Tata Singur Controversy

সম্পাদক সমীপেষু: সত্যের অপলাপ

রাজ্যের এমন একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছিলেন। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে বিরোধী নেত্রীর হাত ধরে আগুন জ্বলে উঠেছিল কৃষক আন্দোলনে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৩৫

‘টাটাকে তাড়াইনি’ শীর্ষক সংবাদ (২০-১০) পাঠ করে বিস্মিত হতে হয়। সিঙ্গুরে টাটাদের ‘ন্যানো’ গাড়ি তৈরির প্রকল্প কোন আন্দোলনের ফলে আটকে যায়, সেই আন্দোলনে কে বা কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা বোধ হয় পশ্চিমবঙ্গের সচেতন মানুষমাত্রেই জানেন। এখন যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন তিনি টাটাদের তাড়াননি, তা হলে সত্যের অপলাপ হয় বইকি। রতন টাটা নিজেই বলেছেন, তিনি বলেছিলেন বন্দুক ঠেকালেও যাবেন না, কিন্তু মমতা তো ট্রিগার টেনে দিলেন। সে দিন রতন টাটা কত বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্প প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে আসার পরেও বাতিল করে, সেই প্রকল্প গুজরাতের সানন্দে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা তো আজ ইতিহাস। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, সিঙ্গুর আন্দোলনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় বসায়।

টাটারা চলে যাওয়ার পর এই রাজ্যের শিল্পের অঙ্গনে তেমন কোনও জোয়ার আসেনি, যা দিয়ে রাজ্যের বেকারত্বের হাল ফেরানোর কথা ভাবা যায়। তবে এ কথা ঠিক যে, রাজ্যে কল-কারখানা উঠে যাওয়ার আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকেই। কল-কারখানায় সিটু ইউনিয়নের জঙ্গি আন্দোলন আর কথায় কথায় ধর্মঘট এই রাজ্যের শিল্পের ভবিষ্যৎ যে পঙ্গু করে দিয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। অন্য দিকে, টাটারা চলে যাওয়ার পর রাজ্য সরকার পর পর অনেকগুলি বঙ্গ-বাণিজ্য সম্মেলন করলেও কোনও শিল্পপতি এখনও এই রাজ্যে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। কেন? তা ভাবতে হবে।

Advertisement

টাটাকে কে তাড়াল, এই রাজনৈতিক তরজা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে শিল্পপতিরা উৎসাহ হারান বিনিয়োগে। শিল্পের উন্নয়নে চাই সম্মিলিত রাজনৈতিক প্রচেষ্টা। সেটা যত দিন না হচ্ছে, এ রাজ্যে শিল্পের খরা কাটানো খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না।

মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১

সূর্যাস্ত

কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া অনেক ঘটনাই উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর ‘টাটাকে তাড়াইনি’ মন্তব্যের প্রসঙ্গে। ১৯৭৭ সালে যা ছিল ‘সংগ্রামের হাতিয়ার,’ ২০০৭-এ ফের ক্ষমতায় আসার পর তা-ই ‘উন্নয়নের অঙ্গীকার’ হয়ে উঠেছিল সিপিএম-এর কাছে। বামফ্রন্টের তিরিশ বছরের শাসনে শুধুমাত্র রিগিং, সন্ত্রাস, বুথ জ্যাম আর ছাপ্পা ভোটের জোরেই দল টিকে ছিল, এমন দাবি বাম বিরোধীরাও করতে পারবেন না। বাম আমলে ভূমিসংস্কার, গ্রামীণ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সত্তরের দশক থেকে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত বাংলার জমির উপর কৃষকদের অধিকার আরও জোরালো হয়েছিল। গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়তে শুরু করেছিল। এক সময় বামপন্থা মনে করেছিল, কৃষির হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গে অগ্রগতির চাকা ঘুরবে। অথচ, ‘মেহনতি মানুষ’-এর পক্ষে লড়াই করার স্লোগান তুলে, শ্রমিকের অধিকার রক্ষার নামে এক সময়ে শ্রমসন্ত্রাস ঘটিয়েছিলেন বামপন্থীরা। রাজ্যের শিল্পকে পিছনের সারিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে শিল্প নিয়ে অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করেই বামফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্বে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্পোন্নয়নের মুখ হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। যদিও দেরি হয়ে গিয়েছিল, তত দিনে বিরোধীরা ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে গিয়েছিলেন, এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নাড়িও সঠিক ভাবে পড়ে নিতে পেরেছিলেন। অথচ, সেই সময়ে শিল্পের তাগিদে জমি দরকার। আর এ জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন বুঝেছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। তিরিশ বছর ধরে শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা উন্নয়নের অঙ্গীকারকে হাতিয়ার করে ‘শিল্পদরদি’ হয়ে উঠেছিলেন।

