Global Hunger Index

সম্পাদক সমীপেষু: বিবর্ণ চিত্র

পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের ২০ শতাংশের ওজন বয়সের তুলনায় কম। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের ৩৪.৭ শতাংশের শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৭

‘ক্ষুধার হার’ (২১-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের প্রেক্ষিতে বলি, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের যে দৈন্যতা প্রকাশ পেয়েছে, তার পদ্ধতিগত ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক। মন্ত্রকের দাবি, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের প্রস্তুতির পদ্ধতিটি নির্ভরযোগ্য নয়। সূচকের কূটকচালিতে না গিয়েও বলা যায় যে, অতিমারি কালে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত। সরকারি বদান্যতায় রেশনের চাল-গমটুকু বাদ দিলে, দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষের সংসার আর চলছে না। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার অগ্রগতি বা সেন্ট্রাল ভিস্টা নির্মাণের ছবি থেকে ভারতের যথার্থ চিত্র বোধ হয় প্রকাশ পায় না।

২০১২ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে পাই যে, দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষের বাড়িতে সাইকেল, ২১ শতাংশের বাড়িতে মোটরবাইক। বাড়িতে স্নানঘরের সুবিধা পান ৫৮ শতাংশ লোক। অথচ, দেশের প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। দেশের প্রতি দশটি বাড়িতে অন্তত একটি কম্পিউটারের দেখা মিলবে। তাদের মধ্যে ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ন’বছরের ব্যবধানে দেশের এই চিত্রের খানিকটা হয়তো উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের ক্ষেত্রে দেশের ছবিটা আশাব্যঞ্জক নয়। আজকের ভারতে ১৪ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের ২০ শতাংশের ওজন বয়সের তুলনায় কম। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের ৩৪.৭ শতাংশের শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি যথেষ্ট নয়। ৫১ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছেন।

Advertisement

প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, পরিযায়ীদের হাতে সরাসরি অর্থ তুলে দেওয়া দরকার ছিল। সেই দায় এড়িয়ে গিয়ে শুধুমাত্র ঋণদানে সীমাবদ্ধ থাকার ফলে দেশের অর্থনীতি খুঁড়িয়ে চলছে। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে গিয়ে দেশের শাসকরা যদি শুধুমাত্র পছন্দের পরিসংখ্যানটিকেই তুলে ধরেন, আর অপছন্দের পরিসংখ্যান সামনে এলে তার মধ্যে খালি ত্রুটিই দেখেন, তা হলে সেটাকে এক রকম ভাবের ঘরে চুরি বলেই ধরে নিতে হয়।

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

রাহুলের পথ

প্রেমাংশু চৌধুরী রাহুল গাঁধীর দ্বন্দ্বটি বোঝার চেষ্টা না করেই জনশ্রুতি অনুসরণ করে ‘পাপ্পু বানানোর প্রক্রিয়া’তে প্রবেশ করেছেন (‘রাহুল গাঁধী হওয়ার বিপদ’, ২১-১০)। ‘বিচারধারা’ নিয়ে রাহুল গাঁধী জোর দেওয়াতে প্রেমাংশুবাবু প্রকাশ কারাটের ছায়া দেখেছেন। কিন্তু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে যে, মহাত্মা গাঁধীর চিন্তাভাবনাকেই অনুসরণ করছেন রাহুল। লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গে পথও গুরুত্বপূর্ণ। পথ নিয়ে নিশ্চিত হতে না-পারার জন্যই আজ নেতাদের তৃণমূল-বিজেপি যাওয়া-আসার কুনাট্য রচনা হচ্ছে। এবং তৃণমূল কর্মীরা ‘জয় শ্রীরাম’ বলছেন কিংবা রামনবমীর মিছিলে হাঁটছেন। অনেক কংগ্রেস কর্মীকেও ‘গাঁধী দেশভাগ করেছিলেন’-জাতীয় বিরোধী প্রচারে বিশ্বাস করতে দেখা যাচ্ছে। রাহুল গাঁধী যদি তার বিরুদ্ধে লড়ার চেষ্টা করে থাকেন, তা নিয়ে ঠাট্টা করার কী আছে? ইন্দিরা কংগ্রেসেও বিচার-বিবেচনার ধারায় এমন ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। এখনও অনেক তৃণমূল সমর্থককে গাঁধী-নেহরুর চিন্তাধারাকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়। মমতা স্বয়ং শ্যামাপ্রসাদের জন্মদিনে তাঁকে মালা দেন। তিনি যে দুর্গাপুজোগুলিকে ২০১ কোটি টাকা দান করলেন এই বছর, তা কি আরএসএস-এর হিন্দু রাষ্ট্রের ধারণার প্রভাবমুক্ত? কেন সরকার কোনও বিশেষ ধর্মের পক্ষ নেবে? রাহুল গাঁধী তো যথাযথ বিচারধারা অনুসারে সৈন্যদলই তৈরি করতে চাইছেন। তা হলে কংগ্রেসের মধ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদী বা সুবিধাবাদী অবস্থান রাখা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-জিতিন প্রসাদদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।

