ্রুত ব্যবস্থা করতে আর্জি জানাই, নইলে ঘাতক কোভিডের বিরুদ্ধে আমাদের সব পক্ষের লড়াই ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সনৎকুমার নস্কর
কলকাতা-১৪৪