West Bengal

রাজ্যের ভূমিকা

উন্নয়নের ফাঁকা আওয়াজ না দিয়ে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সরিয়ে যোগ্যদের চাকরিতে নিয়োগ করা হোক। শিক্ষাই যে জাতির মেরুদণ্ড, এ কথা অজানা নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ ০৫:১৭
protest.

এ রাজ্যে আমরা দেখছি শিক্ষার অঙ্গনে অযোগ্যদের পদচারণা। —ফাইল চিত্র।

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমান পরিস্থিতিকে সঠিক ভাবে উপলব্ধি করেছেন (সবার বেতন সতেরো হাজার, ২৪-৫)। আগেও রাজনীতি ছিল, এখনও আছে। দেশ বা রাজ্যের শাসনক্ষমতা যদি অযোগ্য নেতা-নেত্রীদের হাতে থাকে, তা হলে জনগণকে যে কী বিষময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তা আজ অনেকেই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন। লেখক যথার্থই বলেছেন, “মানুষের উপকার করতে হলে শিল্প আনুন, চাকরির ব্যবস্থা করুন।” এই সঙ্গে বলতে চাই, শিল্প ও চাকরির পাশাপাশি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নও খুব জরুরি। উন্নয়নের ফাঁকা আওয়াজ না দিয়ে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সরিয়ে যোগ্যদের চাকরিতে নিয়োগ করা হোক। শিক্ষাই যে জাতির মেরুদণ্ড, এ কথা অজানা নয়। অথচ, এ রাজ্যে আমরা দেখছি শিক্ষার অঙ্গনে অযোগ্যদের পদচারণা।

কথায় কথায় রাজ্য সরকার বলে থাকে, কেন্দ্র দিচ্ছে না। তা হলে রাজ্য প্রশাসন নিষ্ক্রিয়, নিরুদ্যম হয়ে বসে আছে কেন? লেখকের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলতে হচ্ছে যে, মুড়ি-মিছরিকে এক করে দেখানোর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। এর শেষ কোথায়? রাজনীতি আসলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে বলতে চায় যে, ‘তুমি কিছু না পারলেও আমরা আছি’। খুব ভাল প্রস্তাব। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যেতে পারে, রাজ্যে শিল্প গড়ে তুলুন, কলকারখানা খোলার পদক্ষেপ করুন। তাতে মানুষের ক্ষমতা অনুযায়ী আয়ের পথ সুগম হবে। খেলা, মেলা, উৎসব আর দানসত্রের প্রয়োজন হবে না। অথচ, পরিশ্রমসাধ্য কাজ করার চেয়ে দানসত্রের তাঁবু টাঙিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করার প্রচেষ্টা চলছেই। এই পাইয়ে-দেওয়ার রাজনীতি করতে গিয়ে রাজকোষাগারকে নিঃস্ব করছেন নেতারা। সময় থাকতে নীতি সংশোধন না করলে আগামী দিনে আমাদের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।

Advertisement

মিহিরকুমার ঘোষাল, দালাল পুকুর, হাওড়া

হাস্যকর তুলনা

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধটি পড়ে কিছু বক্তব্য বড্ড বেমানান লাগল। যেমন, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নাকি লাভও বেশি হয়। ধরা যাক, যে বিক্রেতা ৫০ টাকায় আপেল কিনে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন, তিনি মূল্যবৃদ্ধির পর ৫৫ টাকায় কিনে ৬৫ টাকায় বিক্রি করলে লাভ তো সেই ১০ টাকাই রইল। লাভ বাড়ল কোথায়? হ্যাঁ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা ক্রেতাকে বিভিন্ন উপায় ঠকিয়ে লাভের গুড় বাড়ান। কেবল তাঁদের ধরেই কি লাভের অঙ্ক কষা হবে?

আর লেখক কি চাইছেন ব্যবসায়ীদের মতো সরকারি কর্মচারীদের আয় ওঠানামা করুক? সেই নিয়ম সহ্য করতে পারবেন তো? করোনার সময় এবং পরবর্তী কালে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীরও আয় তলানিতে ঠেকেছিল, ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছিল। ‘ডিএ সৈনিক’-দের যদি মাসে মাসে সমহারে বেতন দেওয়ার পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের মতো অবস্থায় পড়তে হত, তা হলে তাঁদের বিক্ষোভ কোথায় পৌঁছত! তুলনামূলক ভাবে অনেক কম পরিশ্রম বা কম সময় ব্যয় করে পুরো চাকরি জীবন ইনক্রিমেন্ট-সহ সমহারে, নিশ্চিত, নির্দিষ্ট আয় ভাল, না কি ব্যবসায়ীদের মতো ওঠা-নামা আয় ভাল— এটা স্কুলের ছাত্ররাও বুঝতে পারে। লেখকের অনুযোগ, কিছু ব্যবসায়ীর আয় নির্দিষ্ট বেতন পাওয়াদের থেকে বেশি হয়। সেটা তো খুবই স্বাভাবিক। এক জন জেলাশাসকের বেতন আর কেরানির বেতন কি এক হয়? যেমন, পাড়ার দোকানদার আর বাজারের বড় দোকানদারের আয় সমান নয়। কিন্তু পাড়ার হোক বা বাজারের বড় দোকানদারই হোক, আয় ঠিক রাখার জন্য পণ্যের মান ঠিক রাখতে হয়, ব্যবহার ঠিক রাখতে হয়। সরকারি কর্মীদের মতো ‘কালকে আসুন’, ‘দেরি হবে’, ‘ছটফট করলে হবে না’— এ সব বললে সেই ব্যবসার যে ক্ষতি হতে বাধ্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

