Economy

সম্পাদক সমীপেষু: অসম উন্নয়ন

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, গত শতকের নব্বইয়ের দশকে উদার অর্থনীতি শুরু হওয়ার সময় জিডিপি-র নিরিখে বিশ্বে ভারতের স্থান ছিল ১৭তম, আর মাথাপিছু আয়ের নিরিখে স্থান ছিল ১৬১তম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪১

—ফাইল চিত্র।

অর্থনীতির বিশিষ্ট অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটক তাঁর ‘দুনিয়ার বৃহত্তম বাজার’ (১৮-১২) প্রবন্ধে আমাদের দেশের অর্থনীতির অসম বৃদ্ধির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের দেশ আজ দুটো ভাগে বিভক্ত। একটি ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’, অপরটি ‘সাফারিং ইন্ডিয়া’। এই ‘শাইনিং’ বা চাকচিক্যময় ভারতে বাস করেন জনসংখ্যার ৩১% উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষ, যাঁদের সংখ্যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এই মানুষদের জন্য বিশ্ব পুঁজির কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাজার এখন ভারত। জিডিপি-র নিরিখে আমরা এখন বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম স্থানে, ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা তৃতীয় স্থানে পৌঁছে যাব। আমাদের অর্থনীতির এই উন্নয়নের যজ্ঞে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’র বাজার। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, গত শতকের নব্বইয়ের দশকে উদার অর্থনীতি শুরু হওয়ার সময় জিডিপি-র নিরিখে বিশ্বে ভারতের স্থান ছিল ১৭তম, আর মাথাপিছু আয়ের নিরিখে স্থান ছিল ১৬১তম। বর্তমানে আমরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে আমাদের স্থান ১৫৯তম। অর্থাৎ, অসম অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে আমাদের দেশের ৬৯% মানুষের আজ স্থান হয়েছে ‘সাফারিং’, অর্থাৎ ক্লেশক্লিষ্ট ভারতে। দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুফল এই অংশের মানুষের কাছে পৌঁছয় না। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গরিব, নিরন্ন মানুষ বাস করেন ভারতে। এই অনেক খাওয়া বনাম না-খাওয়ার অর্থনীতিতে লাগাম পরাতে না পারলে আমাদের দেশ কোনও দিনই ‘উন্নয়নশীল’ থেকে ‘উন্নত’ হতে পারবে না।

Advertisement

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

যুক্তির পথ

সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলে এটা প্রমাণিত হল যে, কংগ্রেসের পক্ষে নরম হিন্দুত্ব দিয়ে বিজেপির হিন্দুত্বের কড়া ডোজ় সামলানো অসম্ভব। ‘হিন্দুত্বের প্রতিযোগিতা’ (১৪-১২) সম্পাদকীয়তে সঠিক ভাবেই বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে। এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, সাধারণ মানুষের কাছে হিন্দুত্বের প্রশ্নে বিজেপির বিকল্প ‘কেহ নাই, কিছু নাই’। সুতরাং, হিন্দুত্ব দিয়ে যে বিজেপিকে হারানো যাবে না, এই উপলব্ধি কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দল যত তাড়াতাড়ি আত্মস্থ করতে পারবে, ততই তাদের পক্ষে মঙ্গল। ব্রিগেডে গীতাপাঠের বিকল্প যে চণ্ডীপাঠ নয়, বা ছোট আকারে গীতাপাঠ নয়, সেটাও তৃণমূল-সহ অন্য বিরোধী দলগুলোকে বুঝতে হবে।

দেশের সাধারণ মানুষের সামনে যে আসল সমস্যা, অর্থাৎ বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, স্থায়ী চাকরির হ্রাস ও চুক্তিভিত্তিক চাকরির রমরমা এবং পরিণতিতে জীবনযাত্রার মানের সার্বিক ক্রমাবনতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে উৎসাহ প্রদান— সেগুলিকে সামনে তুলে আনতে হবে। ধর্মের জিগির তুলে যাঁরা মূল সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে চাইছেন, তাঁদের ফাঁদে পা দিলে সফলতা আসবে না।

প্রচারের যুগে বিজেপির শক্তিশালী আইটি সেলের ক্রমাগত প্রচারের মুখোমুখি হয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। গোয়েবলস-এর তত্ত্ব অনুসারে মিথ্যার ক্রমাগত প্রচার সত্যের রূপ ধারণ করে। ক্রমাগত প্রচারের ফলেই সাধারণ মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে যে, বিরোধী দলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সমকক্ষ কোনও নেতা নেই। এই ধারণা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। সর্বজনগ্রাহ্য এক বিরোধী মুখ তুলে আনা প্রয়োজন। এই প্রচারের ফলেই জিডিপি-র নিরিখে ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে। সুতরাং, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব শক্তিশালী— এই ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের বিশাল জনসংখ্যার কারণে জিডিপি আজ পঞ্চম স্থানে, কিন্তু মাথাপিছু আয়ে ১৯৭টা দেশের মধ্যে ১৪২তম স্থানে আছি আমরা। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে আমরা বিশ্বে ১২৫ দেশের মধ্যে ১১১। তবুও কিছু মানুষের ধারণা, আমাদের দেশ বিগত দশ বছরে অনেক উন্নতি করেছে— ক্রমাগত প্রচার এই ধারণা তৈরিতে সমর্থ হয়েছে। সুতরাং, বিজেপিকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করতে হয়, তবে আত্মসন্তুষ্ট না হয়ে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে, নরম হিন্দুত্ব থেকে সরে এসে যুক্তিপূর্ণ ভাবে লড়াই করতে হবে।

সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

চারটি স্তবকে

সুবোধ সরকার ‘বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন’ (১৫-১২) শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিতে রবীন্দ্রনাথ বাঙালির অস্মিতাকে অখণ্ড ভারতী মানসের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। এই অনুভব বা ধারণা কষ্টকল্পিত, অনেকটা অত্যুক্তির পর্যায়ে পড়ে। সুবোধবাবু ‘বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন’-এর মধ্যে অন্য ভাষাভাষী ভাইবোনদের খুঁজে পেয়েছেন। এই লাইনটি নাকি সঙ্কীর্ণ প্রাদেশিকতা দোষের বিশল্যকরণী, কারণ ‘ভাইবোন’ শব্দের মধ্যে সহোদর-সহোদরা প্রেম ছাড়াও সকলকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মনে করার একটা ভাবাবেগ রয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে ‘বুকে টেনে নেওয়া ভালবাসা’-র ইঙ্গিত গানটির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। সুবোধবাবু লিখেছেন, গানটি আট লাইনের, কোনও স্তবক বিভাজন নেই। ১৩১২ বঙ্গাব্দে (১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে) লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘বিজয়া-সম্মিলন’ প্রবন্ধটি শেষ হয়েছে এই গানটি দিয়ে, যা চারটি স্তবক এবং মোট ১৬ লাইনের। পরে গীতবিতান-এ গানটি কোনও স্তবক ছাড়া আট লাইনে ছাপা হয়।

বিজয়া দশমীর পরে এক প্রীতি সম্মেলনে পঠিত ‘বিজয়া-সম্মিলন’ প্রবন্ধটি এই গীতিকবিতা দিয়ে শেষ করার সময় উপস্থিত বন্ধু-বান্ধবদের কাছে রবীন্দ্রনাথ আবেদন জানিয়েছিলেন, বিজয়া সম্মেলনের দিনে তাঁরা হৃদয়কে এক বার যেন বাংলার সর্বত্র প্রেরণ করেন, উত্তরে হিমাচলের পাদমূল থেকে দক্ষিণে তরঙ্গমুখর সমুদ্রকূল পর্যন্ত, নদীজালজড়িত পূর্ব সীমান্ত থেকে শৈলমালাবন্ধুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত চিত্তকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেন। যে চাষি চাষ করে ঘরে ফিরেছেন, যে রাখাল ধেনুদলকে গোষ্ঠে ফিরিয়ে এনেছে, শঙ্খ-মুখরিত দেবালয়ে যে পূজার্থী এসেছেন, অস্তসূর্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে যে মুসলমান নমাজ পড়ে উঠেছেন, তাঁদের সবাইকে তিনি সম্ভাষণ করার আহ্বান করেন।

মনোজ ঘোষ, কলকাতা-৬১

অতুল স্নেহ

‘বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন’ এই বাণীবিন্যাসের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ শুধু বাঙালি জাতির ভাবনায় তাঁর উদাত্ত আহ্বানকে সঙ্কীর্ণ করে তুলতে চাননি। এই কথার মধ্যে যে স্নেহ-আদর আছে, তা অতুলনীয়। সেই সময় দুই বঙ্গে বসবাসকারী সর্ব সম্প্রদায়ের মানুষকে বাঙালি জাতির প্রাণশক্তি বলেই গণ্য করতে চেয়েছেন। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে এই গানটির বাণীর পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে লেখক কুণ্ঠাবোধ করেননি, এর জন্য রবীন্দ্রপ্রেমীরা তাঁকে ধন্যবাদ দেবেন।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১১৭

বিচ্যুতি

সুবোধ সরকারের প্রবন্ধ থেকে স্পষ্ট হল না, রবীন্দ্রনাথের গানে ‘বাঙালির’ শব্দটিকে ‘বাংলার’ বলে চালিয়ে দেওয়াকে তিনি যুক্তিযুক্ত বললেন, না কি তার প্রতিবাদ করলেন। নবান্নের ‘রাজ্য সঙ্গীত’ বিষয়ক আলোচনাসভায় উপস্থিত বিদ্বজ্জনদের মধ্যে প্রবন্ধকার নিজে উপস্থিত ছিলেন। গীতবিতানে রবীন্দ্রগানের যে পরিবেশনা তার শব্দ বা যতিচিহ্ন, কিছুই পাল্টানো যায় না বলে সিদ্ধান্ত হল। তা সত্ত্বেও কথায় পরিবর্তন করে রাজ্য সরকারকে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিলেন কে? কাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল বিচ্যুতি, লেখক আর একটু বলতে পারতেন।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

আরও পড়ুন
Advertisement