Anis Khan Death Mystery

সম্পাদক সমীপেষু: ইনসাফ চাই

আনিসের স্বপ্ন-দেখা দু’টি চোখ যারা চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিল, তারা সকলে চিহ্নিত হোক, শাস্তি পাক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ০৪:২১

দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘এটাই প্রতিবাদের দাম?’ (২৩-২) প্রবন্ধটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। আনিস খানের মৃত্যু প্রমাণ করেছে, সাধারণ নাগরিক ঘরেও নিরাপদ নন। যে কোনও সময়, কোনও কারণ না দেখিয়ে প্রশাসন বাড়ির লোকের সামনে তাঁকে মেরে ফেলতে পারে। আনিস খান কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী, অথবা কোন মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা, তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী চরিত্র। হাওড়ার আমতা ব্লকের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে উঠে আসা এক নিম্নবিত্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত সংখ্যালঘু যুবক। মেধার জোরে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে অন্যায়, অবিচার দেখেছেন, সেখানে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ক্ষমতাবানদের। তাঁর বন্ধুরা বলেন, যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় সামনের সারিতে থাকতে তিনি ভালবাসতেন। নেতৃত্ব ছিল তাঁর সহজাত ক্ষমতা। পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে এক যুবকের হত্যাকে কেন্দ্র করে তিনি লিখেছিলেন, “সিভিক ও পুলিশ যখন অত্যাচারী, জনগণকে তখন হতে হয় প্রতিবাদী।” প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাজ্যের সংখ্যালঘুদের শিক্ষার আলোক থেকে বঞ্চিত করে কার লাভ হচ্ছে? বর্তমান সরকারের প্রবণতা হল, কেউ খুন হলে তাঁর বাড়ির লোককে চাকরি ও অর্থের লোভ দেখিয়ে মুখ বন্ধ করা। সেই ফাঁদে আনিসের বাবা সালেম খান পা দেননি। তাঁর গলায় ১৫ বছর আগের রিজওয়ানুরের মায়ের আর্তি, ‘মুঝে ইনসাফ চাহিয়ে’। আনিসের বাবা ছেলের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। ছাত্র-যুবসমাজ এই হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে লাগাতার আন্দোলনে নিরত। আনিসের স্বপ্ন-দেখা দু’টি চোখ যারা চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিল, তারা সকলে চিহ্নিত হোক, শাস্তি পাক।

গৌতম পতি

Advertisement

তমলুক, ‌পূর্ব মেদিনীপুর

ভরসা ছাত্রেরা

দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁর প্রবন্ধে বাংলার গণতান্ত্রিক বিবেকের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, কোনও মতেই বিচারের দাবি যেন নীরব কান্নায় ডুবে না যায়। রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং পুলিশি যথেচ্ছাচার আগেও ছিল এবং এখনও আছে। তবে এর থেকে কোনও অংশে কম নয় মিথ্যাচার, যা বর্তমানে ক্ষতি করছে সমস্ত সমাজের, রুদ্ধ হচ্ছে আগামী প্রজন্মের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার পথ। মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে বলা হল আনিসের বাড়িতে আমতা থানার কোনও পুলিশ অভিযান চালায়নি, কিন্তু বর্তমান ঘটনা প্রবাহ বিপরীত কথা বলছে। বলা হল, আনিস তৃণমূলকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। অথচ, আনিসের বাড়ির লোক এর উল্টোটাই বলছেন।

আশার কথা, ছাত্রসমাজ আজ নতুন করে জেগে উঠেছে আনিসের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে। এই ভাবেই যুব সমাজকে রুটি-রুজির স্বার্থেও প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে। ডেউচা-পাঁচামি থেকে কী ভাবে কয়লা পাওয়া লাভজনক হবে তা না জেনেই প্রকল্পের ঘোষণা, ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগ, এগুলিও এক-একটি মিথ্যাচার। প্রতিটি মিথ্যাচার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ভাবে সংগঠিত করতে হবে আন্দোলন, এঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে সর্বস্তরের মানুষকে। সরকারকেও মনে রাখতে হবে, প্রতিবাদ মানে শুধু বিরোধিতা নয়, শুদ্ধিকরণের বার্তাও বটে। যাকে মান্যতা দিলে জনসমর্থন বৃদ্ধি পাবে, মজবুত হবে গণতন্ত্রও।

অশোক দাশ

রিষড়া, হুগলি

অনৈতিক

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সমাজসেবী আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে (পড়ুন, রাজনৈতিক খুন) সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বিবেকসম্পন্ন মানুষ বেদনাহত। এই বেদনা ক্রমশ একযোগে একটা বিরাট প্রতিবাদের রূপ নিচ্ছে। এই প্রতিবাদ এক ধরনের ক্ষোভের প্রকাশও বটে, ক্ষোভটিও ন্যায়সঙ্গত। কারণ রক্ষকই এখানে ভক্ষক। যে চার জন আনিসকে গভীর রাতে তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে খুন করে, তারা পুলিশের আজ্ঞাবহ হোমগার্ড এবং সিভিক ভলান্টিয়ার। তারা কোন পুলিশ অফিসারের আদেশে এই অতীব ঘৃণ্য কাজ করতে বাধ্য হল, কার দ্বারা পরিচালিত হল? আরও প্রশ্ন উঠেছে, আনিসের পিতা বার বার ফোন মারফত পুলিশকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করা সত্ত্বেও পুলিশ কেন অকুস্থলে পৌঁছতে অত সময় নিল?