দোষ রাহুল গাঁধীর নয়। স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস নেতারা (বিশেষ করে নেহরু-পরবর্তী প্রজন্ম) সরকার পরিচালনাতে যতটা মাথা দিয়েছিলেন, বিচারধারার নিরিখে নিজেদের অবস্থান নিয়ে ততটা মাথা ঘামাননি। আর সেই কারণেই নবীন পট্টনায়ক-রামকৃষ্ণ হেগড়ের মতো ‘কংগ্রেসের মতো দেখতে, কিন্তু বিজেপির সহযোগী’ নেতৃবৃন্দের উত্থান, যাঁদের সক্রিয় সহযোগিতাতেই আজকের হিন্দু তালিবান রাজ তৈরি হয়েছে। রাহুল গাঁধীর অবস্থান খুব স্পষ্ট— কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসতে দেরি হয় হোক, কিন্তু আমরা বিজেপির বিচারধারার পায়ে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। এমন স্পষ্ট অবস্থান পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর পরে ভারতের কোন নেতা নিতে পেরেছেন? রাহুল হয়তো ‘রিয়ালপলিটিক’-এ অতটা আগ্রহী নন (নেহরুও ছিলেন না), কিন্তু তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণে ব্রাহ্মণ্যবাদীও নন। ধান্দাবাজির রাজনীতিতে রাহুল গাঁধী তাজা হাওয়া।

জওহরলাল নেহরুর সমালোচনাও অনেকে করেন তাঁর আদর্শবাদ নিয়ে। কিন্তু নেহরু আদর্শবাদী ছিলেন বলে ভারতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেটি তাঁর কন্যা ইন্দিরাও রক্ষা করতে অসমর্থ হয়েছিলেন। আর নরেন্দ্র মোদী হলেন ইন্দিরা গাঁধীরও অবক্ষয়ী রূপ, তিনি তাঁর দল ও দেশ, দুটোরই দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিসাধন করছেন। বাজপেয়ী-আডবাণী নির্মিত দলীয় গণতন্ত্র নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজেপিতে অন্তর্হিত। ইন্দিরা-পরবর্তী কংগ্রেসকে যেমন মূল্য চোকাতে হয়েছিল এর জন্যে, মোদী-পরবর্তী বিজেপিকেও হবে। যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে মোদী কোনও ভাবেই দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানগুলিতেও নিজের ছাপ রাখতে গিয়ে বিনষ্ট করেছেন। গড়তে পারেননি কিছুই, বরং ভেঙেছেন।

প্রেমাংশুবাবু নরেন্দ্র মোদী ছাড়া আর এক জন যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে রাহুল গাঁধীর তুলনা টেনেছেন, তাঁর নাম প্রকাশ কারাট। কারাট যদি নিজের দলের বিচারধারাগত অবস্থানে কট্টর হন, তা হলে তাতে ভুল কী থাকতে পারে? মহাত্মা গাঁধী তাঁর অহিংসার অবস্থানে এতই কট্টর ছিলেন যে, সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি স্নেহ থাকা সত্ত্বেও তাঁর অবস্থানের রাজনৈতিক বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রকাশ কারাট কমিউনিস্ট পার্টির মতো করেই সিপিএমকে চালিত করতে গিয়েছিলেন। তিনি কি মমতার মতো এক বার কংগ্রেস, আর এক বার বিজেপির হয়ে পার্টি চালাতেন?

রাহুল গাঁধীর অবস্থান ‘সত্যানন্দ’-এর হলে সমস্যাটি কোথায় হচ্ছে? কংগ্রেসের ‘জীবানন্দ’, ‘ভবানন্দ’ ও ‘শান্তি’-দের তৈরির ভার তো ‘সত্যানন্দ’-ই নিয়েছেন। বর্তমানে যে অমানিশায় ভারত আচ্ছন্ন, তার অবসানের প্রত্যয় নিয়ে মেয়ের দল তৈরি হচ্ছে উত্তরপ্রদেশে, প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর নজরদারিতে।

তপন ভৌমিক

অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

ইস্তফা কেন?

‘ইস্তফা দিয়ে বাবুলের খোঁচা, পাল্টা শুভেন্দুর’ (২০-১০) সংবাদের প্রেক্ষিতে জানাই, এক জন লোকসভার সাংসদ পদে নির্বাচিত হওয়ার পিছনে কেবল তাঁর নিজের ও তাঁর দলের শ্রম, টাকা, ও সময়ের বিনিয়োগ হয় না। রাষ্ট্র তথা জনগণের করের টাকা খরচ হয়, যার পরিমাণ কয়েক কোটি তো হবেই। এই তালিকায় থাকে সরকারি কর্মচারীদের শ্রম, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বুথে বুথে লাইন দিয়ে ভোটারের ভোট দান। একটা লোকসভা মানে সাতটা বিধানসভার সমান এলাকা তথা ভোটার। ছুটির দিন না হলে বেসরকারি সংস্থাকে কর্মচারীদের সবেতন ছুটি দিতে হয়। দল বদলের জন্য, বা অন্য কারণে ইস্তফা দেওয়ার অর্থ— উপনির্বাচনের পথ পরিষ্কার করে দেওয়া। আরও একটা নির্বাচন মানে ফের নির্বাচন কমিশনকে ঢাল-তরোয়াল নিয়ে ময়দানে নামিয়ে দেওয়া। এক জনের খেয়াল-খুশির নৈতিক দায় হয়ে দাঁড়ায় রাষ্ট্রের মৃতপ্রায় অর্থনীতির উপর খাঁড়ার ঘা। গণতান্ত্রিক অধিকার বনাম অযথা আর্থিক বোঝা। এটা ছেলেখেলা নয়। রাজনৈতিক দল-নির্বিশেষে সকল শুভানুধ্যায়ী নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলি, ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

অঞ্জন কুমার শেঠ

কলকাতা-১৩৬

আরও পড়ুন
Advertisement