Left-Wing Politics

সম্পাদক সমীপেষু: কঠিন কর্তব্য

আমরা সাধারণত খেটে-খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই বামপন্থীদের চিহ্নিত করি। বর্তমানে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কলকারখানা একের পর এক বন্ধ হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩৮
আগামী প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের স্বার্থে এখন বামপন্থীদেরই এই পরিস্থিতির ত্রুটিগুলো বোঝাতে হবে সাধারণ মানুষকে।

আগামী প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের স্বার্থে এখন বামপন্থীদেরই এই পরিস্থিতির ত্রুটিগুলো বোঝাতে হবে সাধারণ মানুষকে। প্রতীকী ছবি।

প্রণব বর্ধনের ‘ভয়, রাগ ও ঘৃণার তাড়নায়’ (৩১-১২) শীর্ষক প্রবন্ধটি বিশ্বে বামপন্থী রাজনীতির পক্ষে এক অশনি সঙ্কেত, এবং সাবধানবাণীও বটে। পৃথিবীতে কোনও দেশই সমস্যামুক্ত নয়, তবে বিভিন্ন দেশের সমস্যা বিভিন্ন ধরনের। প্রতিটি রাজনৈতিক দল এই সমস্যাগুলিকে সামনে রেখে যে যার মতো করে ফয়দা তুলতে ব্যস্ত। তফাত শুধু প্রয়োগে। লেখক যথার্থই বলেছেন, মানুষ অসাম্য নিয়ে ততখানি মাথা ঘামায় না, যতখানি চিন্তা করে চাকরি বা ভাত-কাপড় সংস্থানের নিরাপত্তা নিয়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই কোথাও শরণার্থী সমস্যা, কোথাও ধর্মীয় আবেগ, আবার কোথাও সংখ্যালঘু জুজুকে কাজে লাগিয়ে মূল সমস্যার অভিমুখ থেকে দক্ষিণপন্থীরা দূরে সরিয়ে দেয় মানুষকে। দুনিয়া জুড়ে বামপন্থী সংগঠনের জোর কমেছে, এটা সত্যি। আমরা সাধারণত খেটে-খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবেই বামপন্থীদের চিহ্নিত করি। বর্তমানে বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কলকারখানা একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। যেগুলো চলছে, সেখানেও অনেক জায়গাতেই চাহিদার অভাবে বাধ্য হয়ে উৎপাদন ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই কমছে খেটে-খাওয়া মানুষের সংখ্যা। মানুষের এই অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রীয় ও সরকারি যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে, বেঁচে থাকার জন্য তাঁদের নির্ভরশীল করে তোলা হচ্ছে সরকারি দানের উপর। যে-হেতু কমছে শ্রমিকের সংখ্যা, স্বাভাবিক ভাবেই দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনও ক্ষীণ হয়ে আসছে। মানুষ ভবিষ্যতের চিন্তা না করে, শুধুমাত্র বর্তমানের কথা ভেবে সমর্থন করছে এই রাজনীতিকেই। আগামী প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের স্বার্থে এখন বামপন্থীদেরই এই পরিস্থিতির ত্রুটিগুলো বোঝাতে হবে সাধারণ মানুষকে। শিল্পপতি থাকলে তবেই শ্রমিক থাকবে, আর শ্রমিক থাকলে তবেই সংগঠনের বৃদ্ধি হবে, এই সরল সত্যকে সামনে রেখেই তৈরি করতে হবে আগামী দিনের রূপরেখা। শিক্ষার আলো যেখানে পৌঁছয় না, সেখানে দায়িত্ব নিতে হবে প্রাথমিক পাঠের। ‘কাজগুলো কঠিন হলেও অসম্ভব নয়’ এই কথাটা মনে রাখলে বামপন্থী তো বটেই, আগামী দিনে সবারই মঙ্গল।

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

Advertisement

সাঙাততন্ত্র

প্রণব বর্ধনের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। প্রবন্ধটিতে স্বল্প পরিসরে খুব সুন্দর ভাবে গোটা বিশ্বের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার রমরমার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েট দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে বামপন্থী দলগুলোর জন্ম হতে শুরু করে। সেই সময় থেকে বামপন্থীরা শ্রমিক, কৃষক, গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষের দাবি নিয়ে লড়াই সংঘটিত করার ফলে বিশ্ব জুড়ে বামপন্থীদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশগুলোর পতন ঘটানোর ক্ষেত্রেও বামপন্থীদের বিরাট ভূমিকা ছিল। আমাদের দেশেও প্রথম লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীরা ভাল ফল করেছিলেন। বিশ্ব জুড়ে বামপন্থীদের আলোকস্তম্ভ ছিল সোভিয়েট ইউনিয়ন। সে দেশের পতনের পর থেকেই বিশ্ব জুড়ে বামপন্থীরা দুর্বল হতে শুরু করেন। উদার অর্থনীতির হাত ধরে শুরু হয় পুঁজির দাপট। জন্ম হয় সরকারের সঙ্গে কর্পোরেটদের সাঙাততন্ত্র, বা ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজ়ম’-এর। প্রবন্ধে সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজ়ম’-এর সমর্থক দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বামপন্থী দলগুলি ব্যর্থ হয়েছে। অথচ, পুঁজির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণের নামে মানুষকে বিভক্ত করে অতি দক্ষিণপন্থী দলগুলো দেশে দেশে নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছে। মানুষ আজ বিভ্রান্ত। এই অরাজক অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য বামপন্থী দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