লেখক দুঃখ পেয়েছেন এটা ভেবে যে, সব সরকারি কর্মচারীর বেতন সমান নয়, এবং সেই জন্য তাঁরা খুব কষ্ট করে দিনযাপন করেন। আচ্ছা, আজকের দিনে কোনও সরকারি কর্মচারী যে ন্যূনতম বেতন, সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ উপার্জন কত জন বেসরকারি কর্মচারী করেন? আর করলেও তাঁদের পরিশ্রম, দক্ষতা, সময় কত বেশি দিতে হয়, তা একটু নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করলেই বোঝা যায়।

আরও হাস্যকর ব্যাপার এই যে, আয়কর এবং জিএসটি দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি কর্মচারীরা নাকি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। অদ্ভুত! বেসরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ীর ভূমিকা কোথায় গেল? কোনও নির্দিষ্ট পণ্য, সে বিস্কুটের প্যাকেট হোক বা সোনাদানা, জিএসটি সরকারি কর্মচারী আর ১০০ দিনের শ্রমিকের জন্য আলাদা ধার্য হয় নাকি? পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীর কাছে থেকে কত শতাংশ আয়কর, জিএসটি আদায় হয়, আর অন্য নাগরিকদের কাছ থেকে কত, সেই তথ্যটা লেখক দিলে ভাল করতেন।

এই আন্দোলনে, মিটিং-মিছিলে যে অদম্য প্রাণশক্তি, নাছোড় মনোভাব ব্যক্ত করছেন আন্দোলকারীরা, তার ১০ শতাংশও যদি মাস্টারমশাইরা স্কুলে এবং সরকারি কর্মচারীরা দফতরের কাজে ব্যয় করতেন, তা হলে এই আন্দোলনে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষকে পাশে পেতেন।

আলি হোসেন খান, কলকাতা-১৪৪

অল্পে সন্তুষ্ট

আমি এক জন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিএ নিয়ে প্রবন্ধটির উপর দু’-একটি মন্তব্য করতে চাই। হিসাব কষে দেখেছি— অবসরের পর আমি যা পেনশন পাব, সেটা তারও বারো বছর আগের আমার বেতনের সমান এবং ওই পেনশন দিয়ে তখনও অন্তত তিন-চার জনের স্বাভাবিক জীবনধারণ সম্ভব। এর সঙ্গে অবসরকালীন প্রাপ্য থেকে পাওয়া সুদ যোগ করলে, ডিএ-র খুব একটা প্রয়োজন হবে না। আমার মতে, ডিএ দেওয়া হোক প্রয়োজনভিত্তিক। ডিএ বৃদ্ধির মোট টাকা, ক্রস সাবসিডি ভিত্তিক নতুন কর্মচারী, যাঁদের বেতন অনেক কম থাকে, তাঁদের বেশি দেওয়া হোক। এবং কুড়ি বছরের অধিক সার্ভিস হয়ে গেলে আনুপাতিক হারে তাঁদের কম দেওয়া হোক। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মোটামুটি কুড়ি বছর সার্ভিস হয়ে গেলে বাজারে দামের আগুন বেশির ভাগ কর্মচারীকে আর বিচলিত করে না। বরং, অনেকেই ডিএ-র বাড়তি টাকা শেয়ার মার্কেট, জমি ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের বিলাসী চিন্তায় বেশি মগ্ন থাকেন। যদিও এই মুহূর্তে সাধারণ রাজ্য-সরকারি কর্মচারীরা এই বিলাসিতা আর করছেন না। তা হলে কি একটা সময়ে ডিএ দেওয়ার উদ্দেশ্য পাল্টে গিয়ে সম্পদ সৃষ্টিতে কাজে লাগছে? রাজ্য-কেন্দ্র সকল কর্মচারীরই ডিএ নিশ্চয়ই ন্যায্য পাওনা, কিন্তু এই পর্যবেক্ষণটাও ভেবে দেখা দরকার।

কঠোর পরিশ্রম করে যাঁরা ডিএ-র অধিকার অর্জন করেছেন, তাঁদের হয়ে ন্যায্য সওয়াল করতে গিয়েও লেখক সাবধানি হয়ে বলেছেন, ‘যাঁরা সৎ পথে চাকরি পেয়েছেন’ তাঁদের কথা। কিন্তু যাঁরা আবহমান কাল ধরে কঠোর উমেদারি করে চাকরি বাগিয়ে এসেছেন, যার সংখ্যা নেহাত কম নয়, তাঁদের কাজের জায়গায় এসে বৈভবের আস্ফালন নতুন চাকরি পাওয়া একই ক্যাডারের কম বেতনের কর্মচারীদের কাছে বিসদৃশ লাগবেই। এক জায়গায় লেখক খোঁচা দিয়ে লিখেছেন, “অল্পে সন্তুষ্ট হওয়াটা যে একটা ‘মহান’ ব্যাপার, তা আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম শেখানো হয়েছে।” এর দ্বারা ভোগবাদী সমাজের দিকে যে চিন্তাশূন্য হুজুগে জনগণ ছুটে চলেছে, তাতে তিনি ইন্ধন দিলেন না কি? যোগ্যতা অনুসারে সোজা পথের রোজগারেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। সেখানে ‘অল্প’-এর মাত্রা খুঁজতে গেলে কদর্যতার বাঁকা পথে সমাজটা যেন হারিয়ে না যায়।

নীলকমল বন্দ্যোপাধ্যায়, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান

আরও পড়ুন
Advertisement