রাজ্যের এমন একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছিলেন। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে বিরোধী নেত্রীর হাত ধরে আগুন জ্বলে উঠেছিল কৃষক আন্দোলনে। সিঙ্গুর কাণ্ডকে সামনে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করেছিলেন, টাটা মোটরস-এর বিরুদ্ধে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনের ফলে গ্রামবাংলার মানুষও তাঁদের দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন বিরোধীদের। সেই অনুমান সর্বাংশে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যবাসী বঙ্গদেশে শিল্পায়নের যে সূর্যোদয় দেখার অপেক্ষায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তা হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। রাজনীতির আকচা-আকচি চলতে থাকলেও রাজ্যের উন্নয়নই যে শেষ কথা, সেই শুভবুদ্ধির উদয় রাজ্যের রাজনীতিকদের মধ্যে আজও আশা করেন নাগরিকেরা। দলতন্ত্রের শিকার হয়ে রাজ্য ক্রমশ পিছনের দিকেই এগিয়ে চলেছে!

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

ট্রিগার

জমি ফেরতের নামে কু-রাজনীতি করে রাজ্যের শিল্পের পায়ে কুড়ুল মেরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসে বলছেন, তিনি টাটাকে তাড়াননি, সিপিএম তাড়িয়েছে। বাংলার বেকার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ, রাজ্যের কথা মনে পড়ল না তাঁর! কোনও দিন তিনি হয়তো বলে বসবেন, সিঙ্গুরে আন্দোলন হয়নি, ধর্মতলায় অনশন তিনি করেননি, বা বিধানসভায় ভাঙচুর করেনি তৃণমূল।

শিবপদ চক্রবর্তী, কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

যক্ষ্মামুক্ত ভারত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত দু’বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ (‘বেড়েছে যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা’, ২৯-১০)। গত দু’বছরে অতিমারির জন্য বিশ্ব জুড়ে যক্ষ্মা রোগীর মৃত্যুর হার বাড়লেও, ভারতে যক্ষ্মায় মৃত ও আক্রান্তের হার বহু কাল ধরেই সব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী এইচআইভি নেগেটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে যক্ষ্মা-আক্রান্ত হয়ে যত মৃত্যু ঘটেছে, শুধুমাত্র ভারতেই ঘটেছে তার ৩৬%। ভারতের জনসংখ্যায় যক্ষ্মা-আক্রান্তের হার বিশ্বের গড় হারের দ্বিগুণেরও বেশি। দশ জনের মধ্যে চার জন ভারতীয় যক্ষ্মার জীবাণু বহন করছে, যাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে এ রোগ প্রাণঘাতী হবে— এই সরকারি তথ্য উদ্বেগজনক। এ বছর বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন। যক্ষ্মা রোগীদের উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দানের জন্য বাড়তি কর্মী নিয়োগ করার, এবং পুষ্টি সহায়তা প্রকল্পের ঘোষণাও করেছেন। এই প্রচেষ্টাটি প্রশংসনীয়। প্রশ্ন হল, যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সুপরিকল্পিত প্রতিকারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে ভারত ২০০৩-২০২০ সময়কালে ২.৩৬ বিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছে। ওই বিপুল অর্থে ওই তিনটি রোগ প্রতিহত করার কাজের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে? সে তথ্য প্রকাশ না করলে বোঝা যাবে না, আগামী দিনে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করার অভিযান কতটা ফলপ্রসূ হতে পারে।

পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি

হুদুড় দুর্গা

স্বাগতা দাশগুপ্তের ‘জাতির জননী’ (২৩-১০) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রখানি। তিনি হুদুড় দুর্গার আখ্যানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, হুদুড় দুর্গাই মহিষাসুর। কথাটি ঠিক নয়। হুদুড় দুর্গা একান্তই আদিবাসীদের, কোল, মুন্ডা, সাঁওতাল আদিবাসীয় অস্ট্রিক গোষ্ঠীর। অসুর বা দ্রাবিড় বংশীয় নয়। যদিও হুদুড় দুর্গার অস্তিত্ব সম্পর্কেই সন্দেহের অবকাশ আছে। কারণ আদিবাসীদের প্রাচীন লোককথায় এবং মূল গ্ৰন্থগুলিতে কোথাও হুদুড় দুর্গার উল্লেখ পাওয়া যায় না।

সুশীল হাঁসদা, পশ্চিম মেদিনীপুর

আরও পড়ুন
Advertisement