পরিবর্তন

‘ভয়, রাগ ও ঘৃণার তাড়নায়’ প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। সমাজতন্ত্রের পতন ও বিকৃতির প্রশ্নে সিপিআই (এম)-এর মাদ্রাজ কংগ্রেসে (চতুর্দশ কংগ্রেসে) কয়েকটি মতাদর্শগত বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ, গৃহযুদ্ধ ও সদ্যোজাত সমাজতন্ত্রকে ধ্বংস করার সর্বাত্মক চেষ্টার মুখে দাঁড়িয়ে সর্বহারার রাষ্ট্রকে প্রতিবিপ্লব দমন করতে হয়েছিল। এর জন্য প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রযন্ত্র, যা আবার পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্যও অবশ্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই পর্বটি অতিক্রম করার পরে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র যখন সংহত হল এবং শ্রেণিশক্তির পারস্পরিক সম্পর্কও যখন অনুকূলে চলে এল, তখন গণতন্ত্র প্রসারিত করা ও নতুন উদ্যোগ করার সুযোগ দেখা দিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, বাস্তব পরিস্থিতির ভ্রান্ত মূল্যায়নের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার পুরনো পদ্ধতিকেই পরবর্তী পর্বেও ব্যবহার করা হল। ফলে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রকে ব্যাপক ও গভীর করা গেল না, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের পূর্ণ ক্ষমতাকে ব্যবহার করা গেল না। এর ফলে ক্রমবর্ধমান আমলাতান্ত্রিকতা, সমাজতান্ত্রিক আইনব্যবস্থার লঙ্ঘন, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং অধিকার দমনের মতো বিকৃতিগুলো ঘটল।

অর্থাৎ, মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন একটি পন্থা রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বেশি দিন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে না। প্রবন্ধকার বলেছেন, দক্ষিণপন্থীরা বামপন্থী ধ্যান-ধারণাগুলি অনেকাংশে আত্তীকরণ করেছে, যা খুবই প্রাসঙ্গিক। সমাজসেবামূলক নীতিগুলি গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের অধিকারের প্রসঙ্গটি উহ্য রেখে, নাগরিককে প্রজা হিসাবে বশংবদ করে রাখার প্রচেষ্টাটি যে দক্ষিণপন্থী ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ, তা-ও বলা বাহুল্য। ভারতের ক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়টি যে-হেতু মানুষের একান্ত কাছের বিষয়; তাই ধর্মীয় আবহে উগ্র মতবাদও অনেক সময়েই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। শ্রেণিভিত্তিক সংগ্রামকে হাতিয়ার করে বিশ্বে বামপন্থীদের প্রসার ঘটেছে। সেই শ্রমিক শ্রেণির চরিত্রেও আজ বহুলাংশে পরিবর্তন ঘটেছে। অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি থেকে দক্ষ শ্রমিকের শ্রেণিচরিত্রের স্বরূপটিও বামপন্থার পরিচিত রূপকে শুধুই পরিহাস করে। দক্ষিণপন্থার সমাজকল্যাণমূলক ভাবনাগুলি যে বামপন্থা আত্তীকরণেরই সুফল, তা বলা বাহুল্য। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সমাজের তৃণমূল স্তরে গিয়ে কাজ করছে, যা বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতির কৌশল।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

ফের বিপদ

অতিমারি থেকে মুক্ত হয়ে যখন মানুষ স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরছে, ঠিক তখনই ওমিক্রনের নতুন ভ্যারিয়েন্ট বিএফ ৭-এর দ্রুত সংক্রমণ আবার গোটা দুনিয়াকে ভাবাচ্ছে। (‘বেলাগাম’, সম্পাদকীয়, ৩০-১২)। ইতিমধ্যে চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান-সহ কিছু দেশে নতুন প্রজাতির সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সর্তকবার্তায় বলেছেন, করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় সুবন্দোবস্ত করে রাখতে হবে রাজ্যগুলিকে। ২০২০-২১ সালের ভয়াবহ করোনা পরিণতির কথা মাথায় রেখে কর্নাটক, পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে।

যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বঙ্গবাসীর এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। শীতে নানা উৎসব, পিকনিকে মেতে উঠেছেন সকলে। বিভিন্ন পার্ক, দিঘা-সুন্দরবন থেকে অযোধ্যা পাহাড়, সর্বত্রই মানুষের ঢল নেমেছে। প্রশাসন চূড়ান্ত উদাসীন। আমরা আবার চরম বিপদ ডেকে আনছি না তো? ‘বেলাগাম’ (৩০-১২) সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে, ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ যখন দেওয়া হয়েছে, তখন তা মেনে চলাই সুস্থ, স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকের কর্তব্য।

হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আরও পড়ুন
Advertisement