স্বভাবতই রাজ্য সরকার যখন এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব ‘সিট’-এর হাতে তুলে দেয়, তখন বিভিন্ন মহল থেকে এই তদন্তের সঠিক মূল্যায়ন সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, এবং এই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি ওঠে। যদিও কলকাতা হাই কোর্ট সিট-এর হাতেই আপাতত এই তদন্তভার রেখে দেওয়ার আদেশ দিয়েছে, যা প্রতিবাদীদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করবে না। তদন্তের ফলাফল কী হবে সেটা ভবিষ্যৎই বলবে, কিন্তু পরিষ্কার যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু দিন ধরে প্রচলিত এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অভ্যাস— রাজনৈতিক দলগুলির স্বার্থে পুলিশকে অনৈতিক ভাবে ব্যবহার।

দীপঙ্কর ভট্টাচার্য রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং পুলিশি যথেচ্ছাচারের প্রবণতার কথা তুলে ধরেছেন। স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির ক্রমাগত দলীয় স্বার্থে পুলিশ-প্রশাসনকে অনৈতিক ভাবে ব্যবহার নাগরিকের মনে পুলিশ সম্পর্কে এক ভীতির আবহ সৃষ্টি করেছে, যা ক্রমে ঘৃণায় পরিণত হচ্ছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ভারতের অপরাপর রাজ্যতেও আদালতকে এই ধরনের ঘটনায় বার বার হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।

অমিত কুমার চৌধুরী

কলকাতা-৭৫

পুলিশের ভূমিকা

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা আনিস খানের নৃশংস খুনে সারা রাজ্যের মানুষ আতঙ্কিত। কী অপরাধ ছিল, যে তরতাজা ছেলেটাকে খুন করা হল? দলমত নির্বিশেষে সকলেরই এই নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ করা উচিত। কেউ গায়ে রাজনৈতিক দলের তকমা সেঁটে দিতে পারে, এই ভেবে কি আমরা প্রতিবাদ করব না? অপরাধীর শাস্তি চাইব না?

পুলিশ জানিয়েছে, যারা পুলিশের পোশাক পরে আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল তারা কেউ নাকি পুলিশ নয়। তা হলে তারা কারা? পুলিশের পোশাক তারা পেল কোথায়? দুষ্কৃতীদের হাতে যে বন্দুক ছিল, সেগুলো সরকারি, না কি বেসরকারি? পুলিশের দিকে আঙুল উঠেছে, এ দিকে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। মানুষ দ্রুত পুলিশমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করছেন। প্রশ্ন হল, যদি সত্যিই শাসক দলের দুষ্কৃতীরা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে যুক্ত থাকে, তা হলে রাজ্যের পুলিশ কি নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করতে পারবে? রাজ্য সরকারের তদন্ত সংস্থাকে অভিযোগকারীরাই বা বিশ্বাস করবেন কী করে? এ ক্ষেত্রে সরকারের নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে নিজে থেকেই বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

সনাতন পাল

বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

ধর্মের নামে

আনিস খানের মৃত্যুতে কেন সেই হিন্দু-মুসলমান অঙ্কের টানাটানি? আর কত কাল এই ঘৃণ্য রাজনীতি সহ্য করতে হবে? সমস্ত বিষয়েই ঘুরে ফিরে সেই ধর্মের সুড়সুড়ি। মানুষ কি এখনও বোঝেন না, এগুলো আন্দোলনের নামে ব্যবসা? সব ঘটনার সঙ্গে ধর্ম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে জুড়ে দিয়ে চটজলদি ফয়দার বিষাক্ত রাজনীতির শেষ তখনই সম্ভব, যখন সাধারণ মানুষ রোজগার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হতে পারবেন। পতাকার আশ্রয়ে আন্দোলন নয়, আন্দোলন হবে পেটের তাগিদে। প্রচারমাধ্যমগুলো বিজ্ঞাপনের লোভ, প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেই লড়াইয়ে শামিল হবে প্রকৃত দেশ গড়ার জন্য, মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য।

শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-১৪১

আরও পড়ুন
Advertisement